
বাংলাদেশের আধুনিক ইতিহাসে ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাস চিহ্নিত হয়ে থাকবে একটি বেদনাবিধুর ও রক্তাক্ত অধ্যায় হিসেবে। এই সময়ের গণজাগরণ ছিল নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, স্বৈরাচারবিরোধী প্রতিরোধ যার জন্য জাতিকে দিতে হয়েছে চরম মূল্য। এ মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
এক ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, “দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে দেশের ওপর একটি দমনমূলক শাসন ব্যবস্থা চেপে বসেছিল। এই সময়টিতে রাজনৈতিক কর্মী, ছাত্র, কৃষক, গার্মেন্টস শ্রমিক, নারী ও শিশুসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষ নিখোঁজ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের শিকার হন। একটি রাষ্ট্রীয় যন্ত্র যখন নিজের নাগরিকদের বিপরীতে দাঁড়ায়, তখন যে বিভীষিকা নেমে আসে, বাংলাদেশ তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে।”
তারেক রহমান আরও উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের ওই অভ্যুত্থানে প্রাণ হারান অন্তত ১,৫০০ জন, যাদের মধ্যে বিএনপি সংশ্লিষ্ট ছিলেন কমপক্ষে ৪২২ জন। আহত হন ৩০ হাজারের বেশি মানুষ, যাদের অনেকেই আজীবন শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
তিনি বলেন, “সবচেয়ে মর্মান্তিক ছিল শিশুদের ওপর হামলা। মাত্র ৩৬ দিনে অন্তত ১৩৬ শিশু প্রাণ হারায়। চার বছরের আব্দুল আহাদ এবং ছয় বছরের রীতা গোপের মতো নিষ্পাপ প্রাণও এই সহিংসতার শিকার হয়। এমন নিষ্ঠুরতা সভ্য সমাজে অকল্পনীয়।”
তারেক রহমান বলেন, এই আন্দোলন ছিল কেবল একটি সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নয়। এটি ছিল ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ৭ নভেম্বর ১৯৭৫-এর আধিপত্যবিরোধী বিপ্লব এবং ১৯৯০ সালের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আরও একটি মুক্তির অধ্যায়। এই লড়াইয়ে জীবন দিয়েছেন শহীদ আবু সাঈদ, মুগ্ধা, ওয়াসিমসহ আরও অগণিত সাহসী মানুষ।
তিনি জানান, “আজ জাতির সামনে এসেছে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ একটি আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র নির্মাণের সুযোগ। বিশ্ব যখন প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও দ্রুত পরিবর্তনশীল হয়ে উঠছে, তখন বাংলাদেশকে পিছনে ফেরা নয়, সামনে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই পথ হবে আত্মত্যাগ ও স্মৃতির ওপর দাঁড়িয়ে নতুন এক রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতীক।”
তারেক রহমান বলেন, এখন সময় এসেছে শহীদদের ঋণ শোধ করার। একটি মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমেই সেই ঋণ পরিশোধ সম্ভব। সেই রাষ্ট্রে সরকার গঠিত হবে জনগণের ভোটে, এবং শাসক হবেন জনগণের কাছে জবাবদিহি।
তারেক রহমানের এই বার্তায় স্পষ্ট, অতীতের আত্মত্যাগকে পাথেয় করে ভবিষ্যতের বাংলাদেশকে গড়া সময়ের দাবি। “শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না” এই বাক্য যেন প্রতিটি নাগরিকের চেতনাকে স্পর্শ করে। এখন দায়িত্ব জনগণের, একটি ন্যায়ের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য সাহসের সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার।
আফরোজা