
ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে মঙ্গলবার কলম্বোয় ট্রফি নিয়ে ফটোসেশন করেন দুই অধিনায়ক বাংলাদেশের মেহেদি হাসান মিরাজ ও শ্রীলঙ্কার চারিথ আসালাঙ্কা
১৯৮৬ থেকে ৫৭ ওয়ানডের মাত্র ১২টিতে জিততে পেরেছে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার জয় ৪৩ ম্যাচে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে এখন পর্যন্ত কোনো দিপক্ষীয় ওয়ানডে সিরিজ, টুর্নামেন্ট কিংবা ত্রিদেশীয় সিরিজেও সাফল্য নেই। অবশ্য বিভিন্ন সময়ে শ্রীলঙ্কায় ম্যাচ জয়ের স্মৃতি আছে টাইগারদের। যার সর্বশেষটি ২০১৭ সালে, ডাম্বুলায়, মাশরাফি বিন মর্তুজার নেতৃত্বে। হতাশার এই পরিসংখ্যানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে টি২০ সিরিজ হারের লজ্জা এবং পাকিস্তানে ভরাডুবি যোগ করুন, সঙ্গে কলম্বো টেস্টের ইনিংস হার- এই চিত্র দেখে যারা হতাশ হচ্ছেন তাদের জন্য তথ্য, ওয়ানডেতে দুই দলের শেষ পাঁচ দেখায় তিন জয় টাইগারদের। যদিও তার দুটিই ঘরের মাঠ।
সবচেয়ে বড় প্রেরণা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় নাম, মাঠের ক্রিকেটে নির্ভরতার প্রতীক, সময়ের অন্যতমসেরা অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজের অধিনায়ক হিসেবে মিশন শুরু হচ্ছে এই সিরিজ দিয়ে। তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম, জাকের আলী অনিকরা নিশ্চই উপলক্ষটা স্মরণীয় করে রাখতে চাইবেন।
কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে খেলা শুরু বিকেল তিনটায়। একই ভেন্যুতে দ্বিতীয় ম্যাচ শনিবার। ৮ জুলাইয়ে শেষ ওয়ানডে পাল্লেকেলেতে। তিনটি ম্যাচই ডে-নাইট। গত বছর মার্চে সর্বশেষ নিজেদের মাঠে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল টাইগাররা। এরপর আফগানিস্তানের কাছে ২-১ ব্যবধানে হারের পর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মিরাজের অধীনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। কলম্বোতে টানা তিনদিন অনুশীলন করেছে টাইগাররা। কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন মিরাজ। সতীর্থদের নানা মন্ত্রে উজ্জীবিত করার সব চেষ্টাই করেছেন তুখোড় এ অলরাউন্ডার।
অধিনায়ক হিসেবে তিনি চেষ্টা করছেন ওয়ানডেতে ‘নতুন’ এক বাংলাদেশকে উপস্থাপন করতে। বয়সভিত্তিক দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে মিরাজের। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই কিনা নেতৃত্বের দায়িত্বটা ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছেন তিনি। শ্রীলঙ্কা যাওয়ার আগেই বলেছিলেন,‘হঠাৎ আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চেষ্টা করব বাংলাদেশের জন্য ভালো কিছু অর্জন করতে। আশা করি, আমরা ভালো একটা অবস্থান তৈরি করতে পারব (ওয়ানডেতে)।’ আশাবাদ ব্যক্ত করার পর শুনিয়েছেন বিভিন্ন অধিনায়কের নেতৃত্বে খেলে শেখার কথা। মাশরাফি বিন মর্তুজার কাছ থেকে ‘ম্যান ম্যানেজমেন্ট’, সাকিব আল হাসানের কাছ থেকে ‘ত্বরিত সিদ্ধান্ত নেওয়া’র ব্যাপার আর তামিম ইকবালের নেতৃত্বে শিখেছেন দলীয় ক্রিকেটারদের ওপর কীভাবে বিশ্বাস রাখতে হয়।
দলের সবাই যখন নিজ নিজ জায়গা থেকে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে, তখনই ভালো করে দল। দল যখন একটা ইউনিট হয়ে খেলে, তখন দলের নেতৃত্বে কে, সেটা বড় কোনো বিষয় নয়Ñনেতৃত্ব নিয়ে এমনই দর্শন মিরাজের। তবে এমন সময়ে নেতৃত্বের বোঝা কাঁধে তুলে নিয়েছেন, যখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের পাঁচ সিনিয়রের একজনও নেই। তামিম ও মাহমুদউল্লাহ ঘোষণা দিয়েই বিদায় নিয়েছেন। মাশরাফি তো আরও আগে থেকেই নেই।
সাকিবও দীর্ঘদিন দলের বাইরে, আবার যে কখনো ফিরবেন, সেই সম্ভাবনাও ক্ষীণ। এই চারজনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অধ্যায় শেষ বললেও ভুল হবে না। বাকি ছিলেন শুধু মুশফিক। তিনিও টি২০ এবং ওয়ানডে ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিয়েছেন। খেলছেন শুধু টেস্ট সংস্করণে। পঞ্চপা-বের দুজন মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক সর্বশেষ খেলেছিলেন আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। ১৮ বছর পর এই তারকাদের ছাড়াই প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ খেলতে নামছে বাংলাদেশ দল। তাদের ছাড়াই মাঝেমধ্যে ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। তবে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের পর এটাই প্রথম সিরিজ।
পাঁচ সিনিয়র দৃশ্যপট থেকে চলে যাওয়ার পর নতুন অধ্যায়ের শুরু। সেটিও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, যাদের বিপক্ষে কত স্মৃতি। বিশ্বকাপে ম্যাথুসের সেই ‘টাইমড আউট’, নিদাহাস ট্রফিতে থিসারা পেরেরাদের সঙ্গে তর্ক লেগে যাওয়া মাহমুদউল্লাহ কিংবা মুশফিকের ‘নাগিন নাচ’Ñদুই যোগ করে বাড়তি মাত্রা!
শ্রীলঙ্কার মাটিতে বাংলাদেশের ওয়ানডে রেকর্ডও হতাশাজনক। ২৪ ম্যাচ খেলে মাত্র ২টিতে জয়, ২০টিতে হার ও ২টি পরিত্যক্ত হয়েছে। ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার মাটিতে সর্বশেষ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর ২০২৩ সালে এশিয়া কাপ খেলতে আবারও শ্রীলঙ্কা সফর করে টাইগাররা। দ্বীপ দেশটিতে দুই ম্যাচ খেলে দু’টিতেই হেরেছে তারা। শ্রীলঙ্কার মাটিতে সর্বশেষ ছয় ম্যাচের একটিতেও জয় নেই বাংলাদেশের!