ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

অর্থবছরের প্রথমদিন থেকে কার্যকর

সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার কমলো

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২৬, ২ জুলাই ২০২৫

সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার কমলো

সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার কমানো হয়েছে

আগামী ছয় মাসের জন্য সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার কমানো হয়েছে। নতুন অর্থবছরের প্রথমদিন ১ জুলাই থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে। মুনাফার হার কমানো পাঁচ স্কিমের মধ্যে রয়েছে-পরিবার সঞ্চয়পত্র, ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র এবং পোস্ট অফিস ফিক্সড ডিপোজিট বা ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক মেয়াদি হিসাব। এর আগে সোমবার এ-সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ।

নতুন হার অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ সুদহার হবে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং সর্বনি¤œ সুদহার হবে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। কম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদহার তুলনামূলকভাবে বেশি। বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদহার কম। এ ক্ষেত্রে সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ পরিমাণ বা এর কম হলে সুদহার বেশি হবে। ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদহার কমে আসবে। আয় ও ঋণ ব্যবস্থাপনার অংশ হিসেবে সরকার নিয়মিতভাবে সঞ্চয়পত্রের সুদহার নির্ধারণ করে থাকে।

এদিকে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নতুন ব্যবস্থায় সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ মুনাফার হার হবে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং সর্বনি¤œ হার নির্ধারিত হয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। নতুন নিয়মে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার কম বিনিয়োগে তুলনামূলক বেশি মুনাফা পাওয়া যাবে, আর এর বেশি বিনিয়োগ করলে মুনাফার হার কিছুটা কম হবে। পরিবার সঞ্চয়পত্রে আগে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে পাঁচ বছর মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ছিল ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ, যা এখন কমে ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ হয়েছে। একইভাবে সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে মুনাফার হার ছিল ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ, যা এখন ১১ দশমিক ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সাড়ে ৭ লাখ টাকার নিচে বিনিয়োগে মুনাফার হার ছিল ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ, নতুন হারে তা কমে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ হয়েছে। একইভাবে সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগে এই হার ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ থেকে কমে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।  পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রেও মুনাফার হার কমেছে। এখানে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগে আগে মুনাফা পাওয়া যেত ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ, যা এখন কমে ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ হয়েছে।

বিনিয়োগ সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি হলে সেক্ষেত্রে মুনাফার হার ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ থেকে কমে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ হবে। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রেও মুনাফা কমানো হয়েছে। সাড়ে ৭ লাখ টাকার নিচে বিনিয়োগে যেখানে আগে মুনাফা ছিল ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ, তা এখন কমে হয়েছে ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি হলে এ হার ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে কমে ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ করা হয়েছে। একইভাবে কমেছে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকে মেয়াদি হিসাবের মুনাফাও।

তিন বছর মেয়াদ শেষে সাড়ে ৭ লাখ টাকার কম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আগে মুনাফা পাওয়া যেত ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ, যা এখন কমে ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ হয়েছে। সাড়ে ৭ লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এই হার ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে কমে ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশে নেমেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঞ্চয়পত্রের মুনাফা কমে যাওয়ায় চাপে পড়তে পারেন মধ্যবিত্ত ও পেনশনাররা। কারণ তাদের আয়ের একটি বড় অংশ আসে সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ থেকে। নিরাপদ বিনিয়োগ ভেবে চাকরিজীবন শেষে পেনশনের টাকা দিয়ে তারা সাধারণ সঞ্চয়পত্র কিনে থাকেন। এছাড়া মধ্যবিত্তরাও নিরাপদ বিনিয়োগের মাধ্যম হিসেবে সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগকে আকর্ষণীয় মনে করে।

উল্লেখ্য, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। সেই সঙ্গে এখন সঞ্চয়পত্রের সুদহারও কমানো হলো। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির কারণে দুই বছরের বেশি সময় ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজমান। ফলে সামগ্রিকভাবে নতুন অর্থবছরের শুরু থেকে মধ্যবিত্তের ওপর চাপ আরও বাড়বে জানান বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে যাদের পারিবারিক খরচের বড় একটি অংশ সঞ্চয়পত্রের মুনাফা থেকে আসে, তারা আরও চাপে পড়বেন।

×