ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক চুক্তির সম্ভাবনা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:২৮, ২ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক চুক্তির সম্ভাবনা

দ্বি-পক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক চুক্তি

দ্বি-পক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শুল্ক চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চুক্তির খসড়াও তৈরি হয়েছে, যা নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে আগামী ৩ ও ৪ জুলাই। চুক্তি হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপ করা বাড়তি ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের হার কিছুটা কমবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন ওয়াশিংটন যাবেন। একই বিষয়ে ২৬ জুন যুক্তরাষ্ট্র সফররত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান ইউএসটিআরের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন। ইউএসটিআরের সঙ্গে আগামী বৈঠকেও খলিলুর রহমান উপস্থিত থাকবেন। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শুল্ক চুক্তি করার দ্বারপ্রান্তে আছি ঠিক, তবে এটা শর্ত সাপেক্ষে।

যদি মনে করি যে বাংলাদেশের অর্থনীতির সক্ষমতা বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া শর্তগুলো মানা সম্ভব, তাহলেই চুক্তি হবে। বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, কিছু তথ্য পাওয়া বাকি আছে। শর্তসহ পুরো প্রক্রিয়াটা উপদেষ্টা পরিষদকে জানাব। ৩ জুলাইয়ের আগে না গিয়ে পরেও যেতে পারি। নিরাপত্তা উপদেষ্টা তো যুক্তরাষ্ট্রে আছেনই। 
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করে আসছে গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক দিয়ে। গত ৩ এপ্রিল হঠাৎ ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশি পণ্যের ওপর বাড়তি ৩৭ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। শুল্কের হার কম-বেশি করে দেশটি একই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয় ৬০টি দেশের ওপর। বাড়তি শুল্ক আরোপ কার্যকরের কথা ছিল ৯ এপ্রিল। তবে ওই দিনই যুক্তরাষ্ট্র বাড়তি শুল্ক হারের ঘোষণা তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখে। স্থগিতের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ৯ জুলাই। বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা আশাবাদী যে স্থগিতের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে দিতে পারেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। 
এদিকে, তিন মাসের জন্য সিদ্ধান্ত স্থগিত চেয়ে গত ৭ এপ্রিল ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছিলেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান রপ্তানি পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক কমানো নিয়ে বাংলাদেশ কাজ করছে বলে জানানো হয়। ইউএসটিআরের রাষ্ট্রদূত জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে একই দিন আলাদা চিঠি পাঠিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিতে যদি কোনো বাধা থাকে, তা দূর করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত এবং বাংলাদেশ সব সময় গঠনমূলক সংলাপ ও সহযোগিতায় বিশ্বাসী।

উভয় দেশের মধ্যে এরপর দুই মাসে কয়েক দফা সরাসরি বৈঠক হয়েছে। হয়েছে চিঠি-চালাচালি এবং অনলাইন বৈঠক। ইউএসটিআরের সঙ্গে এর আগে গত ২১ এপ্রিলও ওয়াশিংটনে একটি বৈঠক হয় বাংলাদেশের। এতে তারা ছয়টি বিষয়ে জানতে চায়। ৪ জুন চিঠি দিয়ে ব্যাখ্যা জানানো হয়। শুল্ক চুক্তির খসড়াটি করা হয় ১২ জুন, যার ৫ দিনের মাথায় ১৭ জুন এর ওপর করা হয় অনলাইন বৈঠক। এ বৈঠকের ধারাবাহিকতায় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ২৬ জুন ওয়াশিংটনে বৈঠক করেন। 
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, যুক্তরাষ্ট্র এমন কিছু বিষয় চেয়েছে, যা তাদের দেশের আইনে প্রযোজ্য। বাংলাদেশের আইনে প্রযোজ্য নয়, এমন বিষয়ে একমত না হতেই দর-কষাকষি করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানতে পেরেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর পাশাপাশি ভারত, ভিয়েতনাম, জাপান ইত্যাদি দেশ পাল্টা শুল্কের হার কমানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বি-পক্ষীয় আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

×