
ছবিঃ সংগৃহীত
হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে গেলে অনেকেই ভাবেন কড়াকড়ি ডায়েট, ঘাম ঝরানো ব্যায়াম বা কঠিন রুটিনই একমাত্র উপায়। তবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রাথমিক চিকিৎসক ও অনলাইনে পরিচিত “দ্য ফিটেস্ট ডাক” নামে খ্যাত ডা. নিকোলাস এনওয়াবুয়েজ বলছেন ভিন্ন কথা।
তিনি জানিয়েছেন, প্রতিদিন মাত্র ৫ মিনিট সময় দিলেই হৃদয়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব। এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো শুধু হার্ট ভালো রাখে না, বরং বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ জীবন বাঁচাতেও পারে।
চলুন জেনে নিই সেই ৫টি সহজ ও কার্যকর অভ্যাস—
১. প্রতিটি খাবারের পর কয়েক মিনিট হাঁটুন
খাওয়ার পর স্থির বসে থাকলে হজমে কিছুটা সহায়তা হয় ঠিকই, কিন্তু বেশি সময় বসে থাকলে রক্তে গ্লুকোজ হঠাৎ বেড়ে যায়, বিশেষ করে কার্বোহাইড্রেটজাতীয় খাবারের পর।
ডা. এনওয়াবুয়েজের পরামর্শ, প্রতিবার খাওয়ার পর ৫ থেকে ১০ মিনিট হালকা হাঁটা অভ্যাস করুন। এতে শুধু হজমই ভালো হবে না, গ্লুকোজ স্পাইক ও প্রদাহ কমে আসবে, যা হৃদরোগের নীরব কারণ।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিবার খাওয়ার পর মাত্র ২ থেকে ৫ মিনিট হেঁটে নিলেও রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা দীর্ঘমেয়াদে হৃদয়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
২. সকালে রোদ লাগান ত্বকে
সকালের সূর্যের আলো শুধু ভিটামিন ডি-এর উৎস নয়, এটি আমাদের বডি ক্লক বা সার্কাডিয়ান রিদম নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ডা. এনওয়াবুয়েজ বলেন, ঘুম থেকে উঠে প্রথম ঘণ্টার মধ্যে যদি আপনি সূর্যের আলো পান, তাহলে ঘুমের সময়সূচি ঠিক থাকে, রাতের ঘুম গভীর ও আরামদায়ক হয়।
ঘুমের অনিয়ম, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম ও রাতে কাজের অভ্যাস উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, সার্কাডিয়ান রিদমের গোলমাল সরাসরি কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
৩. প্লাস্টিক নয়, খাবারের জন্য ব্যবহার করুন কাচ বা স্টিল
আমরা অনেকেই খাবার গরম বা সংরক্ষণের জন্য প্লাস্টিক ব্যবহার করি। কিন্তু অনেক ধরনের প্লাস্টিক, বিশেষ করে গরম করলে, BPA ও ফথালেটস নামক হরমোন বিভ্রান্তকারী রাসায়নিক ছাড়ে।
এইসব রাসায়নিক হৃদরোগ ও বিপাকজনিত সমস্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। এমনকি যেসব প্লাস্টিক পাত্রে ‘মাইক্রোওয়েভ সেফ’ লেখা থাকে, সেগুলোর ক্ষেত্রেও রাসায়নিক লিচিং হয়।
এন্ডোক্রিন সোসাইটি জানিয়েছে, BPA শরীরে প্রবেশ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রক্তচাপ বাড়াতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এটি রক্তনালী শক্ত হয়ে যাওয়া ও অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি করে— যা হৃদরোগের নীরব কারণ।
৪. অনুপ্রেরণার পেছনে না ছুটে ছোট অভ্যাস গড়ুন
ডা. এনওয়াবুয়েজ বলেন, হৃদরোগ ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে— একেবারে নিঃশব্দে। তাই তার প্রতিকারে ছোট কিন্তু ধারাবাহিক অভ্যাসই সবচেয়ে কার্যকর।
যেমন—
-
ফোনে কথা বলার সময় দাঁড়িয়ে থাকা
-
রোববারে সাপ্তাহিক খাবার প্রস্তুত করা
-
লিফট বাদ দিয়ে সিঁড়ি ব্যবহার করা
-
কোনো বড় সিদ্ধান্ত নয়, ছোট সিদ্ধান্তে সুস্থতা গড়ে তুলুন
এই ছোট ছোট অভ্যাসই একসময় হয়ে উঠবে প্রাণ রক্ষাকারী অভ্যাস।
৫. কম বসুন, বারবার অল্প নড়াচড়া করুন
অনেকে ভাবেন দিনের বেলা অনেকক্ষণ বসে থাকলেও যদি সন্ধ্যায় ব্যায়াম করেন, তবে সমস্যা নেই। কিন্তু গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা—
দিনে ১০ ঘণ্টার বেশি বসে থাকা মানুষের হৃদরোগের ঝুঁকি ৩৪% বেশি, এমনকি যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের ক্ষেত্রেও।
ডা. এনওয়াবুয়েজ বলেন, প্রতি ৩০ মিনিটে অন্তত ২-৩ মিনিট হালকা নড়াচড়া করুন। যেমন পানি খেতে ওঠা, স্ট্রেচিং করা বা ঘরের ভেতর একটু হেঁটে নেওয়া। এতে রক্ত চলাচল সচল থাকে, ইনসুলিন প্রতিরোধ কমে, হৃদয়ের ওপর চাপ কমে।
শেষ কথা
হৃদরোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন নেই ঘাম ঝরানো ব্যায়াম বা কঠিন রুটিনের। প্রতিদিন মাত্র ৫ মিনিটেই আপনি দিতে পারেন আপনার হৃদয়কে সুরক্ষার নিশ্চয়তা।
আজ থেকেই শুরু হোক সেই সচেতনতা।
ইমরান