ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

বুকের ব্যথা: গ্যাস না হার্ট অ্যাটাক? চিনুন ৩টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণে

প্রকাশিত: ১৪:৫৯, ১ জুলাই ২০২৫

বুকের ব্যথা: গ্যাস না হার্ট অ্যাটাক? চিনুন ৩টি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণে

বড় কোনো খাবার খাওয়ার পর কিংবা একেবারে স্ট্রেসের দিনে হঠাৎ বুকের মাঝে একটা অস্বস্তি বা চাপ অনুভব করলেন? সঙ্গে সঙ্গেই মাথায় ভেসে আসে ভয়ানক এক প্রশ্ন, “এটা কি শুধু গ্যাস, নাকি হার্ট অ্যাটাক?”

বুকের ব্যথা এমন একটি উপসর্গ, যার কারণ খুঁজে বের করা সবসময় সহজ নয়। কারণ আমাদের বুকের ভেতরে একসঙ্গে থাকে হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, খাদ্যনালী, পাকস্থলী এবং অসংখ্য নার্ভ। তাই গ্যাস হোক বা হৃদযন্ত্রের সমস্যা, উভয় ক্ষেত্রেই উপসর্গ প্রায় একই রকম মনে হতে পারে।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু পার্থক্য খেয়াল রাখলেই আপনি নিজেই প্রাথমিকভাবে বুঝতে পারবেন বিষয়টি কতটা গুরুতর।

 লক্ষণ ১: ব্যথা ঠিক কোথায়?

🔹 গ্যাসের ব্যথা:
সাধারণত পেটের ওপরের দিকে বা উপরের পেটজুড়ে থাকে। এটি এক জায়গায় স্থির না থেকে এদিক-ওদিক সরে যায়। হেঁটে হাঁটলে বা বাতাস বের হলে (burping/farting) আরাম লাগতে পারে।

🔹 হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা:
প্রধানত বুকে মাঝ বরাবর বা বাম পাশে চাপ বা ভারী অনুভূতি হয়। মনে হয় কেউ যেন বুকে বসে আছে। ব্যথা ছড়িয়ে পড়তে পারে বাঁ হাত, গলা, চোয়াল বা পিঠে। চলাফেরা বা ঢেঁকুরে আরাম আসে না।

লক্ষণ ২: ব্যথার ধরন কেমন?

🔹 গ্যাসের ব্যথা:
কখনও তীক্ষ্ণ, কখনও কুঁচকানো ধরনের, মাঝেমধ্যে আসে-যায়। খাবার খাওয়ার পর বা তাড়াহুড়া করে খাওয়ার পর এমন হতে পারে।

🔹 হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা:
চেপে ধরা, জ্বালাপোড়া, ঠাস করে থাকা বা ভারী মনে হয়। অনেক সময় শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, কথা বলতে কষ্ট হয় বা একধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়। এটি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।

 লক্ষণ ৩: অন্য কোন উপসর্গ আছে কি?

🔹 গ্যাস হলে:

  • ঢেঁকুর ওঠা বা বাতাস ত্যাগ

  • পেট ফাঁপা

  • নড়াচড়া করলে আরাম পাওয়া

🔹 হার্ট অ্যাটাক হলে:

  • ঠাণ্ডা ঘাম

  • শ্বাসকষ্ট

  • মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ভাব

  • বমি ভাব বা বমি (বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে)

  • একধরনের “ভয়ানক কিছু হতে যাচ্ছে” এমন অনুভূতি

হার্টবার্ন নাকি হার্ট অ্যাটাক—কীভাবে বুঝবেন?

হ্যাঁ, হার্টবার্ন বা এসিডিটি অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের মতো মনে হয়। কিন্তু:
🔸 হার্টবার্ন সাধারণত খাবারের পরে হয়, শুয়ে পড়লে বাড়ে এবং অ্যান্টাসিড খেলে কমে যায়।
🔸 হার্ট অ্যাটাকের ব্যথা অ্যান্টাসিডে কমে না, দেহের ভঙ্গিমার ওপর নির্ভর করে না এবং দীর্ঘস্থায়ী হয়।

নারীদের জন্য বিশেষ সতর্কতা:

নারীদের ক্ষেত্রে হৃদরোগের উপসর্গ সবসময় প্রচলিত chest pain নাও হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায় 

  • প্রচণ্ড ক্লান্তি

  • বমি বা বমির ভাব

  • গলা, চোয়াল বা পিঠে ব্যথা

  • দুশ্চিন্তা বা অস্বস্তি অনুভব

এই উপসর্গগুলো হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ হয়েও থাকতে পারে।

কখন ডাক্তার বা অ্যাম্বুলেন্স ডাকবেন?

  • ব্যথা ৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হলে
  • বিশ্রামে বা অ্যান্টাসিডে আরাম না পেলে
  • শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, ঠাণ্ডা ঘাম বা দুর্বলতা অনুভব করলে
  • আপনার আগে থেকেই হার্ট, ডায়াবেটিস বা ব্লাড প্রেশারের সমস্যা থাকলে

বুকের অস্বস্তি হালকাভাবে নেওয়ার কিছু নয়। কখনো কখনো গ্যাসের মতো মনে হওয়া ব্যথাও হতে পারে হার্ট অ্যাটাকের সতর্ক সংকেত। তাই সন্দেহ হলে অপেক্ষা নয়, দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নিন।

মিমিয়া

×