ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০২ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিং

ময়মনসিংহের সাবেক ওসি ও তার ৩ পুত্রের বিরুদ্ধে আদালতে দুদকের অভিযোগপত্র দায়ের

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ।

প্রকাশিত: ২০:৩৮, ১ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২০:৩৯, ১ জুলাই ২০২৫

ময়মনসিংহের সাবেক ওসি ও তার ৩ পুত্রের বিরুদ্ধে আদালতে দুদকের অভিযোগপত্র দায়ের

জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিং এর অভিযোগে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার সাবেক ওসি গোলাম সরওয়ার ও তাঁর ৩ পুত্রের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)। দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক তালেবুর রহমান ময়মনসিংহের স্পেশাল জজ আদালতে গত বৃহস্পতিবার এই অভিযোগপত্র দাখিল করার পর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট সঞ্জীব সরকার সঞ্জু মঙ্গলবার স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এই তথ্য জানান। দুদকের প্রধান কার্যালয় গত ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের মঞ্জুরি অনুমোদন দিয়েছিল।

দুদক ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, অভিযোগের তদন্ত, অনুসন্ধান, যাচাই ও প্রমাণের পর দুদক মঞ্জুরির অনুমোদনের ছয় মাসের মাথায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। একই সঙ্গে ওসি গোলাম সরওয়ার ও তার ৩ পুত্রকে পলাতক উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রার্থনা করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তালেবুর রহমান।

স্থানীয় সূত্র জানায়, দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের দায়ের করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দীর্ঘ এক বছর পর ময়মনসিংহের কোতোয়ালি মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরওয়ার ও তাঁর ৩ পুত্রের বিরুদ্ধে গত ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে চার্জশিটের মঞ্জুরি আদেশ অনুমোদন দেয় দুদক। 
ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও মানি লন্ডারিংয়ের অপরাধ সংক্রান্ত অভিযোগের দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে দুদকের বিভাগীয় কার্যালয় ময়মনসিংহের সাবেক উপপরিচালক তালেবুর রহমান মামলাসমূহের তদন্ত প্রতিবেদন মঞ্জুরির আদেশের জন্য গত ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ঢাকায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছিলেন।

মঞ্জুরি অনুমোদনের ছয় মাসের মাথায় তদন্তকারী কর্মকর্তা ময়মনসিংহের আদালতে ওসি গোলাম সরওয়ার ও তার ৩ পুত্রকে পলাতক দেখিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ২০২২ সালের মে মাসে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরওয়ার এবং তাঁর তিন পুত্র এনামুল হক মাসুম, নাজমুল হক মারুফ ও মঞ্জুরুল হক মামুনের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহের স্পেশাল জজ আদালতে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক)। দুদকের সমন্বিত ময়মনসিংহ জেলা কার্যালয়ের সাবেক উপপরিচালক রাম প্রসাদ মণ্ডল বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।

মামলায় গোলাম সরওয়ার ও তার ৩ পুত্রের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়। প্রাথমিক তদন্তে ৩ কোটি ৪৫ হাজার ৩৫৪ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনসহ মানি লন্ডারিংয়ের প্রমাণ পায় দুদক।

এর মধ্যে গোলাম সরওয়ারের ১ কোটি ৮৪ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩ টাকা, পুত্র এনামুল হকের ৫৫ লাখ ৮৬ হাজার ৪৬৭ টাকা, নাজমুল হক মারুফের ৩০ লাখ ৫৬ হাজার ৯২৮ টাকা ও মঞ্জুরুল হক মামুনের নামে ২৯ লাখ ২ হাজার ৯২৬ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের সন্ধান মেলে দুদকের অনুসন্ধানে। অনুসন্ধানে দেখা যায় পুত্র এনামুল, নাজমুল ও মঞ্জুরুল অপ্রাপ্ত বয়স ও বেকার অবস্থায় এই সম্পদের মালিক হন।

গত ২০২২ সালের ১৫ জুন ময়মনসিংহের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক হেলাল উদ্দিনের আদালতে গোলাম সরওয়ার আত্মসমর্পণ করতে গেলে বিজ্ঞ বিচারক তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। পরে গোলাম সরওয়ার ও তার ৩ পুত্রকে জামিন দেন আদালত।

পুলিশের কনস্টেবল থেকে পদোন্নতি পাওয়া ওসি গোলাম সরওয়ার ময়মনসিংহ কোতোয়ালি ও ভালুকা মডেল থানায় আওয়ামী লীগ সরকার মেয়াদে কর্তব্যরত অবস্থায় সম্পদের এই পাহাড় গড়ে তোলেন। ওসি গোলাম সরওয়ার ও তিন পুত্রের জ্ঞাত আয় বহির্ভূত এই সম্পদ সরকারের জব্দ করার দাবি উঠেছে।

সাবেক পুলিশ পরিদর্শক গোলাম সরওয়ার রাজধানী ঢাকার আদাবরের শ্যামলী হাউজিং-এর ছয় নম্বর সড়কে বি-৪৮ হোল্ডিংয়ে আটতলা বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। স্থানীয়রা পুলিশ কর্মকর্তার এই বাড়ি নির্মাণ নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলেছেন। ময়মনসিংহে কর্মরত অবস্থায় গোলাম সরওয়ার এই বাড়িটি নির্মাণ করেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

ঢাকার আদাবরের মতো এলাকায় জায়গা কিনে আটতলার বাড়ি করতে ২০–৩০ কোটি টাকা কীভাবে পেলেন ওসি গোলাম সরওয়ার সেটিই এখন বড় রহস্য। ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহ নগরীর চরপাড়া নয়াপাড়া এলাকার ১০ তলা সৌহার্দ্য টাওয়ারে নিজ ও ৩ পুত্রের নামে ১২টি ফ্ল্যাট কিনেছেন।

ময়মনসিংহ নগরীর কৃষ্টপুর দৌলতমুন্সি রোডে ৪ শতাংশ জমিতে বাড়ি, বলাশপুর এলাকায় ১৫ শতাংশ জমি, শিকারীকান্দা এলাকায় ২০ শতাংশ জমি এবং টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার অফিসের পাশে ২০ শতাংশ জমিতে বাড়ি নির্মাণ করেছেন গোলাম সরওয়ার। নিজ গ্রামেও প্রচুর জমি কিনেছেন বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী।

এসব সম্পদের মূল্য অর্ধশত কোটি টাকা বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। এসবের বাইরে স্ত্রী, সন্তানসহ নামে–বেনামে আরও অগাধ সম্পদ রয়েছে সাবেক পুলিশ পরিদর্শক গোলাম সরওয়ারের। পুলিশের এই কর্মকর্তা গত ২০১৫–২০১৬ সালে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) হিসেবে অবসরে যান।

আফরোজা

×