ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ সিপিডির

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ৩০ জুন ২০২৫

নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর তাগিদ সিপিডির

.

২০৪১ সালের মধ্যে দেশে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার অন্তত ৩০ ভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যে বিদেশি বিনিয়োগ বিশেষ করে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য সরকারের প্রতি পরামর্শ দিয়েছেন গবেষক ও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। এজন্য তারা বিগত সরকারের আমলে নেওয়া ৩৭টি প্রকল্প ঢালাওভাবে বাতিল না করে পুনর্মূল্যায়ন ও ত্রুটি দূর করা এবং বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা নিরসনে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
সোমবার রাজধানীর গুলশানে একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে চীনের বিদেশি বিনিয়োগের সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ: অগ্রগতির পথ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেন আলোচকরা। সিপিডি ও বাংলাদেশ-চীন নবায়নযোগ্য শক্তি ফোরাম এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সিপিডির ফ্যালো ড. মুস্তাফিজুর রহমান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষক আবরার আহমেদ। আলোচনায় অংশ নেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও চাইনিজ ইনভেস্টর্স ইন বাংলাদেশের সভাপতি হা কুন। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, তীব্র জ্বালানি সংকটে বিদ্যুতের সরবরাহে সংকট তৈরি হওয়ায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি বা সৌর বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে যোগান বাড়াতে বিগত সরকারের আমলে দেশে নতুন নতুন সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে রাজনৈতিক বিবেচনা এবং অনিয়মের অভিযোগে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নেওয়া তিন হাজার ২৮৭ মেগাওয়াটের বেশি সক্ষমতার ৩৭ সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাতিল করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। ১৪টি দেশের অর্থায়নের এসব প্রকল্পের মধ্যে চীনের চারটি, সিঙ্গাপুরের ৭টি এবং ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে ১টি করে প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্পে ছয় বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ করছে দেশগুলো। এরইমধ্যে ব্যয় হয়েছে ৩০০ মিলিয়ন ডলার। এ অবস্থায় প্রকল্প বাতিল করার সরকারি সিদ্ধান্তে চীন উদ্বিগ্ন বলে জানান সেই দেশের বিনিয়োগকারীরা, চেয়েছেন শান্তিপূর্ণ সমাধান।
গবেষক আবরার আহমেদ বলেন, বিপিডিবি উন্মুক্ত দরপত্র এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। তবে বেশ কয়েকটি কার্যক্রম এবং কাঠামোগত সমস্যা এখনো রয়ে গেছে। তিনি নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের দীর্ঘসূত্রতা, জমির অভাব, অস্বচ্ছতাসহ নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। প্রতিবেদনে এই খাতে চীনের বিনিয়োগের সমস্যার কথা তুলে ধরে দেশটির জন্য ওয়ান-স্টপ সার্ভিস চালু এবং বিনিয়োগের প্রক্রিয়া সহজ করার আহ্বান জানানো হয়।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, যে সব সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে তা সমাধানে বিডাকে এগিয়ে আসতে হবে। বিনিয়োগের সব সুবিধা নিশ্চিতে বিডা সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করতে পারে। এতে করে সময় বাঁচার সঙ্গে সঙ্গে টাকাও বাঁচবে। একাধিক লাইসেন্স জটিলতা নিরসনে সরকারকে কাজ করতে হবে।
তিনি বলেন, ডিজিটালের কথা বলা হলেও সত্যিকার অর্থে এর অর্ধেক ডিজিটাল হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে কার্যকর সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত না করা এবং বিনিয়োগ সুরক্ষা না থাকায় বাংলাদেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা যাচ্ছে। অনেকে জমিতে বিনিয়োগ করেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেউ চাইলেও তার বিনিয়োগকৃত অর্থ ফেরত নিতে পারছে না। এ সময় বিনিয়োগ বাড়াতে প্রণোদনার চেয়ে পদে পদে বাধা দূর করা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিতের ডিজিটাল পদ্ধতি চালুর তাগিদ দেন আলোচকরা।
চাইনিজ ইনভেস্টর্স ইন বাংলাদেশের সভাপতি হা কুন বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে এশিয়ায় প্রায় ৫৫ শতাংশ চীনা বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশেও উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ রয়েছে। কিন্তু, ২০৩০ সাল নাগাদ মোট বিদ্যুতের ২০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাত থেকে উৎপাদনের যে লক্ষ্য বাংলাদেশ ঠিক করেছে তা উচ্চাভিলাষী বলে উল্লেখ করেন তিনি।

প্যানেল

×