
ছবি: সংগৃহীত।
বর্তমান ব্যস্ত জীবনে অনেকেই তাড়াহুড়ো করে খাওয়া শেষ করেন, যেন সময় বাঁচানোই সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য। কিন্তু চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদরা সতর্ক করে বলছেন, দ্রুত খাওয়ার অভ্যাসের ফলে শরীরে নানা ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে—যা দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক রূপ নিতে পারে। জেনে নিন দ্রুত খাওয়ার সাতটি সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব ও তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।
১. স্থূলতার ঝুঁকি বৃদ্ধি:
খুব দ্রুত খেলে এবং যথেষ্ট না চিবিয়ে খেলে শরীর ঠিকমতো পেট ভরা সঙ্কেত পায় না। ফলে অতিরিক্ত খাওয়া হয় এবং ওজন বৃদ্ধি পায়। দ্রুত খাওয়া ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে বাধা দেয় এবং হজম প্রক্রিয়াতেও ব্যাঘাত ঘটায়।
২. টাইপ-২ ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা:
যদিও দ্রুত খাওয়া সরাসরি ডায়াবেটিস সৃষ্টি করে না, তবে এটি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের সঙ্গে জড়িত—যেখানে শরীর ইনসুলিন সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি টাইপ-২ ডায়াবেটিসে পরিণত হতে পারে। এমনকি স্বাভাবিক ওজনের ব্যক্তিরাও এই ঝুঁকিতে পড়তে পারেন।
৩. মেটাবলিক সিনড্রোমের সম্ভাবনা:
দ্রুত খাওয়ার সঙ্গে মেটাবলিক সিনড্রোম নামক একটি স্বাস্থ্য জটিলতার সম্পর্ক পাওয়া গেছে। এতে কোমরের মাপ বেড়ে যাওয়া, ‘ভালো’ কোলেস্টেরল (HDL) কমে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দেয়—যা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের পূর্বাভাস হিসেবে বিবেচিত হয়।
৪. ইরোসিভ গ্যাস্ট্রাইটিস:
দ্রুত খাওয়ার ফলে পেটের ভেতরের আস্তরণে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে, যাকে বলা হয় ইরোসিভ গ্যাস্ট্রাইটিস। এটি দীর্ঘমেয়াদে গ্যাস্ট্রিক আলসার বা ঘা-তে রূপ নিতে পারে। এক গবেষণায় ১০,৮৯৩ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে যাঁরা নিজেদের দ্রুত খাদক বলে শনাক্ত করেছেন, তাঁদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা গেছে।
৫. শ্বাসরোধ বা গলায় খাবার আটকে যাওয়ার ঝুঁকি:
খুব দ্রুত খাওয়ার সময় খাবার ভালোভাবে চিবানো হয় না, ফলে শ্বাসরোধ বা চোকিংয়ের ঝুঁকি তৈরি হয়। শিশুর মতো প্রাপ্তবয়স্কদেরও খাবার ধীরে ধীরে ও মনোযোগ সহকারে খাওয়া উচিত।
৬. হৃদরোগের ঝুঁকি:
দ্রুত খাওয়ার ফলে স্থূলতা বাড়ে, যা হৃদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ। উচ্চ রক্তচাপ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরলের ভারসাম্যহীনতা এবং ঘুমের সমস্যা—সবই হৃদযন্ত্রের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।
৭. পেট ফাঁপার সমস্যা:
দ্রুত খাওয়ার সময় বেশি পরিমাণে বাতাস শরীরের ভেতরে চলে যায়, ফলে পেটে গ্যাস জমে ফোলাভাব দেখা দেয়। এছাড়া দ্রুত খাওয়ার সময়ে সাধারণত বার্গার, ফ্রাই, সফট ড্রিংকসের মতো ফাস্টফুড খাওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে—যা স্বাস্থ্যের জন্য আরও ক্ষতিকর।
অল্প সময়ে খাবার খাওয়া আমাদের জীবনের অংশ হয়ে গেলেও, একটু ধীরে খেলে শরীরের জন্য তা হতে পারে আশীর্বাদ। ভালো হজম, ওজন নিয়ন্ত্রণ এবং দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে খাওয়া-দাওয়ায় ধীরতা ও সচেতনতা জরুরি। তাই পরের বার খাবারের টেবিলে বসার সময় একটু সময় নিয়ে, গভীর শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে খাবার গ্রহণ করুন। দীর্ঘমেয়াদে আপনি নিজেই এর সুফল বুঝতে পারবেন।
সূত্র: ব্রাইট সাইড।
মিরাজ খান