
ছবি: সংগৃহীত
কফির গুণাগুণ শুধু সকালে ঘুম ভাঙানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—এতে রয়েছে আরও নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা। এমনটাই জানালেন ট্রিনিটি কলেজের অধ্যাপক ও বিজ্ঞানী লুক ও’নিল।
আইরিশ পডকাস্ট Show Me The Science-এর এক পর্বে অধ্যাপক ও’নিল ব্যাখ্যা করেন, ক্যাফেইন আমাদের সতর্ক অনুভব করালেও প্রকৃতপক্ষে এটি কফি গাছ উৎপাদন করে পোকামাকড় দমনের জন্য।
তিনি বলেন, “কফি গাছ মূলত ক্যাফেইন তৈরি করে তার পাতায় কামড় দেওয়া পোকামাকড়কে মেরে ফেলার জন্য। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি—যখন কোনো ছোট পোকা পাতায় কামড় দেয়, তখন কফি গাছ সেই স্থানে ক্যাফেইন তৈরি করতে শুরু করে, যা পরে সেই পোকার মৃত্যু ঘটাতে পারে।”
তিনি আরও জানান, ক্যাফেইন সম্ভবত পোকাদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট রাসায়নিক পথ—অ্যাডিনোসিন রিসেপটর—প্রভাবিত করে, যেটি মানুষের মধ্যেও ঘুমের অনুভূতি তৈরির সঙ্গে জড়িত।
অধ্যাপক ও’নিল বলেন, “অ্যাডিনোসিন হলো মস্তিষ্কে উৎপন্ন একটি প্রাকৃতিক রাসায়নিক, যা আমাদের ঘুম পেতে সাহায্য করে। সাধারণত ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়, আর অ্যাডিনোসিন এই ঘুমে সহায়ক ভূমিকা রাখে।”
“কিন্তু যখন আমরা কফি খাই, ক্যাফেইন গিয়ে এই অ্যাডিনোসিন রিসেপটরে আটকে যায়। অ্যাডিনোসিনের পরিবর্তে ক্যাফেইন রিসেপটরে বসে পড়ে এবং ঘুমের সিগনাল বন্ধ করে দেয়। এর ফলে মানুষ সতর্ক বোধ করে।”
পোকামাকড়ের ক্ষেত্রে এই রাসায়নিক প্রতিক্রিয়া মারাত্মক হলেও মানুষের ক্ষেত্রে এটি কেবলমাত্র জাগ্রত বোধ করায়।
কেবল সতর্কতা বাড়ানো নয়, কফি শরীরের প্রদাহ (ইনফ্ল্যামেশন) কমাতেও কার্যকর বলে দাবি করেন অধ্যাপক ও’নিল।
তিনি বলেন, “কফি গাছের রাসায়নিক গঠনে ক্যাফেইনের পাশাপাশি রয়েছে ক্যাফেস্টল, কাহওয়িওল এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড নামক কিছু উপাদান। গবেষণায় দেখা গেছে, এসব উপাদান দেহে প্রদাহ কমাতে পারে। এখন এসব উপাদানকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেও পরীক্ষা করা হচ্ছে, যেগুলো বিভিন্ন প্রদাহজনিত রোগে উপকারী হতে পারে।”
অধ্যাপক লুক ও’নিল আরও বলেন, কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কফি পান ক্যানসার প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখতে পারে।
সব মিলিয়ে, কফির শুধু সকালে ঘুম ভাঙানোই নয়, এতে রয়েছে বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত আরও অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা।
শিহাব