ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

পাঁচটি অভ্যাস যা আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১ জুলাই ২০২৫

পাঁচটি অভ্যাস যা আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক

ছ‌বি: প্রতীকী

আজকের ব্যস্ত জীবনে শরীরের মতো মনও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। মানসিক চাপ, উদ্বেগ, হতাশা— এসব এখন অনেকের নিত্যসঙ্গী হয়ে গেছে। ছোট-বড় সবার জীবনেই নানা সমস্যা, দায়িত্ব আর প্রতিযোগিতা। এই চাপের মাঝে নিজের মনের যত্ন নেওয়াটা যেন আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিনের জীবনে ছোট কিছু অভ্যাস গড়ে তুললে মানসিক স্বাস্থ্যে বড় পরিবর্তন আসতে পারে। নিয়মিত কিছু সহজ কাজ করলে মন যেমন শান্ত থাকে, তেমনি মনোযোগ বাড়ে, আত্মবিশ্বাসও জাগে। পাঁচটি অভ্যাস মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করতে পারে।

প্রথম অভ্যাসটি হলো প্রতিদিন প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকা। সকালে একটু হাঁটতে বের হওয়া, গাছের পাতায় হাত বুলিয়ে দেওয়া, খোলা আকাশের নিচে কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকা— এই ছোট ছোট বিষয়গুলো মনকে শান্ত করে। প্রাকৃতিক আলো ও সবুজ পরিবেশ মস্তিষ্কে সেরোটোনিন হরমোন বাড়ায়, যা আমাদের ভালো অনুভব করায়।

দ্বিতীয় অভ্যাসটি হলো ডিজিটাল স্ক্রিন থেকে কিছুটা দূরে থাকা। দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় ‘নো ফোন’ রাখলে মন অনেকটা হালকা হয়। বিশেষ করে সকালে ঘুম থেকে উঠে সঙ্গে সঙ্গে ফোন না ধরা এবং রাতে ঘুমানোর আগে অন্তত ৩০ মিনিট স্ক্রিন ছাড়া সময় কাটানো খুব জরুরি। সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

তৃতীয় অভ্যাসটি হলো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। প্রতিদিন অন্তত তিনটি বিষয় লিখে রাখা যেতে পারে, যেগুলো নিয়ে আপনি কৃতজ্ঞ। যেমন— আজ আমি সুস্থ আছি, পরিবার পাশে আছে, প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে কথা হয়েছে— এই ছোট ছোট বিষয় লিখে রাখলে মন ধীরে ধীরে ইতিবাচক হয়ে ওঠে। এই অভ্যাসটা হতাশা বা মন খারাপের সময় আপনাকে সামলে নিতে সাহায্য করবে।

চতুর্থ অভ্যাসটি হলো ‘না’ বলতে শেখা। আমরা অনেক সময় অন্যের আবদার রাখতে গিয়ে নিজের কষ্ট বা চাপের কথা ভুলে যাই। কিন্তু নিজেকে ভালো রাখতে হলে, সময়মতো ‘না’ বলা শিখতে হবে। নিজের সীমা বোঝা, প্রয়োজন বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া— এই অভ্যাস মানসিক শান্তির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

পঞ্চম অভ্যাসটি হলো প্রতিদিন কিছু সময় একা থাকা। এই সময়টা শুধু নিজের সঙ্গে কাটানো। সেটা বই পড়ে হোক, গান শুনে হোক বা এক কাপ চা নিয়ে বারান্দায় বসে থাকা— এই সময়টা মনের ভেতরের কথা শুনতে সাহায্য করে। একা সময় কাটানো মানেই নিঃসঙ্গতা নয়; বরং এই সময় মনকে রিচার্জ করে তুলতে পারে।

এমন অভ্যাসগুলো গড়ে তোলা খুব কঠিন নয়, তবে সময় ও মনোযোগ দরকার। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শরীর যেমন ব্যায়াম চায়, তেমনি মনও চায় নিয়মিত যত্ন। প্রতিদিনের এই ছোট ছোট অভ্যাসই ভবিষ্যতের বড় মানসিক বিপর্যয় থেকে আপনাকে রক্ষা করতে পারে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেন, মানসিক সুস্থতা শুধু মানসিক রোগ না থাকাকেই বোঝায় না, বরং মন ভালো থাকা, চিন্তা পরিষ্কার থাকা, এবং নিজের জীবন সম্পর্কে ইতিবাচক ভাবা—  এসবই মানসিক সুস্থতার লক্ষণ।

এই আধুনিক ও ব্যস্ত জীবনে নিজের মনের যত্ন নেওয়া কোনো বিলাসিতা নয়, বরং প্রয়োজন। আর সে যত্ন নিতে গেলে বড় কিছু নয়, প্রয়োজন শুধু সচেতন কিছু অভ্যাস।

মন ভালো থাকলে জীবনও সহজ হয়ে যায়। তাই আজ থেকেই শুরু হোক নিজের মনের যত্ন নেওয়া, প্রতিদিন মাত্র কয়েক মিনিট করে। কিছুদিন পর দেখবেন, আপনি আগের চেয়ে অনেক বেশি স্থির, শান্ত এবং শক্তিশালী।

এম.কে.

×