
ছবি: সংগৃহীত
২০২৫ সালের জুলাই থেকে ছয় মাসের জন্য সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার কমানো হয়েছে। তবুও সাধারণ বিনিয়োগকারীরা এখনো সঞ্চয়পত্রকেই সবচেয়ে নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করছেন। কারণ এতে যেমন ঝুঁকি কম, তেমনি রয়েছে রাষ্ট্রের পূর্ণ নিশ্চয়তা। তবে বিনিয়োগের আগে কিছু বিষয় ভেবে ও বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
প্রথমত, সঞ্চয়পত্র দ্রুত মুনাফা বা জরুরি সময় টাকা তোলার উপযুক্ত মাধ্যম নয়। সাধারণত সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ থাকে তিন থেকে পাঁচ বছর। আপনি যদি স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগ করতে চান, তাহলে এটি আপনার জন্য উপযুক্ত নয়। কারণ নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সঞ্চয়পত্র ভাঙালে মুনাফার পরিমাণ অনেক কমে যায়।
দ্বিতীয়ত, সঞ্চয়পত্রে সাড়ে সাত লাখ টাকার বেশি বিনিয়োগ করলে মুনাফার হার ধাপে ধাপে কমতে পারে। এছাড়া মুনাফার উপর ১০ শতাংশ হারে উচ্ছে কর (Tax at Source) কাটা হয়। কর শনাক্তকরণ নম্বর (TIN) না থাকলে এই হার বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ শতাংশে। তবে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগে কর কাটা হয় না।
তৃতীয়ত, মূল্যস্ফীতির সময় সঞ্চয়পত্রের নির্দিষ্ট মুনাফা প্রকৃত অর্থে কম উপকারে আসে। দেশে গত বছর মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ শতাংশেরও বেশি। ফলে বিনিয়োগকারীরা বাস্তবে লাভবান না হয়ে বরং ক্রয়ক্ষমতা হারাতে পারেন। তাই বিনিয়োগের আগে বাজার পরিস্থিতি বুঝে নেওয়া জরুরি।
সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে রয়েছে পরিমাণ সীমা। যেমন: পরিবার সঞ্চয়পত্রে নারীরা সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকা, পাঁচ বছর মেয়াদী সঞ্চয়পত্রে এককভাবে ৩০ লাখ এবং যৌথভাবে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারেন। পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সীমা সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা। তিন মাস অন্তর মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয়পত্রেও সর্বোচ্চ সীমা ৩০ লাখ টাকা (যৌথ নামে ৬০ লাখ)।
সঞ্চয়পত্র কেনার জন্য বাংলাদেশের নাগরিক, প্রবাসী এবং নির্দিষ্ট শর্তে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীরা উপযুক্ত। পরিবার সঞ্চয়পত্র শুধুমাত্র নারীদের জন্য বরাদ্দ। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও নির্দিষ্ট নিয়মে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।
এই বিনিয়োগে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র লাগে: জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, ব্যাংক হিসাব নম্বর, টিআইএন সার্টিফিকেট (যদি থাকে) এবং অর্থের উৎসের প্রমাণ। এছাড়া, ২০২১ সাল থেকে অনলাইন নিবন্ধন ছাড়া সঞ্চয়পত্র কেনা সম্ভব নয়। তাই আগে থেকেই অনলাইন প্ল্যাটফর্মে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে।
বিনিয়োগের আগে অগ্রিম পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম। জরুরি কোনো প্রয়োজনে দ্রুত নগদ অর্থের ব্যবস্থা রাখতে সঞ্চয়পত্রের বাইরেও কিছু অর্থ হাতে রাখা ভালো। কারণ একবার বিনিয়োগ করলে তা সহজে ভাঙানো যায় না এবং করলে ক্ষতিও হতে পারে।
প্রতারণা এড়াতে অবশ্যই সরাসরি ডাকঘর, বাংলাদেশ ব্যাংক বা নির্ধারিত বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র কিনতে হবে। দালালের মাধ্যমে অথবা ব্যক্তি পর্যায়ে কেনাবেচা করলে প্রতারণার শিকার হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
সবশেষে, মুনাফার টাকা পাওয়ার জন্য সঞ্চয়পত্র কেনার আগেই একটি ব্যাংক হিসাব খুলে নিতে হবে। কেননা মুনাফার টাকা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওই অ্যাকাউন্টেই জমা হবে।
সব দিক বিবেচনায় সঞ্চয়পত্র এখনো একটি নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হলেও বিনিয়োগের আগে নিজের প্রয়োজন, সময়, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা ভালোভাবে মূল্যায়ন করাই হবে বুদ্ধিমানের সিদ্ধান্ত। আপনি কি সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করবেন, নাকি অন্য কোনো পরিকল্পনা করবেন—সেই সিদ্ধান্ত এখন আপনার।
ছামিয়া