ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

কে সুইচ বন্ধ করলো? এয়ার ইন্ডিয়া ১৭১ বিমানের রহস্যে প্রশ্নের পাহাড়

প্রকাশিত: ০৯:৫১, ১২ জুলাই ২০২৫

কে সুইচ বন্ধ করলো? এয়ার ইন্ডিয়া ১৭১ বিমানের রহস্যে প্রশ্নের পাহাড়

ছবি: সংগৃহীত

জুন মাসে আহমেদাবাদে ভয়াবহভাবে বিধ্বস্ত হওয়া এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট ১৭১-এর প্রাথমিক তদন্তে এক ভীতিকর তথ্য সামনে এসেছে। বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড্ডয়নের কয়েক সেকেন্ড পরই ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়—যার ফলেই ২৬০ জনের প্রাণ যায়।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, টেকঅফের ঠিক পরপরই বিমানের জ্বালানি নিয়ন্ত্রণকারী দুইটি সুইচ হঠাৎ করে ‘কাট-অফ’ অবস্থানে চলে যায়। এই সুইচগুলো সাধারণত ল্যান্ডিংয়ের পর বন্ধ করা হয়, উড্ডয়নের সময় নয়। এতে দুইটি ইঞ্জিনেই জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় এবং শক্তি হারায়।

ককপিট ভয়েস রেকর্ডারে একজন পাইলটকে অপরজনকে জিজ্ঞাসা করতে শোনা যায়, “তুমি কেন কাট-অফ করলে?” জবাবে অপরজন বলেন, “আমি করিনি।” কিন্তু কে বলেছে, তা নিশ্চিত নয়। উড্ডয়নের সময় কো-পাইলট বিমান চালাচ্ছিলেন, আর ক্যাপ্টেন পর্যবেক্ষণে ছিলেন।

সুইচদ্বয় আবার স্বাভাবিক অবস্থানে ফেরত আনা হলে ইঞ্জিন পুনরায় চালু হতে থাকে। দুর্ঘটনার সময় এক ইঞ্জিন সামান্য শক্তি পেতে শুরু করেছিল, অপরটি এখনও পর্যাপ্ত ক্ষমতা ফিরে পায়নি।

ফ্লাইটটি আকাশে উঠেছিল মাত্র ৪০ সেকেন্ডের জন্য এবং ৬২৫ ফুট উচ্চতায় পৌঁছে নিয়ন্ত্রণ হারায়। এরপরই জনবহুল এলাকা ভেঙে পড়ে।

তদন্তে জানা গেছে, সুইচগুলো লকিং ব্যবস্থায় নির্মিত—যাতে দুর্ঘটনাক্রমে সুইচ টানা না যায়। এক হাতে দুইটি একসঙ্গে টানা প্রায় অসম্ভব। ফলে দুর্ঘটনাজনিত নয়, উদ্দেশ্যমূলক না হলেও ‘অসাবধানতা’ যে দুর্ভাবনার বিষয়, তা স্পষ্ট।

প্রাক্তন বিমান দুর্ঘটনা তদন্তকারী শন প্রুচনিকি বলেন, “যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে সুইচ বন্ধ করে থাকে, তবে সেটি মারাত্মক। আর যদি দুর্ঘটনাক্রমে হয়, তবে কেনো ককপিটে এমন আলোচনার অভাব ছিল?”

নিরীক্ষক পিটার গোয়েলজ বলেন, “রেকর্ডারের একটি মাত্র প্রশ্ন, ‘তুমি কেন কাট-অফ করলে?’ যথেষ্ট নয়। আরো অডিও প্রকাশ দরকার।”

রেকর্ডারে কাদের কণ্ঠ ছিল, তা এখনও নির্ধারিত হয়নি। এ কারণেই স্পষ্টতা আসেনি। তদন্তকারীরা ককপিটের ভিডিও রেকর্ডার থাকার প্রয়োজনীয়তাও উল্লেখ করেছেন, যা হাতে কারা কী করছিল, তা প্রমাণ করতে পারতো।

একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট উঠে এসেছে রিপোর্টে—২০১৮ সালে মার্কিন FAA (ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) একটি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছিল যে কিছু বোয়িং বিমানে এই সুইচের লকিং ফিচার নিষ্ক্রিয় ছিল।

যদিও এটি ‘বাধ্যতামূলক’ ছিল না, তাই এয়ার ইন্ডিয়া কোনো অতিরিক্ত পরীক্ষা করেনি। এখন প্রশ্ন উঠেছে—এই নির্দিষ্ট বিমানের সুইচেও কি এমন ত্রুটি ছিল?

প্রাক্তন ভারতীয় তদন্ত কর্মকর্তা কিশোর চিন্তা বলেন, “যদি ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল ইউনিট সুইচগুলোকে চালু বা বন্ধ করতে পারে, তবে সেটি উদ্বেগের বিষয়।” তবে যান্ত্রিক ত্রুটি এখন পর্যন্ত বাতিল করা হয়েছে, কারণ জ্বালানি পরীক্ষায় কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি।

ঘটনার সময় বিমানের র‍্যাম এয়ার টারবাইন (RAT) স্বয়ংক্রিয়ভাবে বের হয়ে আসে, যার মাধ্যমে বোঝা যায়, দুই ইঞ্জিনেই সম্পূর্ণভাবে শক্তি হারিয়েছিল। এছাড়া দেখা গেছে, ল্যান্ডিং গিয়ার নিচে অবস্থানেই ছিল—অর্থাৎ ওঠানো হয়নি। এক বোয়িং ৭৮৭ পাইলট বলেন, এমন পরিস্থিতিতে কেউ চাকা উঠাতে মনোযোগ দেয় না—তখন মাথায় থাকে শুধু, “বিমানটি কোথায় নিরাপদে নামানো যাবে?”

তদন্তকারীরা বলছেন, পাইলটেরা পুনরায় ইঞ্জিন চালু করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সময় ছিল খুবই কম। বাম ইঞ্জিন আগে চালু হয়, ডানটি পরে, কিন্তু পর্যাপ্ত সময় না পাওয়ায় বিমানের শক্তি ফিরে আসেনি।

এয়ার ইন্ডিয়ার এই দুর্ঘটনা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে—কারা সুইচ বন্ধ করেছিল? কেন করেছিল? ত্রুটি নাকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত? একমাত্র ককপিট রেকর্ডারেই এখন এই রহস্যের চাবিকাঠি।

সূত্রঃ বিবিসি 

নোভা

আরো পড়ুন  

×