ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

পিকেকে অস্ত্র ফেলেছে, ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ে পা রাখলো তুরস্ক:এরদোয়ান

প্রকাশিত: ১৮:৫১, ১২ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৮:৫২, ১২ জুলাই ২০২৫

পিকেকে অস্ত্র ফেলেছে, ইতিহাসের নতুন অধ্যায়ে পা রাখলো তুরস্ক:এরদোয়ান

তুরস্কের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে বলে ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান। দীর্ঘ ৪৭ বছর ধরে চলা পিকেকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সশস্ত্র তৎপরতার অবসান এবং অস্ত্র পরিত্যাগের মধ্য দিয়ে তুরস্ক প্রবেশ করেছে এক নতুন ঐক্য ও শক্তির যুগে।

শনিবার (১২ জুলাই) আঙ্কারায় ক্ষমতাসীন একে পার্টির ৩২তম পরামর্শ ও মূল্যায়ন সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, “আজ ইতিহাসের এক নতুন দিন, এক নতুন অধ্যায়। মহান, শক্তিশালী তুরস্ক ‘তুর্কির শতাব্দী’র দরজা আজ সম্পূর্ণভাবে উন্মুক্ত হয়েছে।” তিনি এটিকে “মহান ও শক্তিশালী তুরস্কের ঊষা” হিসেবে অভিহিত করেন।

প্রসঙ্গত, পিকেকে যাকে তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে চলতি বছরের মে মাসে কংগ্রেসে নিজেদের বিলুপ্তির ঘোষণা দেয়। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে সংগঠনটির কারাবন্দি নেতা আবদুল্লাহ ওজালান সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন।

এরপর শুক্রবার ইরাকের সুলেমানিয়া প্রদেশে ৩০ জন পিকেকে সদস্য যাদের মধ্যে ১৫ জন নারী এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের অস্ত্র আগুনে নিক্ষেপ করে প্রতীকীভাবে সশস্ত্র লড়াই পরিত্যাগ করে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এই ঘটনাকে "৪৭ বছরের সন্ত্রাসের অভিশাপের অবসান" হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, “এই সিদ্ধান্ত তুরস্কের জয়, আর তুর্কি, কুর্দি ও আরবসহ আমাদের ৮৬ মিলিয়ন নাগরিকের বিজয়।”

এরদোয়ান বলেন, “আজ মালাজগির্তের চেতনা, জেরুজালেম জোট এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল স্পৃহা নতুনভাবে গঠিত হচ্ছে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই প্রক্রিয়া কোনও দর কষাকষি বা চুক্তির ফল নয়।“তুর্কি প্রজাতন্ত্র আমাদের সবার ঘর, আমাদের অভিন্ন ছাদ। আমরা সবাই এক, ঐক্যবদ্ধ এবং চিরকালীন ভাই।” তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৮৪ সাল থেকে পিকেকে সন্ত্রাসে প্রায় ১০ হাজার নিরাপত্তা সদস্য এবং ৫০ হাজার বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন।

পার্লামেন্টে আইনি প্রক্রিয়ার উদ্যোগ

‘সন্ত্রাসমুক্ত তুরস্ক’ বাস্তবায়নে এরদোয়ান জানান, শিগগিরই তুর্কি পার্লামেন্টে আইনি কাঠামো নিয়ে আলোচনা শুরু হবে। একে পার্টি, এমএইচপি ও ডিইএম পার্টিকে নিয়ে একটি আন্তঃদলীয় কমিশন গঠন করা হবে, যারা প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও বিধি পর্যালোচনা করবে।

এরদোয়ান আরও জানান, এই উদ্যোগ শুধু তুরস্কের কুর্দি জনগণ নয়, বরং ইরাক ও সিরিয়ার কুর্দি সম্প্রদায়ের প্রতিও প্রযোজ্য। এই অঞ্চলের সাথেও আলোচনা চলছে।তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ও সিরিয়াবিষয়ক বিশেষ দূত টম ব্যারাকের সঙ্গে বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলেন, “তাদের পক্ষ থেকেও ইতিবাচক ও উৎসাহব্যঞ্জক বার্তা এসেছে।”

স্রেব্রেনিৎসা ও গাজায় সংহতি

এরদোয়ান শনিবার স্রেব্রেনিৎসা গণহত্যার ৩০তম বার্ষিকীতেও বক্তব্য রাখেন। তিনি একে “সাম্প্রতিক মানব ইতিহাসের সবচেয়ে লজ্জাজনক ঘটনা” বলে উল্লেখ করেন।তিনি বলেন, “আমরা সবসময় বসনিয়া ও আমাদের বসনিয়াক ভাইদের পাশে থাকব, যাতে আর কোনো দিন এমন ট্র্যাজেডি না ঘটে।”

স্মরণ করে দেন, কীভাবে স্রেব্রেনিৎসায় ৮ হাজার ৩৭২ জনকে পাশ্চাত্যের চোখের সামনে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল। সেইসাথে তিনি গাজার জনগণের প্রতি সহানুভূতি জানান, যারা “২২ মাস ধরে গণহত্যার শিকার হচ্ছে” এবং তাদের “নিপীড়নের বিরুদ্ধে সম্মানজনক সংগ্রামের” প্রতি তুরস্কের অকুণ্ঠ সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

পিকেকে-র সশস্ত্র তৎপরতার অবসান তুরস্কের জন্য শুধু একটি রাজনৈতিক অর্জন নয়, এটি একটি ঐতিহাসিক বাঁকবদল। এ সিদ্ধান্ত নতুন করে আশার আলো দেখিয়েছে এক ‘সন্ত্রাসমুক্ত তুরস্ক’-এর পথে। এই উদ্যোগ যে কতটা দীর্ঘস্থায়ী এবং কার্যকর হবে, তা নির্ভর করবে সরকার, জনগণ ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সম্মিলিত দায়িত্ববোধ ও অঙ্গীকারের উপর।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/48j4us2a

আফরোজা

×