
ছবি: সংগৃহীত
অস্ট্রেলিয়ার ছোট্ট শহর মরয়েলে পারিবারিক এক দুপুরের খাবার ঘিরে শুরু হয়েছিল এক বিভীষিকাময় অধ্যায়—যা পরবর্তীতে পরিচিতি পায় ‘মাশরুম মার্ডার’ নামে। এই হত্যাকাণ্ড শুধু অস্ট্রেলিয়াতেই নয়, বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। বিষাক্ত মাশরুম খাইয়ে একসঙ্গে তিনজনকে হত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ভিক্টোরিয়ার নারী এরিন প্যাটারসন। নয় সপ্তাহব্যাপী নাটকীয় বিচারপ্রক্রিয়ার শেষে উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর রহস্যগাঁথা।
২০২৩ সালের ২৯ জুলাই, অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়ার মরয়েল শহরের নিজ বাড়িতে পারিবারিক এক লাঞ্চের আয়োজন করেছিলেন ৫০ বছর বয়সী এরিন প্যাটারসন। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তার প্রাক্তন স্বামীর পরিবারের সদস্যদের। সম্পর্কের টানাপড়েন থাকায় প্রাক্তন স্বামী সিমন প্যাটারসন দাওয়াতে উপস্থিত হননি, তবে এসেছিলেন এরিনের শ্বশুর ডন প্যাটারসন (৭০), শাশুড়ি গালি প্যাটারসন, গালির বোন হিথার উইকিনসন (৬৬) এবং হিথারের স্বামী ইয়ান উইকিনসন।
এরিন সেদিন অতিথিদের বিফ ওয়েলিংটন নামক একটি খাবার পরিবেশন করেন। তিনি তার প্রাক্তন স্বামীর জন্যও একটি থালা তৈরি করে ফ্রিজে রেখে দেন—তবে নিজের খাবারে ওই পদ নেননি।
দুপুরের খাবার শেষে প্রার্থনা ও গল্পগুজবের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হলেও রাতে ঘটে বিপত্তি। অতিথিরা বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরদিন সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। চিকিৎসা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তাদের শরীরে বিষাক্ত ডেথ ক্যাপ মাশরুম এর নমুনা পাওয়া যায়।
ধীরে ধীরে অবস্থার অবনতি হতে থাকে। একে একে মৃত্যু হয় এরিনের শ্বশুর, শাশুড়ি এবং শাশুড়ির বোনের। কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে যান ইয়ান উইকিনসন। এরিনও দাবি করেন তিনি এবং তার দুই সন্তানও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, কিন্তু পরীক্ষা করে তাদের শরীরে বিষের কোনো চিহ্ন মেলেনি।
হাসপাতালে ভর্তি হতে অস্বীকৃতি জানানোর পর চিকিৎসকরাই পুলিশকে খবর দেন। তখন থেকেই পুলিশের সন্দেহের তালিকায় উঠে আসে এরিন প্যাটারসনের নাম। তদন্তে দেখা যায়, ইন্টারনেটে ডেথ ক্যাপ মাশরুম নিয়ে অনুসন্ধান করেছিলেন এরিন। তার মোবাইলের লোকেশন ডেটা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই মাশরুম যেসব অঞ্চলে পাওয়া যায়, সেসব এলাকায় তার উপস্থিতি ছিল।
আরও চাঞ্চল্য ছড়ায়, যখন সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, এরিন স্থানীয় এক ডাস্টবিনে একটি ফুড ডিহাইড্রেটর ফেলে দিচ্ছেন। পুলিশ পরবর্তীতে সেটির মধ্যেই বিষাক্ত মাশরুমের নমুনা খুঁজে পায়।
নয় মাস ধরে আদালতে চলা প্রমাণ ও শুনানির পর তিনজনকে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন এরিন প্যাটারসন। যদিও তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘পুরোটাই ছিল একটি দুর্ঘটনা।’ তার ভাষ্যমতে, প্রাক্তন স্বামীর পরিবারকেই তিনি নিজের পরিবার মনে করতেন, কারণ তার নিজের বাবা-মা বা আত্মীয় কেউই জীবিত নেই।
তিনি আরও দাবি করেন, ২০১৫ সালে সিমনের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের পরও তাদের মধ্যে একটি সম্মানজনক সম্পর্ক বজায় ছিল এবং তারা সন্তানের দায়িত্ব ভাগ করে পালন করতেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হলেও এমন হত্যাকাণ্ডের কোনও উদ্দেশ্য ছিল না বলে জানান তিনি।
তবে আদালতের রায় বলছে ভিন্ন কথা। এরিনের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যার প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। শাস্তি হিসেবে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সম্ভাবনা প্রবল।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=GkZiN6idnQE
রাকিব