
ছবি: সংগৃহীত
হোয়াটসঅ্যাপে মেটা যখন তাদের সেই বিতর্কিত নীল এআই আইকন চালু করেছিল, তখন ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। মনে হয়েছিল, মেটা এআই যেন জোরপূর্বক আপনার চ্যাটে ঢুকে পড়েছে এবং আপনি কিছুই করতে পারবেন না। যদিও এই এআই-কে চ্যাট থেকে ব্লক করা যায়, বিস্তারিত পদ্ধতি রয়েছে।
এদিকে, মাইক্রোসফট এবং এবার গুগল দেখিয়েছে, কী ভয়ংকর হতে পারে যখন পুরো প্ল্যাটফর্ম জুড়ে এআই জুড়ে দেওয়া হয়। হঠাৎ করেই আপনার যেসব বিষয়কে আপনি ব্যক্তিগত ও নিরাপদ মনে করতেন, সেগুলো আর নিরাপদ থাকছে না। এআই যেন আপনার সবকিছু দেখার জন্য উন্মুখ, আর আপনি কিছুই করতে পারছেন না।
প্রথম শুরু করেছিল মাইক্রোসফট, তাদের বহুল আলোচিত ‘রিকল’ আপগ্রেডের মাধ্যমে, যা উইন্ডোজ ১১-তে যুক্ত হয়। এটি এমন এক ভয়ংকর প্রযুক্তি, যা আপনার পিসিতে যা কিছু হচ্ছে তার ছবি তুলে রাখে এবং সেগুলোকে স্থানীয়ভাবে সংরক্ষণ করে, যেন সহজে খুঁজে পাওয়া যায়। এটির সবচেয়ে আতঙ্কের দিক— যে কোনো ওপেন টেক্সট মেসেজিং উইন্ডোও এতে ধরা পড়ে। আপাতত শুধু সিগন্যাল অ্যাপই এই ফিচার ঠেকাতে পেরেছে।
এরপর গুগল মাঠে নামে। তারা ঘোষণা করে, ‘জেমিনি’ নামের এআই এখন থেকে ফোনের তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ, যেমন মেসেজিং অ্যাপ এবং হোয়াটসঅ্যাপেও ঢুকতে পারবে। এই আপডেট কার্যকর হয়েছে ৭ জুলাই থেকে। শুরুতে ধারণা ছিল, এই প্রক্রিয়ায় নেওয়া ডেটা এআই প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হবে। তবে গুগল জানিয়েছে, সেটি সত্য নয়।
গুগল বলছে, এই আপডেট “ব্যবহারকারীদের জন্য ভালো,” কারণ এখন অ্যান্ড্রয়েড ফোনে জেমিনি ব্যবহার করে সহজেই বার্তা পাঠানো, ফোন কল দেওয়া এবং টাইমার সেট করা যাবে, এমনকি জেমিনি অ্যাপস অ্যাক্টিভিটি বন্ধ থাকলেও।
তবে, নিউউইনের সতর্কবার্তা অনুযায়ী, সাধারণ অবস্থায় গুগল দাবি করলেও, জেমিনি হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ পড়বে না বা সারসংক্ষেপ করবে না। কিন্তু এখানেই বড় একটি ফাঁক রয়ে গেছে। ‘গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট’ বা ‘ইউটিলিটিজ’ অ্যাপের সহায়তায় জেমিনাই আপনার মেসেজ (ছবি সহ) পড়তে পারে, এমনকি হোয়াটসঅ্যাপের নোটিফিকেশনেও প্রবেশ করতে পারে এবং উত্তরও দিতে পারে।
বাস্তবে, আপনাকে জেমিনিকে বলেই হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করতে হয়, যেমন মেসেজ পড়া বা উত্তর দেওয়া। কিন্তু প্রযুক্তিগতভাবে এআই সিস্টেমকে পুরোপুরি ব্লক করা যায় না। যদিও এটি মাইক্রোসফটের রিকলের মতো ভয়ংকর নয়, তবুও স্পষ্টতই আমরা এখন এক অদ্ভুত, অনিশ্চিত গোপনীয়তার যুগে প্রবেশ করেছি।
গুগল প্রচার করছে, জেমিনির এই আপডেট দিয়ে তৃতীয় পক্ষের অ্যাপ ব্যবহারের সুযোগ মিললেও, ডেটা প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার হবে না। কিন্তু ‘আরস টেকনিকা’ সতর্ক করে বলছে, “না, গুগল, এটা মোটেই ভালো খবর নয়।” নিউউইন নিশ্চিত করেছে, এই সুবিধা পুরোপুরি বন্ধ করার কোনো উপায়ই নেই।
কাসপারস্কির সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মার্ক রিভেরো বলেন, জেমিনাইয়ের এই ডিফল্ট অ্যাকসেস ভয়াবহ গোপনীয়তা লঙ্ঘনের শঙ্কা তৈরি করছে। ব্যক্তিগত মেসেজিং অ্যাপগুলো হলো সবচেয়ে সংবেদনশীল জায়গা, যেখানে থাকে ব্যক্তিগত কথা, গোপন তথ্য ও সংবেদনশীল ডেটা। স্পষ্ট সম্মতি ছাড়া কোনো এআই টুলের স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই ডেটা পড়ার অধিকার থাকলে, ব্যবহারকারীর বিশ্বাস পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে।
আরস টেকনিকা আরও বলেছে, “গুগল হয়তো বলছে, এটা ভালো খবর। কিন্তু অনেক ব্যবহারকারী একেবারেই জেমিনি বা এ ধরনের এআইকে নিজেদের ডিভাইসে দেখতে চায় না। আপাতত তাদের অন্ধকারেই রেখে দেওয়া হচ্ছে।”
ব্যবহারকারীরা চাইলে জেমিনির অ্যাকসেস অ্যাপ ধরে ধরে বন্ধ করতে পারে, তবে সেটি ব্যবহারকারীদের ওপরই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে— যা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।
উইন্ডোজ হোক বা অ্যান্ড্রয়েড— এখনই আপনার উচিত আপনার সেটিংসগুলো ভালোভাবে দেখে নেওয়া, বুঝে নেওয়া আপনার ডিভাইসে কী কী ডেটা পড়া হচ্ছে, সংরক্ষণ করা হচ্ছে বা এআই প্রশিক্ষণে ব্যবহার হচ্ছে। মনে রাখবেন, এই এআই আপনার মেসেজিং কনটেন্টও পড়তে পারে, সংরক্ষণ করতে পারে কিংবা অন্য মানুষের কাছে পর্যালোচনার জন্য পাঠাতে পারে— অনেক সময় আপনার অজান্তেই।
আবির