ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

দেশজুড়ে র‌্যাবের কঠোর গ্রেফতার অভিযান

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৫৭, ১২ জুলাই ২০২৫

দেশজুড়ে র‌্যাবের কঠোর গ্রেফতার অভিযান

ছবি: জনকণ্ঠ

সাম্প্রতিক সময়ে দেশের নানা এলাকায় ঘটে যাওয়া একাধিক চাঞ্চল্যকর অপরাধের রহস্য উদ্ঘাটনে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। মিটফোর্ডে নির্মমভাবে ইট দিয়ে হত্যা, চট্টগ্রামে স্ত্রীকে ১১ টুকরো করে লাশ গুমের চেষ্টা, শাহজালাল বিমানবন্দরে বোমা আতঙ্ক, শিশু অপহরণ থেকে শুরু করে মাদক ও মানবপাচার—প্রতিটি অপরাধে র‌্যাবের সাফল্য নজর কাড়ছে।

গত ৯ জুলাই ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগকে মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় র‌্যাব তদন্ত শুরু করে এবং গতকাল দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে এজাহারনামীয় দুই আসামি—আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে লম্বা মনির (৩২)—কে গ্রেফতার করে।

একই তারিখে চট্টগ্রামে এক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এক বাসার ভেতরে ঘাতক স্বামী ধারালো অস্ত্র দিয়ে স্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যা করে, পরে লাশ ১১ খণ্ড করে ঘরের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রেখে পালিয়ে যায়। অভিযানে র‌্যাব ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর থানার ফুলবাড়িয়া থেকে হত্যাকারী স্বামী মো. সুমন (৩৫) কে গ্রেফতার করে।

১১ জুলাই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কন্ট্রোল রুমে এক নারী কণ্ঠে ফোন আসে যে, ঢাকা-কাঠমান্ডু ফ্লাইটে বোমা থাকতে পারে। ফোন নম্বর সনাক্ত করে র‌্যাব সেনাবাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে উত্তরা থেকে সন্দেহভাজনদের হেফাজতে নেয়।

র‌্যাব সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় একাধিক আলোচিত ও ভয়াবহ অপরাধের ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতারে উল্লেখযোগ্য সাফল্য দেখিয়েছে। মব ভায়োলেন্স দমনে র‌্যাব ইতোমধ্যে ২০ জন অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে লালমনিরহাটের পাটগ্রামে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনায় ৩ জন এবং কুমিল্লার মুরাদনগরে একই পরিবারের মা ও দুই সন্তানকে হত্যার ঘটনায় ৬ জনসহ মোট ৯ জনকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনায় ৭ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কুমিল্লায় এক নারীকে শ্লীলতাহানি করে নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় প্রধান আসামি শাহ পরানসহ ৬ জনকে এবং ভোলার তজুমদ্দিনে স্বামীকে মারধর ও স্ত্রীকে ধর্ষণের মামলার এক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

গত ২ জুলাই মোহাম্মদপুরের 'কব্জিকাটা গ্রুপ'-এর অন্যতম ভয়ংকর সদস্য টুন্ডা বাবুকে র‌্যাব নড়াইল থেকে গ্রেফতার করে, যা সংগঠিত অপরাধ মোকাবেলায় বড় সাফল্য।

অপহরণ দমনেও র‌্যাব গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে মো. হাফিজ উল্লাহকে অপহরণের ঘটনায় জড়িত ৫ জন এবং কুমিল্লা থেকে অপহৃত ৭ বছরের এক মাদ্রাসা ছাত্রকে উদ্ধারের ঘটনায় ৭ জন অপহরণকারীকে গ্রেফতার করা হয়।

মাদকবিরোধী অভিযানে, র‌্যাব গতকাল হবিগঞ্জে ১,৮০০ বোতল বিদেশি মদসহ ২ জন এবং র‌্যাব-১৩ কর্তৃক ১৫৪ কেজি গাঁজাসহ আরও ২ জনকে গ্রেফতার করে। সামগ্রিকভাবে, দেশের বিভিন্ন স্থানে চালানো অভিযানে র‌্যাব ৩,৫০০ মাদককারবারিকে গ্রেফতার করেছে এবং উদ্ধার করেছে ২৭,০০০ কেজি গাঁজা, ১,০৫,০০০ বোতল ফেন্সিডিল ও ৪২ লাখ পিস ইয়াবা।

এছাড়া, ৭ জুলাই রাজশাহীর টিকাপাড়া থানার লুট হওয়া পুলিশের একটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি উদ্ধার করেছে র‌্যাব, যা অস্ত্র পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

বিনিয়োগ প্রতারণার অভিযোগে এক নারী ও দুই বিদেশি নাগরিকসহ মোট ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় লাভজনক বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করে।

এছাড়া, গত ৩০ জুন লক্ষ্মীপুরে মাদকাসক্ত ছেলের হাতে বাবা খুন হওয়ার মামলায় প্রধান আসামি মামুনকে গ্রেফতার করা হয়। 

র‌্যাব ফোর্সেস দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে, যার প্রমাণ পাওয়া যায় তাদের বার্ষিক সাফল্যের পরিসংখ্যানে। গত এক বছরে র‌্যাব অস্ত্র ও গোলাবারুদ মামলায় ১৭২ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে এবং উদ্ধার করেছে ৫০০টির বেশি অস্ত্র ও ১০ হাজারেরও বেশি গোলাবারুদ। এছাড়াও, জলদস্যু ও বনদস্যু দমন অভিযানে ২৭ জনকে গ্রেফতার করেছে।

মানবপাচার প্রতিরোধে র‌্যাব ৭৩ জন আসামিকে গ্রেফতার করার পাশাপাশি ৪২ জন ভিকটিমকে উদ্ধার করেছে। অপহরণ মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৫০০-এর বেশি অপরাধী এবং উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ৭৫০ জন অপহৃত ভিকটিম। র‌্যাব পরিচয় ব্যবহার করে অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকা ৫ জন ভুয়া র‌্যাব সদস্যকেও আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

বিভিন্ন হত্যা ও ধর্ষণ মামলায় র‌্যাব ২,২০০-এর বেশি আসামিকে গ্রেফতার করেছে। এছাড়া, চাঁদাবাজির ঘটনায় ৭২ জন, ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৫০০ জন, প্রতারণার অভিযোগে ৪৪ জন, কিশোর গ্যাং সদস্য হিসেবে ১১ জন এবং ডাকাতির ঘটনায় ৪০০ জনকে গ্রেফতার করেছে।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মাদকবিরোধী অভিযানে র‌্যাবের সাফল্য। এ সময়ের মধ্যে তারা ৩,৫০০-এর বেশি মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে এবং বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে, যার মধ্যে রয়েছে গাঁজা, ইয়াবা, ফেন্সিডিল ও বিদেশি মদ।

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, আইনের শাসন সমুন্নত রাখা, মানবাধিকার রক্ষা, সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা, অপরাধ চিহ্নিত ও প্রতিরোধ করা এবং অপরাধীকে আইনের আওতায় নিয়ে আশার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে র‌্যাব আরও দৃঢ়ভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। র‌্যাব হবে জনগণের প্রকৃত বন্ধু ও আস্থার প্রতিক। জনগণের বিশ্বাস অর্জন করাই হচ্ছে র‌্যাবের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য।

মুমু ২

×