
ছবি: জনকণ্ঠ
দেশের উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ভরা বর্ষাকালেও খরা দেখা দিয়েছে, এতে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন আমন চাষিরা।
চলছে আষাঢ় মাস, বর্ষার ভরা মৌসুম। তবুও এ অঞ্চলে দেখা নেই বৃষ্টির। অতিরিক্ত তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টিতে শুকিয়ে আছে আমন ধানের জমিগুলো। পানির অভাবে দোলার জমিগুলোতে হালচাষ করতে না পারায় চাষিরা আশঙ্কায় পড়েছেন। খরায় পতিত জমি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। বর্ষা মৌসুমেও বৃষ্টিপাত না হওয়ায় রোপা আমন চাষে সময়মতো জমিতে হালচাষ দিতে না পেরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকেরা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যেসব জমিতে পানি ছিল, বৃষ্টি না হওয়ায় সেসব জমিগুলো এখন ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। খাঁ খাঁ করছে মাঠের পর মাঠ। দিনের প্রখর রোদে মাটি শুকিয়ে ফেটে গেছে। কিছু নিচু এলাকায় সেচ ও শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে কিছু জমিতে ধান রোপণ শুরু করেছেন কৃষকরা।
উপজেলার কুরুষাফেরুষা এলাকার কৃষক আবুল কাসেম ও শৈলান চন্দ্র রায় জানান, খরায় মাঠ পুড়ে চৌচির হয়ে গেছে। এখনো জমিতে হাল দেওয়া যায়নি। বৃষ্টি হলে এতদিনে জমি তৈরি করা যেত। সময়মতো রোপা আমনের চারা রোপণ করা সম্ভব হতো।
ভাঙ্গামোড় এলাকার কৃষক কার্তিক চন্দ্র সরকার ও কাশিপুর এলাকার আব্দুল বাতেন বলেন, অনাবৃষ্টির কারণে আমন চাষে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। পানির অভাবে জমিগুলোতে হালচাষ করা সম্ভব হয়নি। আমন ধানের চাষাবাদ করার আগে জমিগুলো হালচাষ করে কমপক্ষে ১৫ দিন রাখতে হয়, কিন্তু বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সেটা সম্ভব হয়নি। বীজতলা এখন রোপণের উপযোগী হয়ে উঠেছে। দুই-এক দিনের মধ্যে ভারি বৃষ্টিপাত না হলে জমিগুলো সেচ অথবা শ্যালো মেশিন দিয়ে রোপণের উপযোগী করে তুলতে হবে।
গজেরকুটি এলাকার কৃষক সুবল চন্দ্র রায় ও বালাতাড়ি গ্রামের কৃষক শংকর পাল বলেন, আষাঢ় মাস শেষের দিকে হলেও বৃষ্টির দেখা নেই। যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা, তা হয়নি। আমাদের বীজতলা সেচ ও শ্যালোমেশিনে পানি দিয়ে বপন করা হয়েছে। গত ২-৩ দিন থেকে আকাশ একটু মেঘাচ্ছন্ন থাকার পর সামান্য বৃষ্টি হয়েছে। ভারি বৃষ্টিপাত না হওয়ায় আমনের জমিগুলো বাচড়া পড়ে আছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টি না হলে ট্রাক্টর দিয়ে জমি চাষ করতে হবে, তবে এতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাবে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, কয়েকদিন ধরে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হলেও বৃষ্টি নেই। মঙ্গলবার সকাল থেকে প্রখর রোদ, বিকেলে আকাশে আবার মেঘ। তবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ১৩ ও ১৪ জুলাই ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. নিলুফা ইয়াছমিন বলেন, প্রচণ্ড খরার কারণে কৃষকেরা জমিতে হালচাষ দিতে পারছেন না। তবে এ বছর আমন ধান রোপণের লক্ষ্যমাত্রা ১১ হাজার ৩৫০ হেক্টর। ইতোমধ্যে সেচ ও শ্যালো মেশিনে ৭ হেক্টর জমিতে রোপণ শুরু হয়েছে। এখনো আমন চাষাবাদের যথেষ্ট সময় আছে। কৃষি বিভাগ আশা করছে, কিছুদিনের মধ্যে ভারি বৃষ্টিপাত শুরু হলে রোপণ জোরালোভাবে শুরু হবে। না হলে সেচ ও শ্যালো মেশিনের সাহায্যে রোপণের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হবে।
মুমু ২