
ছবি: সংগৃহীত
যদি কোনো দম্পতি সন্তান নেওয়ার পরিকল্পনা করে, তবে ডিম্বাণু নিঃসরণের (ওভ্যুলেশন) পরের দুই সপ্তাহের অপেক্ষা সত্যিই দীর্ঘ মনে হয়। (যদি গর্ভধারণ ঘটে থাকে) সাধারণত নারীরা মাসিক মিস হলে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করেন। তবে অনেক সময় পরীক্ষার আগেই শরীর কিছু সংকেত দিতে শুরু করে।
তবে মনে রাখতে হবে, প্রত্যেক নারীর শরীর আলাদা, তাই কেউ কেউ এই লক্ষণগুলো অনুভব করেন, আবার কেউ একদমই বুঝতে পারেন না।
নিচে ৫টি প্রাথমিক লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যেগুলো গর্ভধারণের ইঙ্গিত দিতে পারে। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অবশ্যই প্রেগন্যান্সি টেস্টই চূড়ান্ত পদ্ধতি। (তবে এই লক্ষণগুলো অনেক সময় মাসিক শুরুরও ইঙ্গিত হতে পারে)
১. হালকা রক্তস্রাব বা ইমপ্ল্যান্টেশন ব্লিডিং
গর্ভধারণের অন্যতম প্রথম লক্ষণ হিসেবে দেখা যায় হালকা রক্তস্রাব, যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে ‘ইমপ্ল্যান্টেশন ব্লিডিং’ বলা হয়। এতে নিষিক্ত ডিম্বাণুটি জরায়ুর দেওয়ালে সংযুক্ত হয়, সাধারণত গর্ভধারণের ৫ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে।
এই রক্তস্রাব খুবই হালকা এবং অল্প সময়ের জন্য হয়। এটি সাধারণত হালকা গোলাপি বর্ণের স্রাব, যা কয়েক ঘণ্টা থেকে দুই দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
এটি স্বাভাবিক মাসিকের তুলনায় একেবারেই কম এবং ক্ষণস্থায়ী।
যদি মাসিকের নির্ধারিত সময়ের কাছাকাছি এই হালকা রক্তস্রাব দেখা যায়, এবং তা সাধারণ মাসিকের চেয়ে একেবারেই আলাদা হয়, তবে এটি গর্ভধারণের লক্ষণ হতে পারে।
তবে অনেক নারী ইমপ্ল্যান্টেশন ব্লিডিং না হলেও সুস্থভাবে গর্ভধারণ করেন।
২. স্তনের পরিবর্তন ও ব্যথা
গর্ভধারণের প্রথমদিকে হরমোনের পরিবর্তনে স্তনে বেশ কিছু পরিবর্তন দেখা যায়।
স্তন স্পর্শকাতর হয়ে ওঠে, ফুলে যায় এবং ব্যথা অনুভূত হয়, যা সাধারণত গর্ভধারণের ২ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয়।
অনেক সময় স্তনের চারপাশের চামড়া গাঢ় হয়ে যায় এবং স্তনবৃন্তের চারপাশের অঞ্চল (অ্যারিওলা) বড় দেখায়।
স্তনে ভারী ভাব, ব্যথা বা হালকা ঝিনঝিনে অনুভূতিও হতে পারে।
শরীর তখন স্তনের টিস্যুতে পরিবর্তন আনে, যাতে ভবিষ্যতে শিশুকে দুধ খাওয়ানো যায়, এ কারণেই এসব লক্ষণ দেখা যায়।
মাসিকের আগে স্তনব্যথা সাধারণ ব্যাপার, তবে গর্ভধারণজনিত স্তনের পরিবর্তনগুলো আরও বেশি তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী হয়।
৩. ক্লান্তি বা ঘুম ঘুম ভাব
অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা ঘুম ঘুম ভাবও গর্ভধারণের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে।
গর্ভধারণের ৪ থেকে ৬ সপ্তাহে অধিকাংশ নারী তীব্র ক্লান্তি অনুভব করেন, এমনকি ভালো ঘুম হলেও।
এটি ঘটে শরীরে প্রোজেস্টেরন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায়, যা শরীরকে শান্ত করে এবং ঘুমের প্রবণতা বাড়ায়।
অনেক সময় গর্ভধারণের মাত্র এক সপ্তাহ পরেই ক্লান্তির লক্ষণ দেখা দিতে পারে, আর সাধারণত ৪ সপ্তাহের দিকে তা আরও বেড়ে যায়।
যদি মাসিক মিস হওয়ার সঙ্গে অস্বাভাবিক ক্লান্তিও দেখা যায়, তবে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার সময় হয়েছে।
৪. বমি বমি ভাব বা স্বাদ-গন্ধে পরিবর্তন
অনেকে মনে করেন বমি বমি ভাব বা ‘মর্নিং সিকনেস’ শুধু গর্ভধারণের পরবর্তী পর্যায়ে (৬ সপ্তাহের পর) দেখা দেয়।
কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভধারণের ৪ সপ্তাহ পর থেকেই অনেক নারীর বমি বমি ভাব শুরু হয়।
এটি শুধুমাত্র সকালে নয়, যেকোনো সময়েই হতে পারে।
শুরুর দিকে শুধু বমি বমি ভাব থাকলেও, পরে বমিও হতে পারে।
এছাড়া অনেক সময় নির্দিষ্ট কিছু খাবার বা গন্ধের প্রতি বিরক্তি দেখা দেয়। মুখে ধাতব স্বাদ বা টক ভাবও অনুভূত হতে পারে।
এসবই শরীরের হরমোন পরিবর্তনের কারণে হয়, যা গর্ভধারণের প্রথমদিকের লক্ষণ হিসেবে স্পষ্ট হয়।
৫. ঘন ঘন প্রস্রাব ও হালকা পেট ব্যথা
মাসিকের সময় ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
তবে গর্ভধারণের সময় শরীরে রক্ত প্রবাহ বেড়ে যায় এবং জরায়ু বড় হতে শুরু করে, এতে মূত্রথলিতে চাপ পড়ে, ফলে প্রস্রাবের পরিমাণ বেড়ে যায়।
সঙ্গে হালকা পেট ব্যথা বা টানাটানি ভাবও হতে পারে, যা নিচের পেট বা তলপেটে অনুভূত হয়।
নিষিক্ত ডিম্বাণুর সংযোগ (ইমপ্ল্যান্টেশন) ও জরায়ুর বৃদ্ধি এই লক্ষণ তৈরি করে।
এই পেট ব্যথা সাধারণ মাসিকের ব্যথার তুলনায় হালকা হয়, তবে অনেক সময় একই ধরনের মনে হতে পারে।
কখন প্রেগন্যান্সি টেস্ট করবেন?
উপরের লক্ষণগুলো থাকলেও, মাসিক মিস না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই ভালো। (অথবা যদি মাসিক অনিয়মিত হয়, তবে আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করুন)
কারণ, গর্ভধারণ হলেও ‘এইচসিজি’ (Human Chorionic Gonadotropin) নামের হরমোনের মাত্রা এত কম থাকতে পারে যে, বাসায় করা প্রেগন্যান্সি টেস্টে তা ধরা নাও পড়তে পারে।
যদিও রক্ত পরীক্ষায় নিশ্চিত হওয়া যায়, তবে সেটিও নির্দিষ্ট মাত্রার ‘এইচসিজি’ ছাড়া পজিটিভ দেখায় না।
আবির