
ছবি: সংগৃহীত
কোলন ক্যানসার, যা কোলোরেক্টাল ক্যানসার নামেও পরিচিত, এটি বৃহৎ অন্ত্র (কলন) বা মলদ্বারে শুরু হওয়া এক ধরনের ক্যানসার। সাধারণত এটি ছোট, অ-ক্যানসারযুক্ত কোষের দল বা পলিপ থেকে শুরু হয়, যা সময়ের সঙ্গে ক্যানসারে রূপ নিতে পারে। বয়স, পারিবারিক ইতিহাস, অক্রিয় জীবনযাপন, স্থূলতা, ধূমপান, মদ্যপান এবং আঁশবিহীন খাদ্যাভ্যাসসহ প্রক্রিয়াজাত ও লাল মাংস বেশি খাওয়ার কারণে এই রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
তবে আশার কথা হলো—সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে এই ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। গবেষণা বলছে, কিছু নির্দিষ্ট ধরনের খাবার নিয়মিত খেলে কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে ভালো ফল পাওয়া যায়।
নিচে এমন ১০টি খাবারের তালিকা দেওয়া হলো, যা কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে কার্যকর:
কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে যেসব খাবার খাবেন:
১. শাকসবজি (পাতাজাতীয় সবজি)
শাকসবজি ফাইবার, ফলেট ও লুটেইন ও ক্যারোটিনয়েডের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর। এটি অন্ত্র পরিষ্কার রাখতে, প্রদাহ কমাতে ও স্বাভাবিক মলত্যাগে সাহায্য করে, ফলে পলিপ বা ক্যানসারের ঝুঁকি কমে।
২. ব্রকোলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি ইত্যাদি (ক্রুসিফেরাস সবজি)
এ ধরনের সবজিতে থাকে সালফোরাফেন নামের একটি উদ্ভিজ্জ উপাদান, যা ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি রোধে কার্যকর। এটি দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ অপসারণেও সাহায্য করে।
৩. পুরো শস্যজাতীয় খাবার (হোল গ্রেইন)
এই ধরনের খাবারে প্রচুর আঁশ থাকে, যা মল ভারী করে এবং সহজে বের করে দেয়। এতে করে অন্ত্রের সঙ্গে বিষাক্ত উপাদানের সংস্পর্শ কম হয় এবং ক্যানসারের সম্ভাবনাও হ্রাস পায়।
৪. ডাল ও মসুরজাতীয় খাবার (লেগিউমস)
ডাল, ছোলা, মসুরের মতো খাবারে রেসিস্ট্যান্ট স্টার্চ ও দ্রবণীয় আঁশ থাকে, যা উপকারী অন্ত্রব্যাকটেরিয়াকে পুষ্টি জোগায় এবং শরীরে ক্যানসারবিরোধী উপাদান তৈরি করে।
৫. বেরি জাতীয় ফল
স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি, ব্ল্যাকবেরি প্রভৃতি ফল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যেমন অ্যান্থোসায়ানিন, এলাজিক অ্যাসিড ও ভিটামিন সি, যা ক্যানসার কোষ গঠনের বিরুদ্ধে কাজ করে।
৬. চর্বিযুক্ত মাছ (ফ্যাটি ফিশ)
স্যামন বা ম্যাকারেলের মতো মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি অন্ত্রের প্রদাহজনিত প্রতিক্রিয়া হ্রাস করে ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে।
৭. রসুন
রসুনে থাকে সালফার যৌগ, যা লিভার এনজাইমকে সক্রিয় করে এবং ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এর অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণও অন্ত্রের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
৮. হলুদ (টারমারিক)
হলুদের উপাদান কারকিউমিন শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এটি ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি ধীর করতে পারে।
৯. দই ও প্রোবায়োটিক খাদ্য
প্রোবায়োটিক খাবার অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে, যা রোগ প্রতিরোধ ও প্রদাহ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বিশেষ করে জীবিত ব্যাকটেরিয়া সমৃদ্ধ দই হজমশক্তি ঠিক রাখতে ও অন্ত্রের ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক।
১০. বাদাম
বাদামে থাকে আঁশ, ভালো চর্বি, সেলেনিয়াম ও ভিটামিন ই-এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা দেহে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আঁশ এবং প্রদাহনাশক উপাদানে ভরপুর এসব খাবার অন্ত্রের স্বাস্থ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং ক্যানসার কোষ গঠনের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
বি.দ্র.: এই প্রতিবেদনটি সাধারণ স্বাস্থ্যবিষয়ক তথ্যের জন্য তৈরি। কোনো রোগ সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা বা মতামতের জন্য অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব