ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

মাইগ্রেনে শুধু মাথা ব্যথা? আপনার চোখ, কান, নাক এমনকি স্বাদও আক্রান্ত হচ্ছে!

প্রকাশিত: ১৯:১০, ১২ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:১১, ১২ জুলাই ২০২৫

মাইগ্রেনে শুধু মাথা ব্যথা? আপনার চোখ, কান, নাক এমনকি স্বাদও আক্রান্ত হচ্ছে!

মাইগ্রেন এক যন্ত্রণাদায়ক, অথচ রহস্যময় স্নায়বিক অসুস্থতা যা কেবল মাথাব্যথা নয়, একাধিক ইন্দ্রিয়কে প্রভাবিত করে আপনার জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে বড় রকমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। অনিয়মিত, তীব্র এবং প্রায়শই পূর্বাভাসহীনভাবে দেখা দেওয়া মাইগ্রেনের কারণে অনেকেই দৈনন্দিন কাজ বা সামাজিক আচার-আচরণে অংশ নিতে ভয় পান।

অনেক মাইগ্রেন রোগীর জন্য উজ্জ্বল আলো, তীব্র শব্দ বা গন্ধ হয়ে উঠতে পারে সরাসরি ট্রিগার। এসব সংবেদনশীল উদ্দীপনা শুধু মাইগ্রেনের লক্ষণ বাড়িয়ে তোলে না, কখনো কখনো সেটাই হয়ে উঠতে পারে তীব্র আক্রমণের সূচনাবিন্দু।

চোখ: আলোতে সংবেদনশীলতা ও দৃষ্টিভ্রম
মাইগ্রেনের সময় অনেকেই ‘ফটোফোবিয়া’ বা উজ্জ্বল আলোতে যন্ত্রণাবোধ অনুভব করেন। অনেকে দৃষ্টিভ্রমের শিকার হন, যাকে বলা হয় ‘ভিজ্যুয়াল অরা’। এতে দেখা দিতে পারে:

দৃষ্টির মধ্যে অন্ধকার বা ফাঁকা অংশ,ঝিলমিল, চকমকে আলো,জ্যামিতিক প্যাটার্ন বা আড়াআড়ি রেখা,এক চোখে আংশিক বা সম্পূর্ণ অন্ধত্ব,‘রেটিনাল’ বা ‘অকুলার’ মাইগ্রেনও হতে পারে, যাতে সাধারণত এক চোখে ১০ থেকে ২০ মিনিটের জন্য দৃষ্টিবিভ্রাট হয়।

কান: শব্দে অতিসংবেদনশীলতা
৮০ শতাংশের বেশি মাইগ্রেন রোগী ভোগেন ‘ফোনোফোবিয়া’তে—অর্থাৎ কণ্ঠস্বর, ট্রাফিক, নির্মাণকাজের শব্দ বা দরজা বন্ধের শব্দে মাথাব্যথা বাড়ে। ‘ভেস্টিবুলার মাইগ্রেন’ নামে এক ধরনের মাইগ্রেন শ্রবণ এবং ভারসাম্যবোধে ব্যাঘাত ঘটায়। এর লক্ষণ:

মাথা ঘোরানো বা ভার্টিগো,ভারসাম্য হারানো,মাথা নড়ালেই মাথা ঝিমঝিম করা

ঘ্রাণ: গন্ধে অস্বস্তি
‘অসমোফোবিয়া’ বা গন্ধে সংবেদনশীলতা মাইগ্রেন রোগীদের জন্য অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা। সাধারণত যেসব গন্ধ সমস্যা সৃষ্টি করে:,
ধোঁয়া বা সিগারেটের গন্ধ,ব্লিচ বা ক্লিনারের কেমিক্যাল গন্ধ,পারফিউম বা প্রসাধন দ্রব্যের সুগন্ধ,রান্নার তীব্র গন্ধ।

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রায় ২৫ শতাংশ মাইগ্রেন রোগী গন্ধে অতিসংবেদনশীলতা অনুভব করেন।

স্পর্শ: ত্বকে জ্বালাপোড়া বা অবস
মাইগ্রেনের ফলে স্পর্শ সংক্রান্ত অনুভূতির উপরও প্রভাব পড়ে। অরা পর্যায়ে অনেক রোগীর মধ্যে দেখা দেয়:

ত্বকে অতিসংবেদনশীলতা,একপাশের মুখ বা হাতে অবশভাব,‘পিন ও নিডল’-এর মতো অনুভূতি,মাইগ্রেনের মধ্যবর্তী সময়েও কেউ কেউ গা শিরশির ভাব, ঠান্ডা বা গরমে তীব্র প্রতিক্রিয়া অনুভব করেন।

স্বাদ: স্বাদ গ্রহণে পরিবর্তন
মাইগ্রেনের সময় স্বাদের অনুভূতিতে পরিবর্তন হতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা গন্ধে অতিসংবেদনশীলতা অনুভব করেন, তাঁদের অনেকেই মিষ্টি ও লবণাক্ত স্বাদে সংবেদন হারান। তবে এই বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।

মাইগ্রেনের ট্রিগার কী কী হতে পারে?
যেমন মাইগ্রেন ইন্দ্রিয়জ প্রভাব ফেলে, তেমনি কিছু ইন্দ্রিয়জাত উদ্দীপনাও মাইগ্রেনকে ট্রিগার করতে পারে। যেমন:

রেড ওয়াইন বা অ্যালকোহল,সংরক্ষিত খাবার, চকলেট,অনিদ্রা বা ঘুমের ব্যাঘাত,ঝলকানো আলো বা স্ক্রিন,মাসিক চক্রের হরমোন পরিবর্তন,লাউড মিউজিক বা হঠাৎ শব্দ,খাবার না খেয়ে থাকা,মানসিক চাপ বা দুঃখজনক ঘটনা,ধোঁয়া, পারফিউম বা রাসায়নিক গন্ধ।

মাইগ্রেন কমাতে যা করবেন
ঘরোয়া ব্যবস্থা
আক্রমণের শুরুতে এক কাপ কফি খেতে পারেন,
বমি হলে পানি বা তরল গ্রহণ করুন,অন্ধকার, ঠান্ডা ও শান্ত ঘরে বিশ্রাম নিন,কপালে ঠান্ডা কাপড় বা আইস প্যাক ব্যবহার করুন।

ওষুধ
বমি প্রতিরোধী ওষুধ (যেমন ক্লোরপ্রোমাজিন বা মেটোক্লোপ্রামাইড)

সিজিআরপি ব্লকার ওষুধ (যেমন কিউলিপটা)

আর্গট গ্রুপের ওষুধ (যেমন এরগোমার, মাইগ্রানাল)

সাধারণ ব্যথানাশক (যেমন এক্সিড্রিন, মটরিন)

ট্রিপটান গ্রুপের ওষুধ (যেমন ইমিট্রেক্স, জোমিগ)

মাইগ্রেন প্রতিরোধে সহজ কিছু পরামর্শ
প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান ও উঠুন

নিয়মিত ব্যায়াম করুন, তবে অতিরিক্ত পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন

মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন বা শ্বাসব্যায়াম করুন

মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার সীমিত করুন

একটি মাইগ্রেন ডায়েরি রাখুন—কোন কী খাবার বা আচরণে আক্রমণ হয়, তা নোট করুন

তীব্র আলো, শব্দ ও গন্ধ থেকে দূরে থাকুন

আবহাওয়ার পরিবর্তনে সচেতন থাকুন

রিবোফ্লাভিন বা কো-কিউ১০ জাতীয় সাপ্লিমেন্ট সেবনের পরামর্শ নিতে পারেন


মাইগ্রেনের চিকিৎসা সহজ নয় কিন্তু অসম্ভবও নয়। নিজের শরীরকে বোঝা, নিয়ম মেনে চলা এবং ধৈর্য ধরার মাধ্যমে আপনি মাইগ্রেনের প্রকোপ অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারেন। নিজের জন্য সঠিক পথটি খুঁজে পেলে জীবনযাত্রায় ফিরে আসবে নিয়ন্ত্রণ, শান্তি আর আত্মবিশ্বাস।

 

 


সূত্র:https://tinyurl.com/2kkd5n34

আফরোজা

×