
গত পাঁচদিন ধরে কক্সবাজার সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে ছুটে বেড়াচ্ছেন জেসমিন আক্তার। একমাত্র সন্তানকে খুঁজে পাওয়ার আশায় অশ্রু শুকিয়ে গেছে তার। গেল মঙ্গলবার হিমছড়ি সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী অরিত্র হাসান।
অরিত্রের দুই বন্ধুর মরদেহ উদ্ধার হলেও এখনো তার খোঁজ মেলেনি।
মৃদু কণ্ঠে জেসমিন আক্তার বলেন, “ছেলেটাকে এই অথৈ সাগরে রেখে বাসায় এক মুহূর্তও থাকতে পারবো না। যেকোনো অবস্থাতেই হোক আমার ছেলেটাকে ফিরে পেতে চাই। আর কিছুই চাই না।”
কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, “এখন একটাই আশা—আমার ছেলে ফিরে আসুক। বুকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চাই।”
মঙ্গলবার সকালে সাগরে নামার আগে মাকে শেষ একটি ছবি পাঠিয়েছিল অরিত্র। সেই স্মৃতি জানিয়ে জেসমিন বলেন, “ছবিটা দেখে ছোট্ট একটা মেসেজ দিই। কিন্তু সে আর রিসিভ করতে পারেনি। রাতে একটু রাগও করেছি, বলেছি—‘বাবা তুমি না জানিয়ে সেখানে গেছো, সাবধানে থেকো।’”
প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষে সোমবার কক্সবাজার বেড়াতে আসেন অরিত্র ও তার পাঁচ বন্ধু। পরদিন সকালে তিনজন হিমছড়ি সৈকতে গোসলে নেমে ভেসে যান। কিছুক্ষণ পর সহপাঠী সাদমান রহমানের মরদেহ পাওয়া যায়, আরেকদিন পর নাজিরারটেক পয়েন্টে ভেসে আসে আসিফ আহমদের মরদেহ।
অরিত্রের বাবা সাকিব হাসান একজন পেশাদার সাংবাদিক। ঢাকার ইংরেজি দৈনিক নিউ এজ-এ কাজ করেন। সারাজীবন মানুষের দুঃখ নিয়ে লিখলেও আজ নিজেই অসহায়।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যে রিসোর্টে আমার ছেলে উঠেছিল, সেখানে কোনো নিরাপত্তা ছিল না। কোনো লাইফ গার্ড ছিল না। আর কত বাবা-মায়ের বুক খালি করলে ব্যবস্থা নেবে রিসোর্ট মালিকরা?”
তিনি যোগ করেন, “১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত। মানুষ বিমোহিত হবেই! কিন্তু এতো বড় জায়গায় যদি নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে এভাবে আরও কত প্রাণ হারাবে?”
অরিত্রের ফুফু বলেন, “ছেলেটা আমাদের চোখের মণি। কোনো অবস্থাতেই আমরা তাকে এখানে ফেলে যেতে পারবো না। তার দেহটাও হলেও চাই।”
উদ্ধার অভিযানে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে। সী-সেইফ লাইফ গার্ডের সাথে যুক্ত হয়েছেন বিমান বাহিনীর একটি দল। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, “সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে। উপকূলজুড়ে অভিযান অব্যাহত আছে।”
মিমিয়া