
.
সড়কের পিচ ও পাথর ওঠে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। কোথাও পানি-কাদা জমে আছে। এসব স্থানে ভারি যানবাহন চলতে গিয়ে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে। সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। সড়কটি বেহাল হওয়ায় চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন ৩ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ।
এই অবস্থা লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালালবাজার তেমুহনী থেকে মীরগঞ্জ সড়কের। ৯ কিলোমিটার সড়কের প্রায় ৭ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং ওঠে ছোট-বড় গর্তে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা নন্দনপুর থেকে চৌধুরী বাজার ও কাফিলাতলি থেকে মীরগঞ্জ বাজার পর্যন্ত।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কের ৯ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অসংখ্য স্থানে কার্পেটিং ওঠে ছোট-বড় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পর এসব খানাখন্দে পানি জমে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা-ভ্যান, সিএনজিচালিত অটোরিক্সা, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন। যানবাহনের ধীরগতির কারণে প্রায়ই সড়কটিতে যানজট লেগে থাকে।
স্থানীয়রা বলছেন, রাস্তায় অবস্থা এত খারাপ। প্রতিদিনই কোনো না কোনো গাড়ি গর্তে আটকে যায়। তখন যানজট হয়। রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। চালকরা যাত্রীদের নামিয়ে দিতে হয়। এতে দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রীরা। বিশেষ করে অসুস্থ রোগীদের নিয়ে দুর্ভোগে বেশি পড়তে হয়।
আরও বলেন, সড়কটির এমন অবস্থা, কোনো লোক অসুস্থ হলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাব সেটিও এখন দুষ্কর। ভাঙা সড়কে ঝাঁকুনি খেয়ে রোগীরা আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। এছাড়া সড়কে বড় বড় গর্ত থাকায় অ্যাম্বুলেন্স আসতে চায় না। সড়কটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানাই, যেন দ্রুত সড়কটি সংস্কার করা হয়।
সিএনজি চালক ইউসুফ বলেন, ভাঙাচোরা রাস্তায় সিএনজি চালাতে গিয়ে প্রায় নাটবল্টু খুলে পড়ে যায়। এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে ৯ কিলোমিটার রাস্তা যেতে। এতে গ্যাস বেশি খরচ হয়। কিন্তু সবসময় যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা সম্ভব হয় না। বেশিরভাগ দিনই যা আয় করি খরচ তার চেয়ে বেশি হয়ে যায়।
স্বাধীনতা স্পোটিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) ফয়সাল কবির বলেন, এই সড়কের বেহাল অবস্থা অনেক দিন ধরেই। খানাখন্দে ভরা সড়কটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। দ্রুত সংস্কার না হলে ভোগান্তি বাড়বে তিন উপজেলার লাখো মানুষের।
আরো বলেন, সড়কটির দুই পাশে রয়েছে সরকারি-বেসরকারি মিলে প্রায় ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ছোট-ছোট ৬টি বাজার। এছাড়া সদরের উত্তর ও দক্ষিণ হামছাদী এবং রায়পুর উপজেলার বামনি ইউনিয়নের লোকজন জেলা সদরে যাতায়াত করে। এছাড়া চাঁদপুর ও নোয়াখালীসহ কয়েকটি জেলার গাড়িও সড়কটিতে চলাচল করে থাকে।
চৌধুরী বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল বলেন, নোয়াখালী ও চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলার গাড়ি চলাচল করে সড়কটি দিয়ে। দুই-এক বছর পরপরই সড়কটি মেরামত করা হয়। তবে অল্প কয়েকদিনে এটি ভেঙে যায়। বছরে চার মাস সড়কটি ভালো থাকলে, ভাঙা থাকে আট মাস। এছাড়া সড়কের অবস্থা বেহাল হওয়ায় দোকানের মালামাল আনা-নেওয়ায় পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। তবে গ্রাহকদের থেকে বাড়তি টাকা নেওয়া যায় না। এতে পূর্বের চেয়ে লাভ কমেছে কয়েকগুণ।
নন্দনপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম বলেন, দুই-তিন বছর পরপর সড়কটি সংস্কার হয়। তবে কাজ নিম্নমানের হওয়ায় সেটি স্থায়ী হয়না। বৃষ্টি হতেই সড়কের বিটুমিন ও খোয়া ওঠে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। এমন বেহাল অবস্থা হাটাও কষ্টকর। সড়কটিতে চলাচল করা শিক্ষার্থীরা বেশিরভাগ দিনই নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হতে পারে না। গাড়ি না পাওয়ায় অনেকে স্কুলেও আসে না। সমস্যাটি সমাধানে সড়কটি টেকসই সংস্কার করা জরুরি।
এবিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম বলেন, রাস্তাটি খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ইতোমধ্যে সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু হবে।
প্যানেল