ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৮,০০০ ছাড়াল, যুদ্ধবিরতির আশায় ভাটা

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৪ জুলাই ২০২৫

গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৮,০০০ ছাড়াল, যুদ্ধবিরতির আশায় ভাটা

ছ‌বি: সংগৃহীত

ইসরায়েলের টানা হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৮,০০০ ছাড়িয়ে গেছে। রবিবার ভোর থেকে নতুন করে প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজা সিটির একটি ব্যস্ত বাজারে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১২ জন মারা যান। নিহতদের মধ্যে ছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক আহমাদ কান্দিল। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

গাজা সরকারের মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ইসরায়েল ও ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে কাজ করা নিরাপত্তাকর্মীরা ইচ্ছাকৃতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করছে। এক বিবৃতিতে তারা যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)-এর কেন্দ্রগুলোকে "মৃত্যুকূপ" বলে উল্লেখ করে। বিবৃতিতে গাজায় চলমান পরিস্থিতিকে "যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় গণহত্যার প্রকৌশল" বলা হয়েছে।

GHF কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে অন্তত ৮০৫ জন নিহত ও ৫,২৫০ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে ভয়াবহ এক হামলা হয় নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে। সেখানকার এক পানির লাইনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা শিশুদের ওপর ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১০ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই শিশু। আহত হন আরও ১৭ জন। আল-আওদা হাসপাতালের ডা. আহমেদ আবু সাইফান এই তথ্য জানান। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা একজন যোদ্ধাকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছিল, কিন্তু কারিগরি ত্রুটির কারণে ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। তবে এই দাবি স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করা যায়নি।

জ্বালানির মারাত্মক সংকটে গাজায় পানি সংকট আরও তীব্র হয়েছে। অনেক ডেসালিনেশন ও পানিশোধনাগার বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ পথে দীর্ঘ পথ হেঁটে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৫৮,০২৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও ১,৩৮,৫০০ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ জানান, শত শত মানুষ GHF-এর ত্রাণকেন্দ্রে যাওয়ার সময় প্রাণ হারাচ্ছেন।

“উত্তর গাজা থেকে রাফা পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিমি পথ হেঁটে অনেকে একটিমাত্র ত্রাণের প্যাকেট সংগ্রহের জন্য যাচ্ছেন,” বলেন মাহমুদ। “কিন্তু সেখানেও তাদের ইসরায়েলি গুলির মুখে পড়তে হচ্ছে।”

রবিবার ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) ও UNRWA সহ আটটি জাতিসংঘ সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, গাজায় জরুরি ভিত্তিতে জ্বালানি প্রবেশ করতে না পারলে, জীবনরক্ষাকারী বিভিন্ন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।

“এই জ্বালানির অভাবে ২১ লাখ মানুষের জীবন ঝুঁকিতে পড়বে,” বলা হয় বিবৃতিতে। “অবিলম্বে ও পর্যাপ্ত পরিমাণে জ্বালানি প্রবেশের অনুমতি দিতে হবে।”

এদিকে, যুদ্ধ থামাতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরালো হলেও আশার আলো ম্লান হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য দূত স্টিভ উইটকফ রবিবার বলেন, তিনি যুদ্ধবিরতি আলোচনা নিয়ে ‘আশাবাদী’। তবে কাতার সফরের আশপাশে কিছু আলোচনা হলেও, মূল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এখনও পক্ষগুলোর মতবিরোধে আটকে আছে।

ইসরায়েলের একজন কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু রবিবার রাতে মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকেন। আলোচনায় যুদ্ধবিরতি, সেনা প্রত্যাহার এবং গাজায় বন্দি রাখা ব্যক্তিদের মুক্তি নিয়ে আলোচনা হবে।

ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদের ডেপুটি নেতা মোহাম্মদ আল-হিন্দি আল জাজিরাকে বলেন, “আমরা একটি কাঠামোগত চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছি—যার তিনটি মূল পয়েন্ট: আগ্রাসন থামানো, গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার, ও নিরাপদভাবে ত্রাণ বিতরণ। কিন্তু ইসরায়েল মূল বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি না দিয়ে সরাসরি বন্দিদের ইস্যুতে যেতে চাচ্ছে।”

তিনি বলেন, “আমরা এমন কোনো চুক্তি স্বাক্ষর করব না, যা আমাদের আত্মসমর্পণের শামিল।”

এদিকে, ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা জোনাতান উরিচের বিরুদ্ধে গোপন সামরিক তথ্য ফাঁসের অভিযোগে মামলা হতে পারে বলে জানিয়েছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারাভ-মিয়ারা।

জানা যায়, গত আগস্টে গাজায় ছয় ইসরায়েলি বন্দির মৃত্যুর পর ‘বিল্ড’ নামের একটি জার্মান পত্রিকায় গোপন তথ্য ফাঁস হয়। উরিচ ও তার এক সহকারী সেই তথ্য ফাঁস করেছেন বলে অভিযোগ। এতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং সরকারের প্রতি ক্ষোভ বাড়ে।

নেতানিয়াহু এই তদন্তকে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। আর উরিচ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি নেতানিয়াহুর বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল, যেখানে হামাসকে যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের জন্য দায়ী করা হয়।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুই মাসের এক যুদ্ধবিরতির সময় ৩৮ জন বন্দি মুক্তি পেয়েছিল। কিন্তু পরে ইসরায়েল ফের সামরিক অভিযান শুরু করে।

সূত্র: আল জাজিরা

এম.কে.

×