
ছবি: সংগ্রহীত।
পশ্চিমঘাট (Western Ghats) ভারতের এক অনন্য জীববৈচিত্র্যপূর্ণ অঞ্চল, যা ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী এলাকা হিসেবেও স্বীকৃত। এই পাহাড়ি বনাঞ্চলে বহু দুর্লভ ও স্থানীয় পাখির দেখা মেলে, যাদের অনেককেই পৃথিবীর অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। নিচে পশ্চিমঘাট অঞ্চলে দেখা যায় এমন ৮টি অসাধারণ পাখির বর্ণনা তুলে ধরা হলো:
১. মালাবার ট্রোগন (Malabar Trogon):
উজ্জ্বল রঙের জন্য পরিচিত এই পাখি চিরহরিৎ বনাঞ্চলের ছায়াযুক্ত গাছের নিচে বসবাস করে। পুরুষ পাখির লাল পেট ও কালো মাথা একে সহজেই চিনে নিতে সাহায্য করে।
২. নীলগিরি ফ্লাইক্যাচার (Nilgiri Flycatcher):
শুধু পশ্চিমঘাটের উচ্চভূমিতে পাওয়া যায় এই ছোট, গভীর নীল পালকের পাখিটি। এদের সুরেলা ডাক এবং শোলা বনাঞ্চল ও ঢালু বনভূমিতে বিচরণ করার প্রবণতা রয়েছে।
৩. গ্রেট হর্নবিল (Great Hornbill):
ভারতের অন্যতম বৃহৎ বনপাখি এটি। বিশাল হলুদ রঙের ঠোঁট ও মাথার ওপরের ক্যাসক (casque)-এর জন্য পরিচিত। ঘন জঙ্গলে বাস করে এবং ফলপূর্ণ গাছের মধ্যে দিয়ে ওড়ে।
৪. হোয়াইট-বেলিড ট্রিপাই (White-bellied Treepie):
এই কোলাহলপ্রিয় পাখিটি শুধু পশ্চিমঘাটেই পাওয়া যায়। এর লম্বা লেজ, সাদা পেট এবং কালো মুকুট একে সহজেই আলাদা করে চিনিয়ে দেয়। সাধারণত দলবদ্ধভাবে বনপ্রান্তে ও গাছের উঁচু ডালে দেখা যায়।
৫. মালাবার হুইসলিং থ্রাশ (Malabar Whistling Thrush):
"হুইসলিং স্কুলবয়" নামেও পরিচিত এই পাখি মানুষের হুইসেলের মতো সুরেলা ডাকে। বনাঞ্চলের ঝর্ণার ধারে পাওয়া যায় একে। এর পালক চকচকে নীল-কালো এবং দেহে কোবাল্ট রঙের ঝিলিক থাকে।
৬. শ্রীলঙ্কা ফ্রগমাউথ (Sri Lanka Frogmouth):
অসাধারণ ছদ্মবেশে পারদর্শী, এই নিশাচর পাখি শুকনো পাতার মতো রঙের পালকে নিজেকে বনপাতায় মিশিয়ে ফেলে। চওড়া ও চ্যাপ্টা ঠোঁটবিশিষ্ট এই পাখি দিনের বেলায় গাঢ় ছায়াযুক্ত জায়গায় নিঃশব্দে বসে থাকে।
৭. ইন্ডিয়ান পিট্টা (Indian Pitta):
রঙিন মাটিভিত্তিক পাখি, যার দেহে সবুজ, নীল ও কমলা পালক একত্রে থাকে। এটি গ্রীষ্মকালে পশ্চিমঘাটে আসে। এর দুই-স্বরের ডাক আগে শোনা যায়, পরে দেখা মেলে।
৮. গ্রে জাঙ্গলফাউল (Grey Junglefowl):
গৃহপালিত মুরগির বন্য পূর্বপুরুষ এই পাখিটি পশ্চিমঘাটের স্থানীয় প্রজাতি। প্রজনন মৌসুমে পুরুষ পাখির উজ্জ্বল গলা পালক এবং প্রতিধ্বনিত গর্জন বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়।
পশ্চিমঘাটের এই পাখিগুলো শুধু যে প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তা-ই নয়, বরং স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই প্রজাতিগুলোর সংরক্ষণে সক্রিয় অংশগ্রহণ আমাদের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
মিরাজ খান