ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

১৪ জুলাইয়ের সেই রাত: শেখ হাসিনার বিতর্কিত বক্তব্যে ফুঁসে ওঠে রাজপথে ছাত্রবিদ্রোহ! 

প্রকাশিত: ১৬:২৪, ১৪ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৬:২৫, ১৪ জুলাই ২০২৫

১৪ জুলাইয়ের সেই রাত: শেখ হাসিনার বিতর্কিত বক্তব্যে ফুঁসে ওঠে রাজপথে ছাত্রবিদ্রোহ! 

আজ ১৪ জুলাই। ২০২৪ সালে এই দিনটি ছিল রবিবার, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম দৃশ্যমান প্রতিবাদ। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গর্জে ওঠা দিনগুলোর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ মন্তব্য ঘিরে ক্ষুব্ধ হয়ে মধ্যরাতেই রাজপথে নামেন শিক্ষার্থীরা। এই বক্তব্যের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই অভ্যুত্থান ঘটে য্য় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আয়োমী লীগের দুঃশাসনের বিপরীতে সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের দুঃসাহসিক ভূমিকায় কোটা সংস্কার আন্দোলন বিপ্লবে রূপ নিতে শুরু করে।

এই বিক্ষোভ ছিল কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে সরাসরি শেখ হাসিনা ও তার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের প্রথম প্রকাশ্য ও সংঘবদ্ধ অবস্থান। এর আগে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিসহ চার দফা দাবিতে ছাত্রদের মধ্যে আন্দোলন থাকলেও সরাসরি শেখ হাসিনাকে ঘিরে এমন প্রতিবাদ দেখা যায়নি।

২০২৪ সালের ১৪ জুলাই বিকেলে গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেন- ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-নাতি-পুতিরা কেউ মেধাবী না, যত রাজাকারের বাচ্চারা মেধাবী? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা চাকরি পাবে?’এই বক্তব্য প্রকাশের পর মুহূর্তেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, আর ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে।

বক্তব্য প্রচারিত হওয়ার কিছু ঘণ্টার মধ্যেই রাত ১০টা থেকে বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থীরা দলে দলে রাস্তায় নামতে শুরু করেন। রাত ১২টার মধ্যেই হাজারো শিক্ষার্থী সমবেত হন রাজু ভাস্কর্যের সামনে। কেউ কেউ সরাসরি যান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে, সেখানে প্রতিবাদী স্লোগানে মুখরিত হয় চারপাশ।

রাত গভীর হলেও বিক্ষোভ থামে না। রাত ২টা পর্যন্ত টিএসসিতে অবস্থান নেন প্রায় হাজার খানেক শিক্ষার্থী। একপর্যায়ে অনেক শিক্ষার্থী হলে ফিরে গেলেও, ঠিক সেই সময়ে বুয়েট থেকে প্রায় দুইশ’ শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে হাজির হন ঢাবি ক্যাম্পাসে। টিএসসি চত্বর ঘুরে আবার তারা ফিরে যান নিজ নিজ ক্যাম্পাসে।

তবে সেদিনের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা ছিল নারী শিক্ষার্থীদের তালা ভেঙে রাস্তায় নেমে আসা।বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, কবি সুফিয়া কামাল হল, শামসুন্নাহার হল ও রোকেয়া হলের ছাত্রীদের অংশগ্রহণে আন্দোলন আরও বিস্তৃত হয়ে পড়ে। অনেক হলে তালা ভাঙতে হয়েছিল, কেউ কেউ প্রভোস্টের অনুমতিতে বের হন। তাদের হাতে ছিল থালা, বাটি, চামচ আর মুখে ছিল আগুন ঝরানো স্লোগান।

সেই রাতে ঢাবি প্রাঙ্গণে ধ্বনিত হচ্ছিল-‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘তুমি কে আমি কে? রাজাকার, রাজাকার’, ‘কে বলেছে, কে বলেছে? স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’, ‘কোটা না মেধা? মেধা মেধা’।

১৪ জুলাইয়ের সেই রাত আর শুধু বিক্ষোভের রাত ছিল না। সেটি হয়ে উঠেছিল এক বিস্ফোরণের শুরু, এক সরকারবিরোধী গণআন্দোলনের বাস্তব রূপরেখা। এই তারিখটি এখন প্রতিরোধের প্রতীক, প্রতিবাদের চূড়ান্ত ভাষা।

আফরোজা

×