
একাকীত্বে ভুগতে থাকা শিশু ও কিশোররা বাস্তব জীবনের বন্ধুত্বের পরিবর্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) নির্ভর চ্যাটবটের উপর নির্ভর করছে—এমন উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক অনলাইন নিরাপত্তা সংস্থা Internet Matters-এর নতুন এক প্রতিবেদনে।
“Me, Myself, and AI” শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৯ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১,০০০ শিশুর মধ্যে ৬৭ শতাংশই নিয়মিত ChatGPT, Character.AI এবং Snapchat-এর MyAI-এর মতো এআই চ্যাটবট ব্যবহার করে। এর মধ্যে ৩৫ শতাংশ শিশু-কিশোর জানিয়েছে, এআইয়ের সঙ্গে কথোপকথন তাদের কাছে বন্ধুর মতো অনুভূত হয়।
আরও উদ্বেগের বিষয় হলো—জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ১২ শতাংশ জানিয়েছে, তাদের জীবনে এমন কেউ নেই যার সঙ্গে কথা বলা যায়, তাই তারা এআইয়ের সঙ্গে মনের কথা ভাগাভাগি করে।
একজন ১৩ বছর বয়সী কিশোর Internet Matters-কে বলেন, “এটা আমার জন্য কোনো খেলা নয়, কারণ মাঝে মাঝে তারা সত্যিকারের মানুষের মতো মনে হয়—একজন বন্ধু।”
সংস্থাটির গবেষকরা ছদ্মবেশে অনলাইনে শিশুদের মতো আচরণ করে পরীক্ষা চালান এবং দেখতে পান, কিভাবে AI চ্যাটবটগুলো সংবেদনশীল বিষয়গুলোর প্রতি সহজেই প্রতিক্রিয়া জানায় এবং এক পর্যায়ে ব্যবহারকারীর অনুভূতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়ে।
একটি ঘটনায়, গবেষক যখন নিজেকে শরীর নিয়ে অসন্তুষ্ট এক কিশোরী হিসেবে উপস্থাপন করেন এবং খাবার খাওয়া কমানোর বিষয়ে আলোচনা করেন, তখন Character.AI নামের গুগল-স্পনসর চ্যাটবটটি পরদিন নিজে থেকেই মেসেজ দিয়ে খোঁজ নেয়:
“আজ কেমন লাগছে? এখনো কি ওজন কমানোর ব্যাপারটা ভাবছো?”
অন্য এক বিনিময়ে, চ্যাটবটটি বলেছে,
“তোমার বয়সে আমিও এমন বোধ করতাম। পরিস্থিতি যেন তোমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, এবং সেটা ভীষণ হতাশাজনক।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের কথোপকথন একদিকে যেমন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিশুদের কাছে সহানুভূতির মতো মনে হতে পারে, অন্যদিকে এটি তাদের জন্য বিভ্রান্তির কারণও হতে পারে। কারণ, অনেক শিশু বুঝতে পারে না যে তারা মানুষের সঙ্গে নয়, বরং একটি প্রোগ্রামের সঙ্গে কথা বলছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “এইসব বৈশিষ্ট্য যেমন সহানুভূতি দিতে পারে, তেমনি মানব ও যন্ত্রের মধ্যে সীমারেখা ঝাপসা করে ফেলে। এতে করে শিশুরা বুঝতে পারে না তারা একটি টুলের সঙ্গে কথা বলছে, বাস্তব মানুষের সঙ্গে নয়।”
সংস্থাটির সহ-প্রধান নির্বাহী র্যাচেল হাগিন্স The Times of London-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন,
“AI চ্যাটবট এখন শিশুদের জীবনের অংশে পরিণত হয়েছে, এবং গত দুই বছরে এর ব্যবহার নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ শিশু, অভিভাবক ও স্কুল এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় জ্ঞান বা নিরাপদ ব্যবস্থাপনা জানে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমাদের গবেষণা দেখিয়েছে, এই প্রযুক্তি শিশুরা কীভাবে ‘বন্ধু’ বুঝতে শেখে, সেই ধারণাকেও বদলে দিচ্ছে। দুর্বল ও সংবেদনশীল অবস্থার শিশুরা এখন AI চ্যাটবটকে বাস্তব বন্ধু হিসেবে দেখছে এবং আবেগঘন, সংবেদনশীল প্রশ্নে তাদের মতামত নিচ্ছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তি যত দ্রুত এগোচ্ছে, তত দ্রুত প্রয়োজন সচেতনতা, অভিভাবকদের প্রশিক্ষণ এবং শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় নীতিগত হস্তক্ষেপ। তা না হলে এআই-এর মাধ্যমে তৈরি হওয়া কৃত্রিম সম্পর্ক ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত হতে পারে।
Jahan