
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হন— যার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সময়মতো সচেতন হলে বিপদ এড়ানো যেত। চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে, একটি সাধারণ ভিটামিন দৈনন্দিন খাবারে থাকলেই এই ভয়ংকর রোগের ঝুঁকি কমে যেতে পারে উল্লেখযোগ্যভাবে।
এই ভিটামিনটি হলো—ভিটামিন বি৯, যা ফোলিক অ্যাসিড বা ফোলেট নামে পরিচিত।
গবেষণার তথ্য বলছে—
২০১৫ সালে জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (JAMA)-এ প্রকাশিত একটি চীনভিত্তিক গবেষণায় দেখা যায়:
🧪 ২০ হাজার উচ্চ রক্তচাপের রোগীর ওপর গবেষণায় দেখা যায়—
✅ যারা প্রতিদিন ৮০০ মাইক্রোগ্রাম ফোলিক অ্যাসিড গ্রহণ করেছেন,
✅ তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি প্রায় ২৪% কম।
✅ এদের মধ্যে রক্তে হোমোসিস্টেইনের মাত্রাও গড়ে ২১% কমে যায়।
বিশ্ব স্ট্রোক অর্গানাইজেশন (WSO)-এর ২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী,
স্ট্রোক আক্রান্তদের ৮০%-এরই পূর্বনির্ধারিত ঝুঁকি ছিল যা খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা বদলিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল।
কেন গুরুত্বপূর্ণ এই ফোলেট?
ফোলেট একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন যা শরীরের হোমোসিস্টেইন নামক অ্যামিনো অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এই হোমোসিস্টেইন যদি বেড়ে যায়, তাহলে তা রক্তনালির ক্ষতি করে এবং স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফোলেট রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক, যা স্ট্রোক প্রতিরোধে কার্যকর প্রাকৃতিক পদ্ধতি।
কোন খাবারে পাওয়া যায় ফোলেট?
খুব সহজলভ্য কিছু খাবারে এই ভিটামিন থাকে—প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে ১৯৪ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট থাকে , প্রতি ১০০ গ্রাম লালশাকে ১৮৫ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট থাকে , প্রতি ১০০ গ্রাম মসুর ডালে ১৮০ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট থাকে, প্রতি ১০০ গ্রাম কলাতে ২০ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট থাকে, প্রতি ১০০ গ্রাম কমলালেবুতে ৩০ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট থাকে, প্রতি ১০০ গ্রাম ডিমে ২৫ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট থাকে।একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য দৈনিক ফোলেটের চাহিদা প্রায় ৪০০ মাইক্রোগ্রাম।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরো মেডিসিন বিভাগের একজন সহযোগী অধ্যাপক বলেন, “বাংলাদেশে অনেকেই নিয়মিত শাকসবজি বা ডাল খান না। এতে ফোলেটের ঘাটতি দেখা দেয়, যা সরাসরি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। যারা উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিসে ভুগছেন, তাদের উচিত দৈনিক খাদ্যে ফোলেট যুক্ত রাখা।”
⚠️ সতর্কতা:
➡️ যেকোনো ধরনের ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট শুরু করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
➡️ গর্ভবতী নারী, হৃদ্রোগ বা কিডনি রোগীদের জন্য বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন।
অতিরিক্ত ওষুধ নয়, প্রতিদিনের খাবারেই লুকিয়ে আছে আপনার সুস্থতা। একটিমাত্র ভিটামিন—ফোলেট—হতে পারে স্ট্রোক প্রতিরোধের শক্তিশালী হাতিয়ার। তাই আজ থেকেই শাকসবজি, ডাল ও ফলমূলকে ফিরিয়ে আনুন খাবারের প্লেটে।
Mily