
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান সময়ে গল্পের ছলে বা সৎ-অসৎ উদ্দেশ্যে সমাজে মিথ্যা, অর্ধসত্য ও কাল্পনিক তথ্যের বিস্তার প্রতিদিনের নিয়মিত ঘটনা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে গুজব ছড়ানোর প্রবণতা।এতে সাধারণ মানুষ বুঝে উঠতে পারছে না কোন তথ্য সত্য আর কোন তথ্য মিথ্যা। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব অগ্রগতি এবং স্মার্টফোনের সহজলভ্যতায় আজ মানুষ মুহূর্তেই অসংখ্য তথ্যের মুখোমুখি হচ্ছে। ৮০-এর দশকে প্রখ্যাত যোগাযোগ তাত্ত্বিক মার্শাল ম্যাকলুহান যে “গ্লোবাল ভিলেজ”-এর কথা বলেছিলেন, তা আজ মানুষের হাতের মুঠোয় এসে গেছে। তবে এই সুবিধার পাশাপাশি বাড়ছে বিপদের ঝুঁকিও। কারণ, তথ্যের অতিপ্রবাহের এই যুগে অনেক সময় সত্য-মিথ্যার ভেদরেখা মুছে যায়। এর ফলে সংঘাত, সহিংসতা এমনকি প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করার প্রবণতা আরও বেড়ে যায় Vio3 বা Chat GPT এর মতো Ai আসার পর থেকে।যেমন সাম্প্রতিক ইরান-ইজরাইল যুদ্ধকে কেন্দ্র করে একটা ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে ফেইসবুকে।যেখানে দেখা যায় ইজরাইলিরা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছে।কিন্তু “RumorBreaker” ফেক্ট চেক করে দেখতে পায় এটি Ai দিয়ে বানানো ভিডিও ।
ফ্যাক্টচেকিংয়ের গুরুত্ব
বিভিন্ন গবেষণা বলছে, সোশ্যাল মিডিয়ার ‘ইকো চেম্বার’ বা প্রতিধ্বনি-কক্ষে আমরা শুধু আমাদের পছন্দের তথ্যই দেখি ও শুনি। এতে আমরা ভিন্নমত ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি সহনশীলতা হারিয়ে ফেলি। অথচ ফ্যাক্টচেকিং আমাদের এই গন্ডির বাইরে গিয়ে চিন্তা করতে শেখায়, জানায় ভিন্ন প্রেক্ষাপট।আমরা কোনো ভিডিও বা ছবি ইন্টারনেটে দেখার পর এটাস সত্যতা যাচাই করা উচিত। যদি সত্যতা যাচাই না করে শেয়ার করি এটা মানুষের জীবনের ঝুঁকি পর্যন্ত সৃষ্টি করে পারে।যেমন : পদ্মাসেতুর জন্য এক লাখ মাথা লাগবে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ে।এতে ছেলে ধরা সন্দেহে ২০১৯ সালে রাজধানীর বাড্ডায় তাসলিমা বেগম রেনু নামের একজন নারী গণপিটুনিতে নিহত হয়।
প্রযুক্তির সাহায্যে ফ্যাক্টচেকিং
ফ্যাক্টচেকিং আজ আর কঠিন কিছু নয়। একটি সাধারণ প্রযুক্তি ব্যবহার করেই ভুয়া তথ্য শনাক্ত করা যায়। যেমন—গুগল লেন্স। সম্প্রতি বাংলাদেশের বন্যা নিয়ে একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়, যা অনেকেই দেশের বন্যার ছবি ভেবে শেয়ার করেন। অথচ গুগল লেন্স দিয়ে একটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে দেখা যেত—ছবিটি আসলে ভারতের। এজন্য প্রয়োজন শুধু দুই ক্লিক—ছবির উপর রাইট ক্লিক, তারপর "Search Image with Google Lens"।
‘লেটারাল রিডিং’ ও বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি
ভুলতথ্য মোকাবিলায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হলো লেটারাল রিডিং—অর্থাৎ একাধিক উৎসে তথ্য যাচাই করা। এটি আমাদের বিশ্লেষণী ও পর্যবেক্ষণমূলক ক্ষমতা বাড়ায়। সাম্প্রতিক আর একটা ছবি ভাইরাল হয় যেখানে দেখা যায় একটা শিশু বন্যার পানিতে বসে আছে।কিন্তু ভালো করে লক্ষ করলে দেখা যায় শিশুদির কপাল,হাতের আঙ্গুল আর মুখে কিছু অসামঞ্জস্যতা আছে।এই বিষয়গুলো লক্ষ করলে খুব সহজে বুঝা যায় ছবিটি Ai। এখন বাংলাদেশে ফেক্ট চেকিং নিয়ে কাজ করছে রিউমার ব্রেকার,রিউমার স্কেনার, ফেক্ট ওয়াচ সহ অনেক প্রতিষ্ঠান।তথ্য শেয়ারের আগে চাইলে এই প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে ও ফেক্ট চেকিং করা যায়।
তরুণদের দায়িত্ব
যেহেতু তরুণরাই এখন সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে সক্রিয়, তাই তাদের উচিত তথ্য যাচাইয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা। ফ্যাক্টচেকিং শুধু তথ্য বিশ্লেষণ নয়, এটি একটি সামাজিক দায়িত্ব ও নৈতিক লড়াই। ভবিষ্যতের তথ্যসন্ত্রাস থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হলে এখনই সময়—ফ্যাক্টচেকিংকে প্রতিদিনের অভ্যাসে পরিণত করার। তথ্য শেয়ার করার আগে ভেবে দেখা, যাচাই করা এবং সত্যকে বেছে নেওয়াই আজকের দিনের সবচেয়ে বড় সচেতনতা।
আসিফ