
ছবি: প্রতীকী
সকালে হাঁটা শরীর ও মনের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি অভ্যাস। প্রতিদিন সকালে কিছুক্ষণ হাঁটলে সারাদিনের জন্য শরীর চাঙা থাকে এবং মন সতেজ থাকে। আধুনিক বিজ্ঞান গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেছে যে, নিয়মিত সকালে হাঁটার রয়েছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা যা শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্যে সরাসরি প্রভাব ফেলে। এখানে সকালে হাঁটার পাঁচটি বিজ্ঞানভিত্তিক উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
প্রথমত, সকালে হাঁটা হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। হাঁটা একটি হালকা কার্ডিও এক্সারসাইজ, যা হৃদস্পন্দনকে স্বাভাবিক রাখে এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিকভাবে পরিচালনায় সাহায্য করে। নিয়মিত হাঁটার ফলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমে আসে। এতে করে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক কমে যায়। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, দিনে মাত্র ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস হৃদরোগের সম্ভাবনা অনেকটা কমিয়ে দেয়।
দ্বিতীয়ত, সকালে হাঁটা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে। যারা ওজন কমাতে চান বা স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে চান, তাদের জন্য সকালে হাঁটা খুবই উপকারী। হাঁটার সময় শরীর ক্যালোরি খরচ করে, যা চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে খালি পেটে সকালে হাঁটলে শরীর সঞ্চিত চর্বি ব্যবহার করে শক্তি উৎপন্ন করে। ফলে ধীরে ধীরে ওজন কমে আসে এবং শরীর ফিট থাকে।
তৃতীয়ত, মানসিক চাপ কমাতে সকালে হাঁটা অত্যন্ত কার্যকর। যখন কেউ ভোরের ঠান্ডা ও নির্মল পরিবেশে হাঁটে, তখন মস্তিষ্কে সেরোটোনিন ও এন্ডরফিন নামক 'ফিল গুড' হরমোন নিঃসরণ হয়। এই হরমোনগুলো মন ভালো রাখতে সাহায্য করে এবং দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ ও বিষণ্নতা কমায়। অনেক মনোবিজ্ঞানী মনে করেন, সকালে হাঁটার মাধ্যমে মনের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে এবং দিনটি অনেক শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হয়।
চতুর্থত, সকালে হাঁটার ফলে ঘুমের মান উন্নত হয়। আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে, সকালের আলো ও হালকা ব্যায়াম শরীরের সার্কাডিয়ান রিদম বা অভ্যন্তরীণ ঘড়িকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। ফলে রাতের ঘুম নিয়মিত ও গভীর হয়। যারা ইনসমনিয়া বা অনিদ্রাজনিত সমস্যায় ভোগেন, তাদের জন্য সকালে হাঁটা বিশেষভাবে উপকারী। নিয়মিত এই অভ্যাসের মাধ্যমে ঘুমের স্বাভাবিকতা ফিরে আসে এবং শরীর পুরোপুরি বিশ্রাম পায়।
পঞ্চমত, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় সকালে হাঁটা। নিয়মিত সকালে হাঁটার মাধ্যমে শরীরে লোহিত রক্তকণিকার সংখ্যা বাড়ে এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কার্যকারিতা উন্নত হয়। হাঁটা শরীরকে সক্রিয় রাখে এবং বিভিন্ন সংক্রমণ বা ভাইরাসজনিত রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তারা সাধারণত ঠান্ডা-জ্বর বা মৌসুমী রোগে কম আক্রান্ত হন।
সকালে হাঁটা একটি সহজ ও সাশ্রয়ী উপায় যা শরীর ও মনকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এতে কোনো জিম মেম্বারশিপের প্রয়োজন হয় না, ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতিও দরকার নেই। শুধু একটু ইচ্ছা আর নিয়মিত অভ্যাস গড়ে তুললেই একজন ব্যক্তি নিজের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটাতে পারেন। তাই প্রতিদিন সকালে অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করা উচিত। এটি শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও আপনাকে সুস্থ ও সুখী রাখতে সাহায্য করবে।
এম.কে.