ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

ঢাকার ভেতরেই বর্ষার রোমাঞ্চ: জলে ঘোরার দারুণ ঠিকানা দিয়াবাড়ি

এলেন বিশ্বাস, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঢাকা

প্রকাশিত: ০৭:৪৯, ১৫ জুলাই ২০২৫

ঢাকার ভেতরেই বর্ষার রোমাঞ্চ: জলে ঘোরার দারুণ ঠিকানা দিয়াবাড়ি

ছবি: জনকণ্ঠ

উত্তরা ১৮ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত দিয়াবাড়ির একাধিক লেকে রয়েছে কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা। মেট্রোরেলে গেলে নামতে হবে উত্তরা সেন্টার মেট্রোস্টেশনে।গত কয়েক দিন বৃষ্টিবাদল ভালোই হয়েছে। পুকুর, খালবিল, হ্রদ পানিতে টইটম্বুর। বর্ষার মাঝামাঝি এই সময়টায় অনেকে জলভ্রমণ করতে চান। শহরের মধ্যেই এমন ব্যবস্থা থাকলে তো কথাই নেই।

বর্ষাকালে পানিতে ভেসে বেড়ানোর জন্য দিয়াবাড়ি অনেকের কাছে আদর্শ স্থান। নাগরিক ব্যস্ততার মধ্যে জল–হাওয়ার সঙ্গ পেতে চাইলে ঘুরে আসুন দিয়াবাড়ি। উত্তরা-১৮ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত দিয়াবাড়ির একাধিক লেকে রয়েছে কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা। সোমবার দিয়াবাড়ি ঘুরে দেখা যায় স্বাস্থ্যকর, পরিবেশবান্ধব ও আনন্দদায়ক এই ভ্রমণ অভিজ্ঞতা অল্প খরচেই পাচ্ছেন নগরবাসী।
উত্তরা সেন্টার মেট্রোস্টেশনের ৭৫ নম্বর পিলারের পাশের লেকে কায়াকিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ফরিয়া। তিনি ব্রাজিলের সমুদ্রপারের শহর রিও ডি জেনিরোতে থাকেন। ফরিয়া বলেন, ‘ছুটিতে দাদুবাড়ি গাজীপুরে এসেছি। কায়াকিং আমার খুব প্রিয়। ইনস্টাগ্রামে দেখেছি দিয়াবাড়িতে কায়াকিং চালু হয়েছে। তবে এখানকার কায়াক আকারে ছোট। আমার শহর রিও ডি জেনিরোর কায়াকগুলো গড়নে বেশ শক্তপোক্ত এবং ফাইবার গ্লাসে তৈরি। তাই যাত্রীদের ভার বহনে কোনো সমস্যা হয় না।’

কায়াকিংয়ের সুলুক সন্ধানে জানা যায়, এর ইতিহাস হাজার বছরের পুরোনো। উৎপত্তি হয় মূলত উত্তর মেরুর কাছাকাছি অঞ্চলে। বিশেষ করে আর্কটিক অঞ্চলের সংস্কৃতি, জীবনযাত্রা ও পরিবেশের সঙ্গে কায়াকিং নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। আলাস্কা আর কানাডার আর্কটিক অঞ্চলে কায়াকের নকশা এমনভাবে করা হয়, যাতে তা দ্রুতগতিতে চলতে পারে এবং সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায়—বিশেষ করে সংকীর্ণ জলপথে।


সুমাইয়া, সাদিয়া ও তরী বিইউবিটির তিন শিক্ষার্থী; লম্বাটে সরু নৌকার বৈঠা বেয়ে হাঁপিয়ে গেছেন। দিয়াবাড়ির ২ নম্বর লেকের পাশে চায়ের দোকানে বসে জিরিয়ে নিচ্ছিলেন তিনজন। তাঁরা জানালেন, এই জলযাত্রায় একদিকে যেমন শরীরচর্চা হয়, অন্যদিকে পানির ওপর একান্ত সময় কাটিয়ে মানসিক প্রশান্তিও পাওয়া যায়। একদিকে মেট্রোরেলের ছুটে যাওয়ার দৃশ্য অন্যদিকে প্রকৃতির সঙ্গে এই নিবিড় সখ্য তাঁদের মুগ্ধ করেছে। 

এই শিক্ষার্থীরা জানালেন, ডানে–বাঁয়ে দুই দিকে বৈঠা বেয়ে কায়াক চালাতে হয়। ডান দিকে বৈঠা চালালে কায়াক বাঁ দিকে ঘোরে। আর বাঁ দিকে চালালে ডানে ঘোরে। শরীর সোজা রেখে হাত ও কাঁধের জোরে ছন্দে চালালে কায়াক সহজে এগোয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দিয়াবাড়িতে টু-সিটার এবং থ্রি-সিটার কায়াক বোট বর্তমানে চালু রয়েছে। তিনজন মিলে একটি কায়াকে (থ্রি–সিটার) ৩০০ টাকায় ৩০ মিনিটের একটি ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন। আর ঘণ্টাব্যাপী জল ভ্রমণের খরচ আরও কম। এ ক্ষেত্রে দরাদরি করার সুযোগ রয়েছে।

কায়াকিং শুধু বিনোদন নয়; বরং বৈঠা চালানোর ছন্দ, শারীরিক কসরত, পানির কাছে থেকে জলজ প্রাণী দেখা, আর একধরনের মনঃসংযোগ নাগরিক ব্যস্ততায় প্রশান্তি এনে দেয়। তাই ইচ্ছা করলেই যে কেউ পরিবার কিংবা বন্ধুবান্ধবসহ কায়াকিংয়ের অভিজ্ঞতা নিতে পারেন।

সাব্বির

×