
ছবি: সংগ্রহীত।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস শুধু শরীরকে সুস্থ রাখে না, বরং মারাত্মক রোগের ঝুঁকিও অনেকটা হ্রাস করতে পারে। ক্যান্সার— ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী রোগ, যার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে খাদ্য হতে পারে এক শক্তিশালী অস্ত্র। গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু নির্দিষ্ট খাবার ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক এমনই ৯টি খাবার সম্পর্কে, যেগুলো নিয়মিত খেলে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই হ্রাস পায়—
১. শাকসবজি, বিশেষ করে ব্রোকলির পাতা:
ব্রোকলি এবং এর পাতায় থাকে সালফোরাফেন নামে এক বিশেষ উদ্ভিদ যৌগ, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। গবেষণায় দেখা গেছে, এটি স্তন, প্রোস্টেট ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
২. বেরি ফল:
ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি কিংবা রাস্পবেরির মতো বেরিগুলোতে থাকে অ্যান্থোসায়ানিন ও পলিফেনলস—শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরে মুক্ত মৌল (ফ্রি র্যাডিক্যাল) নিষ্ক্রিয় করে। এগুলো স্তন, খাদ্যনালী, কোলন, মূত্রথলি ও মুখগহ্বরের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক।
৩. গাজর:
গাজরে থাকা বিটা-ক্যারোটিন এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান পাকস্থলী, ফুসফুস ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাবারে গাজর কাঁচা বা রান্না করে যুক্ত করা যেতে পারে।
৪. রসুন:
গন্ধে তেমন সুখকর না হলেও, রসুনে রয়েছে অ্যালিসিন নামক শক্তিশালী যৌগ, যা ক্যান্সার কোষ ধ্বংসে সহায়ক। এটি পাকস্থলী ও কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে।
৫. টমেটো:
টমেটোতে রয়েছে ফাইটো-কেমিক্যাল, যা রান্না করা অবস্থায় আরও সক্রিয় হয়। এটি প্রোস্টেট, প্যানক্রিয়াস, পাকস্থলী এবং কোলোরেকটাল ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাসে কার্যকর।
৬. বাদাম:
বাদাম—বিশেষ করে আখরোট, আমন্ড, ব্রাজিল নাট ও হ্যাজেল নাট—এ রয়েছে স্বাস্থ্যকর চর্বি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন ই। এগুলো স্তন, ফুসফুস, কোলন এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করে।
৭. সাইট্রাস ফল:
লেবু, মালটা, কমলা, চুন—এই ধরনের সাইট্রাস ফল ভিটামিন C, হেসপেরিডিন এবং লিমোনয়েডসে ভরপুর। প্রতি সপ্তাহে মাত্র ৩ বার এই ফল খেলে পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, খাদ্যনালী এবং শ্বাসতন্ত্রের ক্যান্সারের ঝুঁকি প্রায় ২৮% কমে যেতে পারে।
৮. গ্রিন টি:
প্রতিদিন এক কাপ গ্রিন টি আপনাকে ক্যান্সারের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে পারে। এতে রয়েছে ক্যাটেচিন (বিশেষ করে EGCG), যা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী এনজাইম এবং ডিএনএ ক্ষতির বিরুদ্ধে কাজ করে। গ্রিন টি নিয়মিত পান করলে স্তন, কোলন, যকৃত, ফুসফুস, অগ্ন্যাশয় ও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৯. চর্বিযুক্ত মাছ:
স্যালমন, ম্যাকারেল বা সার্ডিনের মতো মাছগুলোতে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড (EPA/DHA) এবং ভিটামিন D, যা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এ ধরনের মাছ সপ্তাহে অন্তত ২ বার খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
ক্যান্সারের ঝুঁকি পুরোপুরি ঠেকানো সম্ভব না হলেও, সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে তা অনেকটাই কমানো সম্ভব। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই খাবারগুলো অন্তর্ভুক্ত করলে দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ জীবনযাপন সহজ হতে পারে।
সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া।
মিরাজ খান