ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

ট্রাম্প কি নোবেল পাওয়ার যোগ্য? এমন প্রশ্নে ৫ বিশেষজ্ঞের চমকপ্রদ উত্তর

প্রকাশিত: ১৫:৫৫, ১৫ জুলাই ২০২৫

ট্রাম্প কি নোবেল পাওয়ার যোগ্য? এমন প্রশ্নে ৫ বিশেষজ্ঞের চমকপ্রদ উত্তর

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারগুলোর একটি শান্তিতে নোবেল। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তার দাবি, ট্রাম্প একাধিক দেশ ও অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন, ফলে শান্তিতে নোবেল তার প্রাপ্য। কিন্তু এমন মনোনয়ন ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। প্রশ্ন উঠেছে—ট্রাম্প কি সত্যিই শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে পাঁচজন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়েছে দ্য কনভারসেশন।

বর্তমানে গাজা যুদ্ধ ক্রমেই তীব্র আকার ধারণ করছে। এমন পরিস্থিতিতে একজন যুদ্ধকালীন নেতাকে শান্তির পুরস্কারের জন্য মনোনীত করাকে অনেকেই ব্যঙ্গ হিসেবেই দেখছেন। অস্ট্রেলিয়ার আরএমআইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ফেলো এমাসটিস বলেন, ‘এটা যেন কুকুর প্রদর্শনীতে হায়নাকে নামানো।’ তার মতে, ট্রাম্পের কোনো উদ্যোগেই বাস্তব শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়নি—না গাজায়, না ইরানে, না মধ্যপ্রাচ্যে।

ডেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক আলী মামুরী মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসন প্রকাশ্যেই ইসরায়েলের অবৈধ কার্যক্রমকে সমর্থন করেছে। অবৈধ বসতি সম্প্রসারণ ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড সংযুক্ত করার মতো ইসরায়েলি পদক্ষেপে ট্রাম্পের নীরবতা ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এমন কর্মকাণ্ডের পর তাকে শান্তিতে নোবেলের মনোনয়ন দেওয়া নিছক এক ‘বিদ্রুপ’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক ইয়ান পারমিটার জানান, ট্রাম্প দুটি সংঘাত সমাধানের দাবি করেছেন—ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব এবং রুয়ান্ডা-কঙ্গো বিরোধ। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। অন্যদিকে রুয়ান্ডা-কঙ্গোর শান্তি চুক্তিতে কাতারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল, যা ট্রাম্প প্রশাসন লুকিয়েছে।

ইয়ান পারমিটার আরও বলেন, ইরান-ইসরায়েল ১২ দিনের সংঘাতে ট্রাম্পের চাপের কারণে যুদ্ধবিরতি হলেও, তা যথেষ্ট নয়। ‘গাজার ক্ষেত্রে শুধু যুদ্ধবিরতি নয়, স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে,’ মন্তব্য করেন তিনি। নেতানিয়াহুকে নিয়ন্ত্রণ করে যদি ট্রাম্প দ্বিরাষ্ট্র সমাধানে উদ্যোগী হন, তবেই সেটি নোবেলযোগ্য অর্জন হবে বলে মত দেন পারমিটার।

মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘাত অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জেসমিন কিম ওয়েস্টেন ডরফ বলেন, ‘শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয় যিনি বৈশ্বিক শান্তিতে অসামান্য অবদান রাখেন। ট্রাম্প তার পুরো উল্টো।’ তিনি জানান, ট্রাম্প একজন ‘শান্তি স্থাপনকারী’ নন এবং তিনি এ পুরস্কারের জন্য ‘যথার্থ প্রার্থী’ও নন।

ডেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য ফোরামের পরিচালক শাহারাম আকবরি বলেন, ‘নেতানিয়াহু চেষ্টা করছেন ট্রাম্পকে একজন শান্তি প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে উপস্থাপন করতে। তবে সত্যি বলতে, তার হাতে রক্ত লেগে আছে। তার দাবি কেবল হাস্যকর নয়, বাস্তবতা থেকেও সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।’

রাকিব

×