
ছবি:সংগৃহীত
ড্যানিয়েল মার্টিনডেল – একজন আমেরিকান নাগরিক, যিনি এক সময় নিউ ইয়র্কের খামারবাড়িতে বড় হয়েছেন – আজ মস্কোর এক অনুষ্ঠানে হাতে তুলে নিলেন রাশিয়ার পাসপোর্ট। তিনি নিজেই বললেন, "রাশিয়া এখন শুধু আমার মনে নয়, আমার পরিচয়েও স্থান করে নিয়েছে।"
রাশিয়ার দোনেৎস্ক অঞ্চলের মস্কো-সমর্থিত নেতা ডেনিস পুশিলিন তাকে এই নাগরিকত্ব প্রদান করেন। তিনি জানান, ড্যানিয়েল ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়াকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন, যা রাশিয়ার কৌশলগত পরিকল্পনায় সাহায্য করেছে।
টেলিভিশনের ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে মার্টিনডেল যখন রুশ ভাষায় নাগরিকত্বের শপথ নেন, তার মুখে ছিল আত্মবিশ্বাসের হাসি।
"আমি, ড্যানিয়েল রিচার্ড মার্টিনডেল, স্বেচ্ছায় রাশিয়ার নাগরিকত্ব গ্রহণ করছি এবং এই দেশের সংবিধান রক্ষা করব," – তিনি বলেন।
একটি ভিন্ন পথে হাঁটা
মার্টিনডেলের জীবনের পথটা অন্য অনেকের চেয়ে একটু ভিন্ন। ছোটবেলায় তাঁর পরিবার মিশনারি হিসেবে চীনের গ্রামে কাজ করতেন। তখনই রাশিয়ার প্রতি একটা অদ্ভুত আকর্ষণ জন্মায় তাঁর মনে। ২০১৮ সালে তিনি রাশিয়ার ভ্লাদিভোস্তকে যান, রুশ ভাষা শেখেন, ইংরেজি পড়ান। কিন্তু ভিসা জটিলতায় তাঁকে সেখান থেকে বের করে দেওয়া হয়।
কিন্তু রাশিয়ায় ফেরার ইচ্ছেটা তাঁর মধ্যে থেকে যায়। তিনি চলে যান পোল্যান্ডে, তারপর একসময় পাড়ি জমান ইউক্রেনে—যুদ্ধ শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে। এবং সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর নতুন পরিচয়ের গল্প।
'তাঁর তথ্য দিয়েই কুরাখোভে পরিকল্পনা'
মার্টিনডেল নিজেই একবার বলেছিলেন, তিনি টেলিগ্রাম অ্যাপে রুশপন্থী যোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং ইউক্রেনীয় সেনাদের ঘাঁটি ও চলাচলের তথ্য দেন। ডেনিস পুশিলিন দাবি করেন, এই তথ্যের উপর ভিত্তি করেই কুরাখোভে শহর দখলের পরিকল্পনা গড়ে ওঠে।
তিনি বলেন, "ড্যানিয়েল শুধু একজন বন্ধু নয়, আমাদের একজন হয়ে গেছেন। এই পাসপোর্ট তাঁর প্রতি রাশিয়ার সম্মান ও কৃতজ্ঞতার প্রতীক।"
নীরব যুক্তরাষ্ট্র, সরব রাশিয়া
যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায়নি। অনেকেই মার্টিনডেলের সিদ্ধান্তে বিস্মিত, কেউ কেউ সমালোচনাও করছেন। তবে মার্টিনডেল স্পষ্ট করে দিয়েছেন—রাশিয়াই এখন তাঁর বাড়ি।
এই ঘটনার ঠিক আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে আরও আধুনিক অস্ত্র সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা। এমন প্রেক্ষাপটে একজন আমেরিকান নাগরিকের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন প্রশ্ন তুলছে।
ড্যানিয়েল মার্টিনডেলের গল্প হয়তো সবার মতো নয়। তাঁর সিদ্ধান্ত বিতর্কিত হতে পারে, কিন্তু এটি এক ব্যক্তির বিশ্বাস, পরিচয় আর পথ বেছে নেওয়ার গল্প। যুদ্ধের মধ্যে থেকেও কেউ কেউ নিজের স্বপ্ন খোঁজে—সেটা ঠিক না ভুল, সে বিচার সময়ই করবে।
মারিয়া