ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

গ্রিক স্থাপত্যে নির্মিত শেরপুরের পৌনে তিনআনি জমিদার বাড়ি 

সাফিজল হক তানভীর, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, শেরপুর

প্রকাশিত: ০২:১৫, ১৬ জুলাই ২০২৫

গ্রিক স্থাপত্যে নির্মিত শেরপুরের পৌনে তিনআনি জমিদার বাড়ি 

শেরপুর জেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক নিদর্শন হল পৌনে তিন আনী জমিদার বাড়ি। জমিদার সতেন্দ্র মোহন চৌধুরী ও জ্ঞানেন্দ্র মোহন চৌধুরীর বাসভবন হিসেবেই এই ভবনটির সূচনা হলেও, সময়ের পরিক্রমায় এটি এখন ঐতিহ্য ও কৌতূহলের এক গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্যে পরিণত হয়েছে।
গ্রিক ও ইউরোপীয় ধাঁচের মিশেলে তৈরি এই জমিদার বাড়ির স্থাপত্যশৈলী অনন্য। বড় আকৃতির চতুষ্কোণ স্তম্ভ ও কারুকার্যখচিত কার্নিশ এখনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির গায়ে চুন-সুড়কির আস্তরণ, ছাদে ঢালাই লোহার রেলিং এবং পলেস্তারা প্রাচীন নির্মাণশৈলীর নিদর্শন বহন করে।

ভবনের অভ্যন্তরে রয়েছে একটি প্রাচীন মন্দির, যার বেদি ও অলংকরণ আজও পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে। বাড়ির দক্ষিণ-পূর্ব কোণের রংমহল ছিল জমিদার পরিবারের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র। এখানে একসময় অনুষ্ঠিত হতো সঙ্গীত, নৃত্য ও নাটকের আসর। রংমহলের স্থাপনায় দেখা যায় ফুল, লতা,পাতার নান্দনিক অলংকরণ যা জমিদারি রুচি ও ঐতিহ্যের পরিচায়ক।

বাড়ির সামনে একটি সুসজ্জিত পুকুর রয়েছে, যার একপাশে শানবাঁধানো ঘাট  যা অতীতে জমিদার পরিবারের ব্যবহারের জন্য নির্মিত হয়েছিল। আজও পুকুরটি এলাকার পরিবেশে শীতলতা ও ঐতিহ্যের ছোঁয়া যোগ করে।

এই বাড়ির নাম পৌনে তিন আনী জমিদার বাড়ি হওয়ার পেছনে আছে একটি কৌতূহলোদ্দীপক প্রেক্ষাপট। ধারণা করা হয়, জমিদারির অংশীদারিত্ব বা কর প্রথার অনুপাতে ‘পৌনে তিন আনী’ অংশ ছিল এ বাড়ির অধিপতিদের যা থেকেই এমন নামকরণ হয়।

ঢাকার মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে সোনার বাংলা, চেম্বার অব কমার্স পরিবহন ইত্যাদি বাসে সরাসরি শেরপুর জেলা শহরে পৌঁছানো যায়। সেখান থেকে রিকশা, অটো বা সিএনজি'তে মাত্র ১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌনে তিন আনী জমিদার বাড়ি সহজেই পৌঁছানো যায়।  শেরপুরে বেশ কিছু মানসম্মত আবাসিক হোটেল রয়েছে। নিউ মার্কেট সংলগ্ন এলাকায় বেশ কিছু ভালো মানের রেস্তোরাঁ রয়েছে। এখানে ঘুরতে আসলে থাকা খাওয়ার অসুবিধা হবে না।

স্থানীয় বাসিন্দা রাজা মিয়া বলেন আমরা ছোটবেলা থেকেই এই জমিদার বাড়িটিকে দেখে আসছি। একসময় এই বাড়িতে অনেক অনুষ্ঠান হতো, দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসত দেখতে। এখন বাড়ির অনেক অংশই জীর্ণ হয়ে গেছে, তবে ঐতিহাসিক গুরুত্ব ঠিকই রয়ে গেছে। যদি সরকারের নজর পড়ত, তাহলে এটি খুব ভালো পর্যটন কেন্দ্র হতে পারত।

শ্রাবনী আক্তার শান্তী বলেন, আমি ইতিহাস নিয়ে পড়ি, তাই জমিদার বাড়ি ঘুরে দেখা আমার খুব ভালো লাগে। এই বাড়ির স্থাপত্য, স্তম্ভ আর পুকুরের ঘাট দেখলেই বোঝা যায় কত যত্ন করে বানানো হয়েছিল। একটু যত্ন নিলে এটা শিক্ষার্থী ও পর্যটকদের জন্য দুর্দান্ত এক স্পট হতে পারে।

শেরপুর শহরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জীবন্ত সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে পৌনে তিন আনী জমিদার বাড়ি। নান্দনিক স্থাপত্য ও জমিদারি ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে এটি কেবল একটি পর্যটন কেন্দ্রই নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার। সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি হয়ে উঠতে পারে শিক্ষা, ইতিহাস ও ভ্রমণের এক গুরুত্বপূর্ণ মিলনস্থল।

রাজু

×