ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

মানুষ বিক্রির হাট! মানিকগঞ্জে জীবিকার টানে জমে উঠে এক ব্যতিক্রমী শ্রমবাজার

আফ্রিদি আহাম্মেদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মানিকগঞ্জ

প্রকাশিত: ০১:০৭, ১৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০১:০৮, ১৬ জুলাই ২০২৫

মানুষ বিক্রির হাট! মানিকগঞ্জে জীবিকার টানে জমে উঠে এক ব্যতিক্রমী শ্রমবাজার

গরু-ছাগলের হাট, কাঁচাবাজার, নৌকার হাট—এসব তো আমরা সবাই চিনি। কিন্তু এমন একটি হাটের কথা জানেন কি, যেখানে মানুষ “বিক্রি” হয়? অবাক হলেও সত্য, মানিকগঞ্জ শহরের নবীন সিনেমা হলের পাশেই এমন এক ব্যতিক্রমী হাট বসে, যেখানে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা দিনমজুররা নিজেদের শ্রম বিক্রি করেন রোজ চুক্তির ভিত্তিতে।

বরিশাল, পটুয়াখালী, গাইবান্ধা, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিনই আসেন শত শত শ্রমিক। কেউ আসেন ধান কাটতে, কেউবা বাড়ি নির্মাণ কিংবা মাটি কাটার কাজে। কাজের ধরন আর পরিশ্রমের মাত্রা অনুযায়ী তাদের পারিশ্রমিক নির্ধারণ হয় ৯০০ থেকে ১৪০০ টাকা পর্যন্ত। চাইলে ১০-১৫ দিনের জন্যও চুক্তি করা যায়, সে ক্ষেত্রে খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থাও শ্রমদাতার পক্ষ থেকে করতে হয়।

তবে বর্ষাকাল কিংবা বৃষ্টির দিনে দৃশ্যটা ভিন্ন। কাজ না থাকায় অনেকেই অলস বসে থাকেন খরিদ্দারের অপেক্ষায়। কেউ কেউ শেষমেষ হতাশ হয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যান।গাইবান্ধা থেকে আসা সবুজ মিয়া জানান, "বন্যার সময় কামকাজ কম থাহে। তখন বাড়িতে ইট্টু কষ্টে চলি, হেইজন্যই কামে আসি।"

পটুয়াখালী থেকে আগত সুশীল বলেন, "বৃষ্টি থাইকা ২-৩ দিন হানে কষ্ট কইরা রইছি। আইজ মাটি ফালাইয়া ঘর বানামু, ১১০০ টাকা রোজে ১৫ দিনের চুক্তি হইছে। বাড়ি গিয়া মাইয়ারে বিরিয়ানি খাওয়ামু!"

আর মানিকগঞ্জের কৃষক ফরহাদ বলেন, "আমাগো ভিটা উঁচা করবার লাগি মানুষ খুঁজি আসছি। এখন দাম কিছু কম, তয় ধান-সরিষার মৌসুমে হেগো দাম বেড়ে যায়।"

এই হাটে বিক্রয় হয় না শরীর—বিক্রয় হয় ঘাম, শ্রম আর জীবিকার সংগ্রাম। এদের কারণেই মানিকগঞ্জে ছোট-বড় বহু কাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়। এ এক অন্যরকম “মানুষের হাট”—যেখানে জীবিকা আর প্রয়োজনে তৈরি হয় শ্রমের বিনিময়বাজার।

এ হাট শুধু শ্রমের আদান-প্রদান নয়, বরং গ্রামীণ অর্থনীতির এক বাস্তব প্রতিচ্ছবি। এখানে দেখা মেলে জীবনের বাস্তবতা, কঠোর পরিশ্রমের গল্প আর মানুষের নিরব প্রতিবাদের ভাষা।

রাজু

×