ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

‘মরণফাঁদ’ হয়ে উঠেছে মুন্সীগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রের রাস্তা

সালাহউদ্দিন সালমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ।

প্রকাশিত: ০৮:০০, ১৬ জুলাই ২০২৫

‘মরণফাঁদ’ হয়ে উঠেছে মুন্সীগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রের রাস্তা

‘মরণফাঁদ’ হয়ে উঠেছে মুন্সীগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রের রাস্তা

একটি শহরের মর্যাদা তার রাস্তাঘাটের অবস্থায়ও ফুটে ওঠে। অথচ এখানে দেখা যায় উল্টো ছবি—বারবার সংস্কার, নতুন নতুন বরাদ্দ, তবু সড়কের বেহাল দশার শেষ নেই।

মুন্সীগঞ্জ পৌরসভা এলাকায় মানিকপুর থেকে কাটাখালি পর্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরাঞ্চলীয় সড়কটি আজ গর্তে ভরা, খানাখন্দে বিভক্ত,সড়কের ক্ষতবিক্ষত চেহারা অত্যন্ত বিপদজনক এবং ভয়াবহ। এক সময় যা বাণিজ্য ও প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্রের মূল সড়ক হিসেবে পরিচিত ছিল, সেটিই আজ চলাচলের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ।

খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে এই সড়ক মেরামতের কাজ শুরু হয়। শর্ত ছিল নির্দিষ্ট মেয়াদে পুরো এলাকাজুড়ে খানাখন্দ ভরাট, খোয়া ফেলে রোলারিং এবং পিচ ঢালাই করা।

কাজ শেষ হয় ঠিকই, কিন্তু মাত্র দুই মাসের মধ্যেই সেই পিচ উঠে যায়, গর্ত আগের চেয়ে বড় আকারে ফিরে আসে। বৃষ্টি হলে গর্তগুলোতে পানি জমে ছোট ছোট জলাশয়ে রূপ নেয়। গাড়ি ও রিকশা উল্টে পড়ার ঘটনা ঘটে প্রায়ই। স্কুলগামী শিক্ষার্থী, রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, বাজারের মালবাহী ভ্যান—সবাইকে এই ঝুঁকিপূর্ণ পথে চলতে হয় বাধ্য হয়ে।

এখন আবার প্রায় ২০ লাখ টাকার নতুন বরাদ্দে অস্থায়ী সংস্কার হচ্ছে। গর্তে শুধু খোয়া ফেলে সমতল করা হচ্ছে, পিচ ঢালাই হলেও তা কতদিন টিকবে—সে নিয়ে সন্দেহই বেশি।

সবচেয়ে বড় সমস্যা রাস্তার নিচ দিয়ে যাওয়া গ্যাস পাইপলাইন। অনেক জায়গায় পাইপের লিকেজ আছে, যেটা রাস্তা খুঁড়ে স্থায়ী ঢালাই বা কংক্রিট কাজের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিস্ফোরণের ঝুঁকি থাকায় এতদিন প্রকৃত অর্থে পাকা রাস্তা করা যায়নি।

যদিও পাইপলাইন অপসারণের উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে, সেটি এখনও শেষ হয়নি। ফলে পৌরসভা বলছে—পাইপলাইন না সরলে স্থায়ী সংস্কার সম্ভব নয়। গ্যাস কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয়, টেন্ডার, খনন—সবকিছু শেষ হতে আরও সময় লাগবে।

একদিকে প্রকল্প অনুমোদন, টেন্ডার, বরাদ্দ—সবই কাগজে কলমে হচ্ছে। অন্যদিকে সেই কাজের গুণমান নিয়ে প্রশ্ন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামমাত্র কিছু অংশে কাজ করে পুরো বিল তুলে নেওয়া, দায়িত্বপ্রাপ্তদের নজরদারির অভাব—এসব নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ প্রবল।

অনেকে বলছেন—একবার দুই মাসে নষ্ট হবে জেনেও আবার অস্থায়ী সংস্কারে টাকা ঢালা মানে মূল সমস্যার সমাধান নয়, শুধু নতুন বাজেট খরচ করা।

বারবার বলা হচ্ছে—স্থায়ী প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হয়ে গেলে ঢালাই বা বিটুমিনাস পেভমেন্ট করে টেকসই রাস্তা হবে। গ্যাস লাইনের কাজ শেষ হলে দ্রুতই বড় প্রকল্প শুরু হবে।

কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে—এক প্রকল্প শেষ হতে না হতেই রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নতুন বরাদ্দ আসছে ঠিকই, কিন্তু মানুষ পাচ্ছে না স্থায়ী সমাধান।

শহরের কেন্দ্রীয় হাসপাতাল, সুপারমার্কেট, বাসস্ট্যান্ড, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই সড়কের সাথে যুক্ত। অথচ পুরো পথজুড়ে খানাখন্দ, উঁচু-নিচু গর্ত, বৃষ্টিতে কাদা-পানি—সব মিলে যেন মরণফাঁদ।

যানবাহনের ক্ষতি হচ্ছে, যাত্রীরা আহত হচ্ছে, ব্যবসায়ীরা ক্রেতা হারাচ্ছেন। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তা এমন হয়ে যায় যে রিকশা বা ভ্যান টানাই যায় না।

বাসিন্দারা বলছেন—শহরের গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির এমন দশা একটি জেলা শহরের জন্য লজ্জার।

কখন আসবে টেকসই সংস্কার? কখন শেষ হবে এই ভোগান্তি? এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা।
 

তাসমিম

×