
ছবি: জনকণ্ঠ
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ‘জুলাই শহিদ দিবস’ উপলক্ষে আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, ‘জুলাই শহিদ দিবস’ কেবল একটি স্মরণীয় তারিখ নয়; এটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দৃঢ় অঙ্গীকার ও প্রতিজ্ঞার নিদর্শন। এটি সেই সকল শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা, যারা গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন। এই দিনটি জাতিকে তাদের মহান আত্মত্যাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি ন্যায় ও মুক্তির পথে অবিচল থাকার শপথ গ্রহণের দিন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১৬ জুলাই) দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা হলরুমে এ উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজ কুমার বিশ্বাস।
বক্তারা বলেন, ‘জুলাই শহিদ দিবস আমাদের জাতীয় ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। এই দিনটি শুধু স্মরণের নয়—এটি নতুন করে প্রতিজ্ঞা করার দিন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের পথে শহিদদের আদর্শে চলার দিন।’
তারা বলেন, গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী গণআন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তরুণ এই মুক্তিকামী যোদ্ধার আত্মত্যাগ আমাদের বিবেককে জাগ্রত করে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার শক্তি ও সাহস জোগায়। তার রক্তদান বৃথা যায়নি, বরং তা ইতিহাসের এক বলিষ্ঠ পদচিহ্ন হয়ে রয়ে গেছে।
বক্তারা আরও বলেন, ১৬ জুলাইকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘জুলাই শহিদ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা শুধু আবু সাঈদের নয়, বরং সকল গণতন্ত্রপ্রেমী শহিদের আত্মত্যাগের স্বীকৃতি। গণতন্ত্র কখনোই স্বতঃস্ফূর্তভাবে আসে না, এটি অর্জন করতে হয় কঠিন সংগ্রাম ও আত্মোৎসর্গের মাধ্যমে। আজকের তরুণ প্রজন্মকে শহিদদের ইতিহাস জানতে হবে, জানতে হবে—তারা কীসের জন্য জীবন দিয়েছেন।
তারা আহ্বান জানিয়ে বলেন, শহিদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে হলে সবাইকে সত্য, ন্যায় ও মানবিক মূল্যবোধের পথে অটল থাকতে হবে। দল-মত নির্বিশেষে গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়া এখন সময়ের দাবি। বক্তৃতা কিংবা আনুষ্ঠানিকতা নয়—চিন্তা, চেতনা ও কর্মে শহিদদের আদর্শ ধারণ করাই হবে তাদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী খোকন রানার সঞ্চালনায় এসময় বক্তব্য রাখেন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হাকিম আজাদ, বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইব্রাহিম খলিলুল্যাহ, উপজেলা জামায়াতের আমির শহিদুল ইসলাম সরকার মঞ্জু, পৌর জামায়াতের আমির একরামুল হক, বিএনপি পৌর আহ্বায়ক ইখতিয়ার উদ্দিন ভূঁইয়া নিপন, এনসিপির যুগ্ম-সমন্বয়ক আশানুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নুর আলম মিয়া নুর, জুলাই যোদ্ধা রাশেদুজ্জামান আশিক, রেজওয়ানুর কবির, ইসলামী আন্দোলনের উপজেলা সভাপতি হাফেজ খাইরুল ইসলাম, পৌর সভাপতি হাফেজ হারুন অর রশিদ সিদ্দিকী, এনসিপির প্রধান সমন্বয়ক লুৎফর রহমান বসকি, এবি পার্টির উপজেলা আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম প্রমুখ।
আলোচনা সভায় শহিদ পরিবারের সদস্য, রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষক, সাংবাদিক, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং স্থানীয় সুধীজন উপস্থিত ছিলেন। শেষে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের খতিব মুফতি মাওলানা ওমর ফারুক রাহমানী।
আবির