
দেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ মেরুদণ্ড, যা পিঠকে স্থিতিশীলতা ও শক্তি দেয়। কিন্তু আধুনিক জীবনযাপনে নানা ভুল অভ্যাস মেরুদণ্ডের ক্ষতি করছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মেরুদণ্ড বিশেষজ্ঞ ডা. রবার্ট মানকুসো এক প্রতিবেদনে জানান, দৈনন্দিন অনেক কাজেই পিঠের ওপর চাপ পড়ে যা দীর্ঘমেয়াদে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
জেনে নেওয়া যাক, পিঠের জন্য ক্ষতিকর ৬টি অভ্যাস এবং এর সহজ সমাধান—
১. ডেস্কে দীর্ঘসময় কুঁজো হয়ে বসা
এভাবে বসলে কোমর ও পিঠে বাড়তি চাপ পড়ে। ‘হিপ ফ্লেক্সর’ পেশি শক্ত হয়ে যায় এবং মেরুদণ্ডের ডিস্কে চাপ পড়ে।
সমাধান:
চেয়ারে বসার সময় পায়ের পাতা মাটিতে সোজা রাখুন, মনিটর চোখের সমান উচ্চতায় থাকুক এবং পিঠ সোজা রাখার চেষ্টা করুন। প্রতি ৩০ মিনিট পর পর উঠে হাঁটুন বা স্ট্রেচ করুন। প্রয়োজনে লাম্বার বালিশ ব্যবহার করুন।
২. ভুলভাবে ভার তোলা
এক হাতে ভার নেওয়া বা বাচ্চা ধরে থাকা মেরুদণ্ডের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
সমাধান:
ভার তুলতে হলে হাঁটু ভাঁজ করুন, কোমর নয়। বসে বসে বস্তুটি শরীরের কাছে টেনে তুলুন। পায়ের শক্তি ব্যবহার করুন, পিঠ নয়।
৩. মোবাইলের দিকে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকা
মোবাইলের নিচের দিকে তাকালে ঘাড় ও পিঠে অতিরিক্ত চাপ পড়ে, যা গলায় বোলিং বল ঝুলানোর মতো।
সমাধান:
মোবাইল চোখের সমান উচ্চতায় রাখুন। মাঝে মাঝে বিরতি নিন এবং ‘চিন টাক’ স্ট্রেচিং করুন—চিবুক পেছনের দিকে টানা।
৪. একদিকে ভারী ব্যাগ বহন করা
এক কাঁধে ভারী ব্যাগ রাখলে মেরুদণ্ড কাত হয়ে যায় এবং পেশি অতিরিক্ত চাপ পায়।
সমাধান:
ব্যাকপ্যাক হলে দুটি স্ট্র্যাপ ব্যবহার করুন। ব্যাগ নিয়মিত হালকা রাখুন এবং কাঁধ পরিবর্তন করুন।
৫. ভুল ধরনের জুতা পরা
অতিরিক্ত হাই হিল বা খারাপ মানের জুতা পিঠের ভঙ্গিমা বদলে দেয়, ব্যথার কারণ হয়।
সমাধান:
‘আর্চ সাপোর্ট’যুক্ত এবং ‘নিউট্রাল রাইজ’ থাকা জুতা পরুন। হাই হিল কম পরাই ভালো।
৬. পেটের ওপর শুয়ে ঘুমানো
পেটের ওপর শুয়ে বা অনুপযুক্ত বালিশ ব্যবহার করলে পিঠে ব্যথা হতে পারে।
সমাধান:
পাশে শুয়ে হাঁটুর মাঝখানে বালিশ দিন, অথবা পিঠে শুয়ে হাঁটুর নিচে বালিশ রাখুন। আরামদায়ক বালিশ ব্যবহার করুন ঘাড় ঠিক রাখার জন্য।
অতিরিক্ত যত্নের পরামর্শ
-
প্রতি ঘণ্টায় উঠে হাঁটুন, সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট হালকা ব্যায়াম করুন (যেমন হাঁটা, যোগব্যায়াম)।
-
‘কোর’ পেশি শক্তিশালী করতে প্ল্যাংক, গ্লুট ব্রিজ, বার্ড-ডগ অনুশীলন করুন।
-
সকাল শুরু করুন ‘ক্যাট-কাও’, কোমর মোচড়ানো ও হ্যামস্ট্রিং স্ট্রেচ দিয়ে।
-
দাঁড়ানো বা বসার সময় মাথা উঁচু, ঘাড় লম্বা এবং কাঁধ ঢিলা রাখুন।
-
কাজের জায়গায় আরামদায়ক চেয়ার বা সাপোর্ট গিয়ার ব্যবহার করুন।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন?
যখন ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়, গরম সেঁক বা স্ট্রেচিংয়ে কমে না, ব্যথা হাত বা পায়ে ছড়িয়ে পড়ে, ঝিমঝিম বা দুর্বলতা হয়, দৈনন্দিন কাজ ও ঘুম ব্যাহত হয়, হঠাৎ ওজন কমে বা রাতের বেলায় ব্যথা বেড়ে যায়।