
ছবি: জনকণ্ঠ
চাঁদপুর সদর উপজেলার রঘুনাথপুরের এলবিসি খালটি ২০ বছরের অধিক সময় ধরে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। এটি সংস্কারের অভাবে তার সৌন্দর্য হারিয়ে আজ মৃতপ্রায়। এ খাল দিয়ে এক সময়ে বড় বড় পালতোলা নৌকা চলাচল করতো বলে জানান এলাকাবাসী। খালের পানি ছিল খুবই স্বচ্ছ। এলাকার মানুষ এ খালে গোসল করতো, দৈনন্দিন কাজ করতো। ভূমি দস্যুদের লালসার দৃষ্টি এবং খালের পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলোর মালিকদের কু-দৃষ্টি পড়ে খালটির উপর। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিস্ক্রিয়তায় আশির দশক হতে খালের দুই পাশ দখল হতে থাকে। খালটি রুপ নিতে থাকে নালায়।
এলবিসি খালের পানি স্থানীয় কৃষকরা ব্যবহার করতেন সেচ কাজে, গোসলসহ গৃহস্থালির কাজে। আবার কেউ বসতেন মাছ ধরার জন্যে। খালটির পানি এতোটাই স্বচ্ছ ছিলো যে, পানির নিচে কোনো বস্তু পড়লে সেটিও পরিষ্কার দেখা যেতো। এই খালের সাথে স্থানীয়দের শৈশব এবং পুরানো অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।
দীর্ঘ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কোনো রক্ষণাবেক্ষণ না করায় সেই খালটি এখন হারিয়েছে তার সব সৌন্দর্য। খালের সেই পুরানো দৃশ্য এখন স্থানীয়দের কাছে ফেলে আসা পুরানো স্মৃতি বা কল্পনার চোখে দেখা খাল।
স্থানীয়রা জানান,দীর্ঘ সময় ধরে কোনো প্রকার সংস্কার না হওয়ায় খালটি আজ শুকিয়ে গেছে। জমেছে ময়লা-আবর্জনা, কচুরিপানা, দখলের মুখেও পড়েছে কিছু অংশ। খালের দু পাশের ইটের গাঁথুনি ভেঙ্গেচুরে পড়ে আছে। যেটি একসময় প্রবহমান একটি পানির উৎস ছিলো, এখন তা মৃতপ্রায় এক জলাশয়ে পরিণত হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে খালটির প্রতি কর্তৃপক্ষের কোনো নজর পড়েনি। খালটি তার যৌবন হারিয়ে ফেলায় কৃষি কাজে যেমন পানি সংকট দেখা দিয়েছে, তেমনি এলাকার পরিবেশ ও নান্দনিকতাও নষ্ট হয়েছে।
গতকাল সোমবার সরেজমিন এলবিসি খালের চারপাশ ঘুরে দেখা যায়, এলবিসি খালের কিছু অংশে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে এখন এটি ময়লার ভাগাড় ও মশা উৎপত্তির স্থলে পরিণত হয়েছে। অবর্জনার স্তূপে খালের পানিপ্রবাহ বন্ধ ও দূষিত বিষাক্ত পানির গন্ধে ইউনিয়নবাসীর জন্য খালটি এখন অস্বস্তিকর এক পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এলবিসি খাল পুনরুদ্ধার করে এর সৌন্দর্যবর্ধনের দাবি স্থানীয় এলাকাবাসীর।
চাঁদপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সাবেক সভাপতি মো. মোশারেফ হোসেন বলেন, এলবিসি খালকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ এটাকে বলা হয় স্থানীয় কৃষকের লাইফ লাইন। এক সময় এটি দিয়ে পালতোলা নৌকা চলাচল করলেও অপ্রিয় হলেও সত্যি যে, বর্তমানে নৌকা তো দূরের কথা কাগজের নৌকাও এখান দিয়ে পারাপার করা কঠিন হবে।
এলাকার বাসিন্দা চাকুরীজীবী মোঃ আমিন বলেন, এলবিসি খাল এই এলাকার পানি নিষ্কাশনের প্রধান ভূমিকা রাখে। তবুও দখলবাজরা বাড়িঘর নির্মাণসহ নানাভাবে খালটি দখল করে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক তাজুল ইসলাম বলেন,রঘুনাথপুরের সিংহভাগ পয়োনিষ্কাশন সুয়ারেজের পানি এলবিসি খালে পতিত হয়। কিন্তু আশির দশকের পর থেকে ধীরে ধীরে এ খালটি দখলদাররা দখল করতে করতে এখন এটিকে নালায় রূপান্তরিত করেছে।
অনেক জায়গাই আমরা এ খালটি খুঁজে পেতেই কষ্ট হচ্ছে। খালটি পুনরুদ্ধারে নানাভাবে বহু আন্দোলন সংগ্রাম হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাই চাঁদপুর রঘুনাথপুরবাসীর প্রাণের দাবি এ খালটি কর্তৃপক্ষ দখলমুক্ত করে পুনরায় এটিকে খালে রূপান্তরিত করবে।
স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা হাজী খলিলুর রহমান,চাঁনমিয়া, কাজল পাটোয়ারীসহ অনেকে বলেন, আমরা ছোটবেলায় এই খালটিতেই সাঁতার শিখেছি, মাছ ধরেছি। এই খালটির বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট পাকা ঘাটের সিঁড়ি ছিলো, সেখান দিয়ে এলাকার লোকজন গোসল করতো। অনেকেই তার পার্শ্ববর্তী ফসলি জমিতে খালটির পানি ব্যবহার করতো। এখন শুধু তা পুরানো স্মৃতি ছাড়া আর কিছুই নয়। এতো সুন্দর একটা জলধারা শুকিয়ে গিয়ে এখন শুধুই কচুরিপানা, লতাপাতা, কাদা আর প্লাস্টিক বোতলকে বুকে ধারণ করে পড়ে আছে।
এই খালটি কেবল একটি পানি চলাচলের পথ নয়, এটি এলাকাবাসীর স্মৃতির অংশ, কৃষি নির্ভরতার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই সময় এসেছে এটিকে বাঁচিয়ে তোলার।
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাখাওয়াত জামিল সৈকত বলেন,সদর উপজেলার রঘুনাথপুর এলাকায় অবস্থিত এলবিসি খালটি উদ্ধারে ইতোমধ্যেই পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে সমন্বয় করে মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন,রঘুনাথপুর এলবিসি খালটি বেশ কিছুদিন যাবৎ সংস্কারের অভাবে কচুরিপানা জমে এবং স্থানীয়দের আবাসস্থল গড়ে উঠায় খালটির অস্তিত্ব কিছুটা হুমকির মুখে পড়েছে। এলবিসি খালটি সংস্কারের আওতায় আনা হয়েছে। আমরা অচিরেই কাজ শুরু করবো।
শহীদ