
ছবি: সংগৃহীত
ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতের কেরালার নার্স নিমিশা প্রিয়ার ফাঁসি আপাতত স্থগিত হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের ঠিক একদিন আগে তার প্রাণ বাঁচাতে স্থানীয় পর্যায়ে শুরু হয় তৎপরতা। হত্যার শিকার ইয়েমেনি ব্যক্তির পরিবার শেষ পর্যন্ত ফাঁসির দিন পিছিয়ে দিতে সম্মত হয়েছে। তবে এর অর্থ এই নয় যে নিমিশা মুক্তি পাচ্ছেন বা ভারতে ফিরে যাচ্ছেন।
বর্তমানে তিনি ইয়েমেনের রাজধানী সানায় বন্দী রয়েছেন। ভারত সরকার ইতিমধ্যে এ মামলায় সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার দাবি জানিয়েছে। সরকার জানিয়েছে, পরিস্থিতি বিবেচনায় ‘ব্লাড মানি’ বা রক্তমূল্য পরিশোধই এখন মৃত্যুদণ্ড থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র পথ হতে পারে।
কী ঘটেছিল?
২০০৮ সালে পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে কেরালার এই নার্স পাড়ি জমান ইয়েমেনে। প্রথমে হাসপাতালগুলোতে চাকরি করলেও পরে নিজের একটি ক্লিনিক চালু করেন। সেসময় স্থানীয় আইন মেনে ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে সঙ্গে নেন তলাল আবদুল মেহেদি নামে এক ব্যক্তিকে। কিন্তু মেহেদি ধীরে ধীরে তাকে হেনস্তা করতে থাকেন। তার টাকা আত্মসাৎ করেন এবং পাসপোর্ট কেড়ে নেন, ফলে দেশ ছাড়ার সুযোগ হারান নিমিশা।
২০১৭ সালে পাসপোর্ট ফিরে পাওয়ার জন্য তিনি মেহেদিকে চেতনানাশক ইনজেকশন দেন। পরিকল্পনা ছিল, অচেতন হওয়ার পর পাসপোর্ট উদ্ধার করে দেশ ছেড়ে পালানোর। কিন্তু ইনজেকশনের ফলে মেহেদির মৃত্যু হয়। পালানোর চেষ্টা করার সময়ই গ্রেপ্তার হন নিমিশা।
এ ঘটনায় তাকে স্থানীয় আদালতে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। ভারতের পক্ষ থেকে একজন ইয়েমেনি আইনজীবী নিয়োগ করা হলেও তার সব আপিল খারিজ হয়ে যায়। ২০২৩ সালে ইয়েমেনের সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে এবং পরে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্টও তা অনুমোদন করেন।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টে ভারতের অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরমণি বলেন, ‘সরকারের পক্ষে যতটা সম্ভব, তা করা হয়েছে। এখন একমাত্র উপায় হলো যদি নিহতের পরিবার ব্লাড মানি গ্রহণে রাজি হয়।’
ইসলামিক আইনে, ‘ব্লাড মানি’ গ্রহণ করলে হত্যাকারীর মৃত্যুদণ্ড রদ করা যায়। তবে এই সিদ্ধান্ত একান্তই নিহতের পরিবারের ওপর নির্ভর করে।
ফাঁসির দিন পিছিয়ে দেওয়া হলেও বিপদ পুরোপুরি কাটেনি। ভারত সরকার নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে আপস রফায় পৌঁছানোর চেষ্টায় রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। স্থানীয় কারা কর্তৃপক্ষ ও প্রসিকিউশনের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেই এ সাময়িক স্বস্তি নিশ্চিত হয়েছে।
এখন নিমিষার প্রাণ বাঁচাতে ‘ব্লাড মানি’র পথেই ভরসা রাখতে হচ্ছে ভারতকে। তবে এটি আদৌ কার্যকর হবে কিনা, তা নির্ভর করছে ইয়েমেনি পরিবারের সিদ্ধান্তের ওপর।
কী এই ‘ব্লাড মানি’ (Blood Money)?
ইসলামিক শরিয়ত আইন অনুসারে, ব্লাড মানি অর্থাৎ ‘দিয়া’ হল এমন এক আর্থিক ক্ষতিপূরণ যা কোনও গুরুতর অপরাধের ক্ষেত্রে, বিশেষত হত্যার (Murder) ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তি নিহতের পরিবারকে দিয়ে থাকে। শরিয়ত অনুযায়ী, হত্যাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয় – একটি ইচ্ছাকৃত (Intentional Murder), অপরটি ভুলবশত (Mistaken Killing)।
এই ব্যবস্থায় অপরাধীর ভাগ্য নির্ধারণ করেন নিহতের পরিবার। আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট কোনও অর্থমূল্য ধার্য নেই। ক্ষতিপূরণের পরিমাণ আলোচনা করে নির্ধারিত হয়, এবং নিহতের পরিবারের সম্মতিতে অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ড রদও হতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব