ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২

এআই-তে তৈরি ’বেবিডল আর্চি’—আসল পরিচয় প্রকাশে তোলপাড়

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:২৪, ১৫ জুলাই ২০২৫

এআই-তে তৈরি ’বেবিডল আর্চি’—আসল পরিচয় প্রকাশে তোলপাড়

ছবি: সংগৃহীত

ইনস্টাগ্রামে ‘বেবিডল আর্চি’ নামে একটি এআই-তৈরি প্রোফাইল ভাইরাল হওয়ার মধ্য দিয়ে ভারতের পর্ন সংস্কৃতির এক অন্ধকার দিক সামনে এসেছে। সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে, এই ইনস্টাগ্রাম তারকা আদতে কোনো বাস্তব নারী নন। বরং, একজন আসামি নারীর ছবি বিকৃত করে তৈরি করা হয়েছে এআই প্রযুক্তিনির্ভর এই কৃত্রিম চরিত্র।

‘বেবিডল আর্চি’ নামের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি মাত্র কয়েক সপ্তাহেই ১৪ লাখের বেশি অনুসারী অর্জন করে এবং ‘ব্লু টিক’ লাভ করে। ব্যবহারকারীরা তার রিল ও ছবি দেখে মুগ্ধ হলেও তদন্তে জানা যায়, এগুলো এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে বানানো হয়েছিল একটি বাস্তব নারীর একটি মাত্র ছবি থেকে।

ডিব্রুগড়ের এসএসপি ইনচার্জ সিজল আগরওয়াল জানান, “যা শুরু হয়েছিল হয়রানি হিসেবে, তা পরবর্তীতে লাভজনক বাণিজ্যে পরিণত হয়।” মামলায় অভিযুক্ত হচ্ছেন প্রতীম বরা, একজন যন্ত্র প্রকৌশলী, যিনি টিনসুকিয়ার বাসিন্দা এবং দিল্লিভিত্তিক কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন।

তিনি এআই টুলস ও বিকৃত ছবি ব্যবহার করে ‘আর্চিতা ফুকন’ নামে একটি ভুয়া পরিচিতি তৈরি করেন। তদন্তে দেখা গেছে, এই অ্যাকাউন্ট থেকে মাত্র ৫ দিনেই তিনি ৩ লাখ এবং মোট ১০ লাখ টাকার মতো আয় করেন। ‘লিংকট্রি’ প্ল্যাটফর্মে ‘Actual Fans’ নামে সাবস্ক্রিপশন সেকশনে আপত্তিকর এআই-কনটেন্ট বিক্রি হতো।

তদন্তে আরও জানা যায়, প্রতীম বরা ভুক্তভোগীর প্রাক্তন পরিচিত ছিলেন এবং প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যেই এই কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে যখন তিনি অর্থ উপার্জন শুরু করেন, তখন সেটিকে ব্যবসায় পরিণত করেন।

পুলিশ বর্তমানে ভুয়া জিমেইল আইডি, এআই সফটওয়্যার, একাধিক সিমকার্ড, ল্যাপটপ, ক্রেডিট কার্ড সহ অনেক আলামত জব্দ করেছে।

অন্যদিকে, ভুক্তভোগী আসামের ডিব্রুগড়ের একজন বিবাহিত নারী। কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই তার ব্যক্তিগত ছবি ইন্টারনেটে ব্যবহার হওয়ার পর তিনি চরম মানসিক যন্ত্রণার শিকার হন।

কেন এই কনটেন্ট ভাইরাল হলো? কারণ হিসেবে দেখা যায়, মার্কিন পর্ন তারকা কেন্ড্রা লাস্ট-এর একটি মন্তব্য এবং ছবি এই ভুয়া প্রোফাইলে দেখা যায়, যা সাধারণ ব্যবহারকারীদের বিভ্রান্ত করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে পর্ন ও যৌনতা নিয়ে কথা বলাটা এখনও ট্যাবু। এই নীরবতা থেকেই কৌতূহল ও বিকৃত মনোভাব তৈরি হয়, যা পর্নগ্রাফির বিস্তারে ভূমিকা রাখছে।

মনোবিজ্ঞানী শ্রেয়া কৌল বলেন, “যত কম আলোচনা হবে, তত বেশি কৌতূহল বাড়বে। ভারতে যৌনতা নিয়ে দ্বন্দ্বপূর্ণ বার্তা পাওয়া যায়—একে অশ্লীল বলা হয়, কিন্তু গোপনে সবাই দেখে।”

তিনি আরও বলেন, “যৌন শিক্ষা না থাকায় কিশোর-কিশোরীরা পর্নকেই শেখার মাধ্যম হিসেবে নিচ্ছে, অথচ এটা সম্পূর্ণ বিকৃত বাস্তবতা।”

এ বিষয়ে এসএসপি আগরওয়ালের সতর্কতা, “আমরা যেসব কনটেন্ট দেখি, তার সত্যতা যাচাই না করে বিশ্বাস করা উচিত নয়। কারণ, অনেক সময় এর পেছনে অপরাধ লুকিয়ে থাকে।”

শহীদ

×