ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

আপনার শিশুর ছবি ডার্ক ওয়েবে ঘুরছে! অভিভাবকরা সতর্ক হোন!

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১৬ জুলাই ২০২৫

আপনার শিশুর ছবি ডার্ক ওয়েবে ঘুরছে! অভিভাবকরা সতর্ক হোন!

ছ‌বি: প্রতীকী

আজকের ডিজিটাল যুগে আমরা অনেক কিছুই খুব সহজে ভাগ করে নিই। সন্তানদের ছোট ছোট মুহূর্ত, হাসি, খেলা কিংবা ঘুমানোর সময়ের ছবি আমরা অনলাইনে পোস্ট করে দিই বন্ধু-পরিজনদের দেখানোর জন্য। কিন্তু অনেকেই জানেন না, এই ছবিগুলো কখনও কখনও আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। কখনো আমরা বুঝতেই পারি না যে এই নিষ্পাপ ছবিগুলো কেউ খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে বা ডার্ক ওয়েবে শেয়ার করে দিচ্ছে।

ডার্ক ওয়েব একটি গোপন ইন্টারনেট জগৎ, যেখানে অনেক অবৈধ কর্মকাণ্ড চলে—ড্রাগ, অস্ত্র ব্যবসা, হ্যাকিং সার্ভিস, এমনকি শিশুদের ছবি কেনাবেচাও হয় সেখানে। আপনি হয়তো ভাবছেন, আপনার শিশুর সাদামাটা একটি ছবিকে কেউ কেনো চুরি করবে? কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সাইবার অপরাধীরা শিশুদের ছবি বিভিন্ন ভুয়া প্রোফাইল তৈরিতে, পর্নোগ্রাফি মেকআপে, বা কৃত্রিম প্রযুক্তি দিয়ে বিকৃত করে ব্যবহার করে থাকে। এমনকি AI দিয়ে এমন ভিডিও তৈরি করে যেখানে শিশুর মুখ বসিয়ে অশ্লীল কিছু বানানো হয়। এটা শুধু ভয়ের না, রীতিমতো ভয়ঙ্কর।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক ইত্যাদি) আমরা প্রায়ই দেখি—কেউ নবজাতকের মুখে দুধ লেগে আছে, কেউ হাঁটতে শিখেছে, কেউ খালি গায়ে রোদ পোহাচ্ছে—এসব ছবি খুবই নির্দোষ মনে হলেও, অপরাধীরা এগুলোকে বিকৃতভাবে দেখে। কেউ কেউ এগুলো ডাউনলোড করে নিয়ে যায়, তারপর ফটোশপ বা অন্যান্য সফটওয়্যারে ছবি বদলে দিয়ে অশ্লীল বা ভয়ঙ্কর কনটেন্ট তৈরি করে। সেগুলো পরে বিক্রি করা হয় ডার্ক ওয়েবের নির্দিষ্ট গ্রুপে বা সাইটে।

অনেক সময় শিশুর নাম, বয়স, স্কুলের নাম, এমনকি ঠিকানাও আমরা ছবির ক্যাপশনে দিয়ে থাকি। এতে করে অপরাধীরা শিশুর সম্পর্কে অনেক তথ্য জেনে ফেলে। তারা যদি চায়, তাহলে এসব তথ্য ব্যবহার করে ফিশিং বা কিডন্যাপের পরিকল্পনাও করতে পারে। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে শিশুটি যখন বড় হবে, তখন তার পুরনো অনলাইন তথ্য গুগল সার্চে ভেসে উঠতে পারে, যা তার ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

অনেকে মনে করেন, শুধুমাত্র নিজের প্রাইভেট অ্যাকাউন্টে ছবি দিলে তেমন কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু ভুলে যান, ফ্রেন্ডলিস্টে থাকা সবাই নিরাপদ নয়। কেউ যদি স্ক্রিনশট নেয় বা শেয়ার করে দেয়, তাহলেই সেটা ছড়িয়ে পড়তে পারে। আবার, ফেসবুক বা গুগলের মতো বড় প্রতিষ্ঠানও মাঝে মাঝে ডেটা ব্রিচের শিকার হয়। তখন ব্যক্তিগত ছবি চলে যেতে পারে অপরাধীদের হাতে।

তাহলে কী করবেন? একেবারেই ছবি পোস্ট করা বন্ধ করে দেবেন? তা নয়। বরং কিছু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যেমন—

  • শিশুর মুখ বা শরীর পুরোপুরি দেখা যায় এমন ছবি না তোলা বা পোস্ট না করা ভালো।

  • ক্যাপশনে ব্যক্তিগত তথ্য (নাম, বয়স, স্কুল, ঠিকানা) না দেওয়া।

  • ফ্রেন্ডলিস্ট রিভিউ করে নিশ্চিত হওয়া, সেখানে কেউ অপরিচিত নেই।

  • ছবি পোস্ট করার সময় অ্যাকাউন্ট সেটিংসে গিয়ে “Only me” বা “Friends only” করে রাখা।

  • গুগলে মাঝে মাঝে নিজের ও শিশুর নাম দিয়ে সার্চ করে দেখা, কোনো ছবি বা তথ্য ফাঁস হয়েছে কিনা।

  • শিশুর ছবি কোথায় কোথায় দেওয়া হয়েছে, তা ট্র্যাক করে রাখার চেষ্টা করা।

  • যদি সন্দেহ হয় ছবি ডার্ক ওয়েবে ব্যবহৃত হচ্ছে, তাহলে দ্রুত সাইবার ক্রাইম ইউনিটে যোগাযোগ করা।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, সচেতন থাকা। আমরা সবাই চাই আমাদের সন্তান নিরাপদে ও আনন্দে বেড়ে উঠুক। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা রাখা ও দায়িত্বশীল ব্যবহার। শিশুর নিরাপত্তা শুধু বাস্তব জগতেই নয়, ভার্চুয়াল জগতেও নিশ্চিত করতে হবে। নয়তো অনিচ্ছাকৃতভাবে শিশুকে এমন এক ভয়ঙ্কর জগতে ঠেলে দিচ্ছি, যার পরিণাম আমরা এখনই কল্পনা করতে পারছি না।

তাই অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান— সন্তানের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করুন বাস্তবে, আর ডিজিটাল জগতে হোন আরও একটু সতর্ক। শিশুর নিরাপত্তা এখন শুধু ঘরের দেয়ালের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটা ডিজিটাল পরিসরেও ছড়িয়ে পড়েছে। আজই সিদ্ধান্ত নিন কোন ছবি শেয়ার করবেন, আর কোনটা শুধু স্মৃতির অ্যালবামে রাখবেন।

এম.কে.

×