ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

ফটিকছড়িতে চার বছরেও শেষ হয়নি বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ১২:২৬, ১৬ জুলাই ২০২৫

ফটিকছড়িতে চার বছরেও শেষ হয়নি বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ

ছবি: দৈনিক জনকণ্ঠ।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে ঠিকাদারের গাফিলতিতে চার বছরেও শেষ হয়নি পশ্চিম হাইদচকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজ। পুরাতন ভবনের জরাজীর্ণ কক্ষে পাঠদান কার্যক্রম চালাতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন শিক্ষকরা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অর্ধেক কাজ শেষ করেই ভবন ফেলে রেখে উধাও হয়ে গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার শতবর্ষীয় বিদ্যালয়টির বারান্দার পিলার ও দেওয়ালের পলেস্তারা খসে রড বের হয়ে পড়েছে। শ্রেণিকক্ষের দেয়ালেও ফাটল। এরই মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে ক্লাস করছে শিশু শিক্ষার্থীরা। এতে বিদ্যালয়ে সন্তানদের পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকেন অভিভাবকেরা। এর ফলে অনেক অভিভাবক ছেলে-মেয়েদের অন্য স্কুল ও মাদ্রাসায় ভর্তি করাচ্ছেন। ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন ভবনের ঠিক ২০০ গজ দূরে নির্মাণাধীন ভবনের কাজ ফেলে রেখে চলে গেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। পড়ে আছে ভবন নির্মাণের নানা যন্ত্রাংশ। মরিচা ধরেছে পড়ে থাকা লোহাগুলোতেও। স্থানীয়দের দাবি, বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়েও সুফল মিলছে না। তারা শীঘ্রই বিদ্যালয়ের ভবনটি সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন চান। এছাড়াও ঝুঁকি এড়াতে দ্রুত নির্মাণাধীন নতুন ভবনে হস্তান্তর হতে চান শিক্ষকরা।

জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে প্রায় ১ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মেসার্স মনির আহমদ কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিদ্যালয়ের দু'তলা ভবনটি নির্মাণের কাজ হাতে পান। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ভবন নির্মাণে অর্ধেক কাজ রেখে চলে যায়। কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে চারবার মেয়াদ বাড়িয়েও ঠিকাদারের গাফলতির কারণে যথাসময়ে কাজ শেষ করতে পারেনি।

বিদ্যালয়ের জিন্নাত আক্তার নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, 'আমার ক্লাস করতে অনেক ভয় লাগে, তাও করি। বৃষ্টির সময় তো ক্লাসও করতে পারি না।' বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) নাহিদা আক্তার শিল্পী বলেন, 'শুরু থেকেই ঠিকাদার বিরতি দিয়ে কাজ করছেন। ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে ভবন নির্মাণকাজে দেরি হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ পুরানো ভবনে পাঠদান করাচ্ছি আমরা। শিক্ষার্থীদের কষ্ট দেখে একাধিকবার নির্মাণকাজ শেষ করার অনুরোধ করেছি কিন্তু তাতেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত ভবন নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য বারবার অনুরোধ করছি। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা অফিসার, উপজেলা প্রকৌশলীসহ ইউএনও মহোদয়কে একাধিকবার জানিয়েছি।'

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আসাদুজ্জামান টিটু বলেন, 'কাজটি চার বছর আগের। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজটি শেষ করা হবে।'
এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুস সালাম বলেন, 'কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য ঠিকাদারকে বারবার তাগাদা দিয়েছি। ঠিকাদারের গাফলতির কারণে তা শেষ করা যায়নি। আমরা ঠিকাদারের কাজটি বাতিল করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সুপারিশ করছি।'

পাইন্দং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সরওয়ার হোসেন ঊর্ধ্বতন বলেন, 'ভবনটির কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য আমি কয়েকবার উপজেলা সমন্বয় সভায় বলেছি। ঠিকাদারকে অনেকবার বলেছি। কয়েকবার মেয়াদ বাড়িয়েও কাজটি ঠিকাদার কেন শেষ করেনি জানি না।'

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, 'বিষয়টি জানা ছিল না। উপজেলা প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে।'

মিরাজ খান

×