ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রের অদ্ভুত পরিকল্পনা: বিমান থেকে কোটি কোটি মাংসকো মাছি ছড়

প্রকাশিত: ১১:৪৭, ১৬ জুলাই ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের অদ্ভুত পরিকল্পনা: বিমান থেকে কোটি কোটি মাংসকো মাছি ছড়

বিশ্বজুড়ে মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করা নিউয়ার্ল্ড স্ক্রুম নামক মাংসকো মাছির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র গ্রহণ করছে এক অভিনব পদ্ধতি। বিমান থেকে কোটি কোটি মাছি ছড়িয়ে দেওয়ার এই পরিকল্পনায় খরচ ধরা হয়েছে ২ কোটি ১০ লাখ ডলার।

এই মাছির বৈজ্ঞানিক নাম কোচলিওমিয়া হোমিনিভোরাস। এর লার্ভা জীবিত উষ্ণরক্তি প্রাণীর ক্ষতস্থানে ডিম পাড়ে এবং জীবিত অবস্থায় সেই প্রাণীর মাংস খেতে শুরু করে। ফলে আক্রান্ত পশু এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে মারা যেতে পারে।

টেক্সাসের এএনএম ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ফিলিপ ক্যাফম্যান বলেন, “এই লার্ভা ঘোড়া, গরু সহ অন্যান্য উষ্ণরক্তী প্রাণীর মাংস খেয়ে থাকে এবং মৃতদেহ নয়, জীবিত প্রাণীর ক্ষতস্থানে ডিম পাড়ে।”

বর্তমানে এই মাছি দেশের সীমানা পেরিয়ে পৌঁছে গেছে ৫০টিরও বেশি দেশে এবং ঘরে ঘরে ছড়িয়ে পড়েছে। পুরুষ মাছির সংস্পর্শে আসার পর স্ত্রী মাছি জীবিত প্রাণীর ক্ষতস্থানে বসে ২০০ থেকে ৩০০টি ডিম পাড়ে। ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে লার্ভা বের হয়, যা দ্রুত ওই প্রাণীর মাংস খেতে শুরু করে এবং পরিণত হয় পূর্ণাঙ্গ মাছিতে।

এই দ্রুত বংশবিস্তার নিউয়ার্ল্ড স্ক্রুমের মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। এর বিরুদ্ধে এখনও কোন কার্যকর টিকা আবিষ্কার হয়নি।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, গবাদি পশু রক্ষা করার জন্য বিমান থেকে মাছি ছড়ানোর এই পদ্ধতিই এখন সবচেয়ে কার্যকর। কারণ দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়া এই মাংসকো মাছির লার্ভা ঠেকানোর অন্য কোন কার্যকর উপায় এখনও আবিষ্কার হয়নি।

গৃহপালিত পশু ছাড়াও হরিণ, পাখি, ইঁদুরের মত বন্যপ্রাণীরাও এই সংক্রমণের শিকার হতে পারে, যা সংক্রমণের শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণকে কঠিন করে তুলেছে।

এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র পুরোনো এবং পরীক্ষিত পদ্ধতি স্টেরাইল ইনসেট টেকনিক ফিরে আসছে। ১৯৬০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো এই পদ্ধতি ব্যবহার করে স্ক্রুম নির্মলে সফল হয়েছিল।

মেক্সিকোর একটি পুরানো মাছি উৎপাদন কেন্দ্র সংস্কারে ইউএসডিএ ২১ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করার পরিকল্পনা করছে, যা খামারিরা যুক্তিযুক্ত বলে মনে করছে।

টেক্সাস ও দক্ষিণ পশ্চিম পশুপালক সমিতির সহসভাপতি স্টিফেন ডাইবেল জানান, “যদি এই মাছির কারণে ১০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে ৩০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ একেবারে যৌক্তিক। দেশীয় উৎপাদন কেন্দ্র থাকলে দ্রুত ও নিখুঁতভাবে মাছি ছড়ানো সম্ভব হবে।”

ইউএসডিএ আরও জানায়, সফল মাছি বিতরণ ও নজরদারীর ফলে ধাপে ধাপে আক্রান্ত বন্দরগুলো আবার চালু করা হচ্ছে।

শেখ ফরিদ 

×