ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

এই সরকারের আমলেই আবু সাঈদ হত্যার বিচার হবে: ড. আসিফ নজরুল

শাকিল আহমেদ, রংপুর

প্রকাশিত: ১৮:১৭, ১৬ জুলাই ২০২৫

এই সরকারের আমলেই আবু সাঈদ হত্যার বিচার হবে: ড. আসিফ নজরুল

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, এই সরকারের আমলেই আবু সাঈদ হত্যার বিচার হবে।বুধবার (১৬ জুলাই) দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা স্মারক মাঠে আয়োজিত শহীদ আবু সাঈদের প্রথম শাহাদতবার্ষিকী ও "জুলাই শহীদ" দিবসের আলোচনা সভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমাকে যেখানেই দেখে, সকলেই বলে, বিচার কবে হবে, বিচার দেখে যেতে চাই। আমাকে দেখে এই কথাগুলো বলতে পারেন, প্রশ্ন করতে পারেন, সমালোচনা করেন এটার জন্যই তো জুলাই গণ-আন্দোলন হয়েছে। এই স্বাধীনতার চর্চা সব সময় বজায় রাখতে হবে। আপনারা যতভাবেই পারেন আমাদেরকে জবাবদিহিতার মধ্যে রাখবেন।

তিনি বলেন, আমি শুধুই একটা কথাই আপনাদেরকে বলি আমরা যখন বিচারকাজ শুরু করি, তখন দেখি কোর্ট নাই, বিচারক নাই, প্রসিকিউটর ছিল না। এগুলো করতে হয়েছে। যাদেরকে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে, তাদের অনেকেই কাজ করছে না। পুনরায় তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করতে হয়েছে। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও আমি আপনাদেরকে পূর্ণ নিশ্চয়তা দিচ্ছি, বিচারকার্য এগিয়ে চলছে, কারো কোনো রকম গাফিলতি নাই।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, আপনাদের শুধু একটা জিনিস মনে করিয়ে দেই শেখ হাসিনা শুধু কথায় কথায় তার বাবার মৃত্যুর কথা বলতো, সেই বাবার হত্যাকাণ্ডের যে বিচার, এটা করতেই ওনার আমলে সাড়ে তিন বছর সময় লেগেছিল। তাহলে আপনারা বুঝতে পারবেন একটি বিচার কার্য স্পষ্টভাবে, সুষ্ঠুভাবে, সারা পৃথিবীর কাছে গ্রহণযোগ্য করতে চাই। আমাদেরকে সমস্ত কিছু চিন্তা করতে হয়। আমরা তো শেখ হাসিনার সময়ের মতো বিচার করতে আসি নাই।

আমরা চেয়েছি, এই বিচার কার্যটা পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে পরীক্ষা করে, সারা পৃথিবীর মাঝে গ্রহণযোগ্য একটি বিচার করতে চাই। এছাড়াও বিচার বিভাগের একটি স্বাধীনতা আছে। আমি তো তাদেরকে বলতে পারি না, এই সময়ের মধ্যেই বিচার করতে হবে। এতে হস্তক্ষেপ করা হয়। কিন্তু আমি যেটুকু খবর জানি, প্রসিকিউশনের সাথে আমার কথা হয়, আমি নিশ্চিত, আমার দৃঢ় বিশ্বাস—আমাদের সরকারের শাসন আমলে আপনারা আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের বিচার দেখে যাবেন।

তিনি বলেন, আবু সাঈদ হচ্ছে জুলাইয়ের বীর শ্রেষ্ঠ। এটা অনেক বড় বীরত্ব। এটা বুঝতে আমাদের অনেক বছর সময় লাগবে। আবু সাঈদের সাথে অন্যান্য শহীদদের কথা বলতে হবে। আবু সাঈদের ঘটনার দিনেই প্রতিবাদ করে আরও পাঁচজন প্রাণ হারিয়েছিলেন। ওয়াসিমের কথা আমার মনে আছে সেও ছাত্র ছিল। ততক্ষণে সকলেই জেনে গেছে এইভাবে দাঁড়ালে মৃত্যু হবে। এটা জেনেও এই দেশের শত শত তরুণ আত্মহুতি দিয়েছে এই দেশের জন্য।

তিনি আরো বলেন, এত বড় আত্মদান যখন হয় তখন আমরা দায়িত্ব নেই। আমাদের কাছে মনে হয়, এত বড় আত্মদানের প্রোপার সম্মান করার সাধ্য কি আমাদের আছে? আসলেই নাই। কিন্তু আমরা চেষ্টা করি। আপনাদের আমাকে দেখলেই খুব বলতে ইচ্ছে করে বিচারের কথা। আপনারা জানেন, আবু সাঈদকে যে দুজন কনস্টেবল গুলি করেছিল সুজন এবং আমির হোসেন, তারা দুজনেই গ্রেফতার হয়েছে। তাদের ফরমাল চার্জ দেওয়ার মাধ্যমে বিচার কাজ শুরু হয়েছে।

অবহেলিত রংপুর প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, রংপুর অবহেলিত হলেও এই অঞ্চলের মানুষগুলো সহজ সরল। সংবিধান অনুযায়ী সারাদেশে সুষম উন্নয়ন সাংবিধানিক অধিকার। সেই লক্ষ্য নিয়ে বর্তমান সরকার কাজ করছে। সেই কারণে নীলফামারীতে একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল ঘিরে সর্বাধুনিক হেলথ সিটি গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার। মানুষ যেন চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর না গিয়ে রংপুর যায়।

জুলাই শহীদ দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শহীদ আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকত আলীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন পরিবেশ ও জলবায়ু উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের ও মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. তানজীমউদ্দীন খান প্রমুখ। এসময় রংপুরের ২২ শহীদ পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে, জুলাই আন্দোলনের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের প্রথম শাহাদতবার্ষিকীতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ আবু সাঈদ তোরণ ও মিউজিয়াম এবং শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন অতিথিরা।

আফরোজা

×