ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৭ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

রণক্ষেত্র গোপালগঞ্জ, নিহত ৩

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:২১, ১৬ জুলাই ২০২৫

রণক্ষেত্র গোপালগঞ্জ, নিহত ৩

এনসিপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে বুধবার দিনভর সংঘর্ষে রণক্ষেত্র গোপালগঞ্জ

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পদযাত্রা ঘিরে হামলা-সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে গোপালগঞ্জ শহর। ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’র অংশ হিসেবে বুধবার দুপুরে গোপালগঞ্জ পৌর পার্কে এনসিপির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার আগে ও পরে সমাবেশস্থলে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। পুলিশের ও ইউএনওর গাড়ি ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে তারা। হামলা চালানো হয় জেলা প্রশাসকের বাসভবন, জেলা কারাগারসহ অন্যান্য স্থাপনায়।

গাছ ফেলে অবরোধ করে রাখা হয় শহরের বিভিন্ন সড়ক ও প্রবেশ পথ। দিনভর চলে পুলিশ, সেনাবাহিনী, এপিবিএন ও র‌্যাবের সঙ্গে হামলাকারীদের সংঘর্ষ। এতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সদস্য ও বেশ কয়েকজন হামলাকারী আহত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে জেলা প্রশাসক। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বুধবার রাত ৮টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৬টা পর্যন্ত কার্ফু জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সমাবেশে হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়ে হামলাকারীরা পার পাবে না বলে বিবৃতি দিয়েছে সরকার।

হামলার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। পুরো শহরজুড়ে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য। বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ হলেও সন্ধ্যার পর থেকে গোপালগঞ্জে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বন্ধ ছিল সকল দোকানপাট। জনমানব শূন্য সড়কে ছিল না যানবাহনও। এক ধরনের আতঙ্ক আর ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করতে দেখা গেছে শহরজুড়ে। ব্যাপক সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনায় অন্তত চারজন নিহত হওয়ার তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা। তবে আমাদের সংবাদদাতা জানিয়েছেন, সংঘর্ষের ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছেন। 
গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জীবিতেশ বিশ্বাসের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা জানায়, সংঘর্ষের ঘটনায় সন্ধ্যা পর্যন্ত চারজনের মরদেহ সদর হাসপাতালে এসেছে। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত অনেকে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে গেলও তাদের সঠিক সংখ্যা এখনো জানা যায়নি। 
পূর্ব ঘোষিত সমাবেশ করতে বুধবার দুপুরে গোপালগঞ্জ শহর যান এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে এর আগে সকাল থেকেই গোপালগঞ্জে তাদের আগমন ঠেকাতে কোটালীপাড়া উপজেলার অবদার হাট ও নাগরা এলাকায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সড়কে অবস্থান নেন। গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান পিয়ালের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে।

পরে বেশ কয়েকটি স্থানে বড় বড় গাছ ফেলে সড়ক বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। এ ছাড়া কোটালীপাড়ায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে হাজারো নেতা-কর্মী সড়কে অবস্থান নেন। এতে গোপালগঞ্জ-পয়সারহাট-কোটালীপাড়া সড়কে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ সড়ক থেকে তাদের সরিয়ে দিতে গেলে সকাল সাড়ে ৯টায় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুর-দুর্গাপুর সড়কের দুর্গাপুর ইউনিয়নের খাটিয়াগড় চরপাড়ায় হামলা ও পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

এ সময় গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার গোপীনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক (আইসি) আহমেদ বিশ্বাস, গাড়ির চালক কাওছার ও পুলিশ সদস্য মিনহাজ আহত হন। তাদের গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে ইউএনওর গাড়িতেও ভাঙচুর চালান তারা।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এম রকিবুল হাসান জানান, ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাওয়ার সময় সদর উপজেলার কংশুর এলাকায় পৌঁছালে তার গাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় গাড়ির চালক আহত হন। 
গোপালগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, আমরা জানি না। এতে পুলিশের তিনজন সদস্য আহত হয়েছেন এবং একটি গাড়ি পুড়ে গেছে। আহত তিন পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
বেলা পৌনে ২টার দিকে শহরের পৌর পার্কে সমাবেশস্থলে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। হামলাকারীরা এ সময় মঞ্চের চেয়ার ভাঙচুর করেন, ব্যানার ছিঁড়ে ফেলেন। হামলা চলাকালে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সমাবেশস্থলে সকাল থেকে জড়ো হতে থাকেন এনসিপির নেতা-কর্মীরা। একপর্যায়ে দুপুরে সমাবেশস্থলে হামলা চালান কয়েক যুবক। এ সময় সমাবেশস্থলের পাশে থাকা বেশ কিছু চেয়ার ছুড়ে ফেলেন তারা। ভাঙচুর করা হয় কয়েকটি চেয়ার। এ হামলার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করে উপস্থিত এনসিপির নেতাকর্মীরা স্লোগান দিতে শুরু করেন। এ সময় তারা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘নিরাপত্তা দিতে না পারলে আমাদের বলুন।

আমরাই আমাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করব।’ একপর্যায়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান ঘটনাস্থলে আসেন। এ সময় এনসিপির নেতা-কর্মীরা এক হয়ে পুলিশসহ ধাওয়া দিলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান। তারা বিভিন্ন পয়েন্টে, অলিগলি ও বাসাবাড়িতে আশ্রয় নেন। ওঁৎ পেতে থাকেন শহর থেকে বের হওয়ার প্রবেশ পথে।    
মঞ্চে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনার পর বেলা ২টার দিকে সমাবেশস্থল গোপালগঞ্জ পৌর পার্কে পৌঁছেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। বেলা সোয়া ২টার দিকে সমাবেশ শুরু হয় এবং নেতারা মঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন।

সমাবেশস্থলে হামলার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। নাহিদ বলেন, যুদ্ধ নয়, শান্তি ও দেশ গড়ার আহ্বান জানাতে গোপালগঞ্জে এসেছি। মুজিববাদ ও সন্ত্রাসীদের হাত থেকে এই জেলাকে মুক্ত করতে হবে।
৩টার পরপরই সমাবেশ শেষ হয়। সমাবেশ শেষ করে ফিরছিলেন এনসিপির নেতারা। এ সময় আবারও হামলার ঘটনা ঘটে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ও অলিগলিতে ওঁৎ পেতে থাকা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতাদের গাড়ি বহরে আতর্কিত হামলা চালায়। ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটনায়। এনসিপির নেতাদের গাড়ি বহরের নিরাপত্তায় থাকা সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও এপিবিএন এর সদস্যরা হামলাকারীদের প্রতিহত করেন।

পরে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে হামলাকারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এক টানা চলতে থাকে সংঘর্ষ। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অলিগলি ও বাসাবাড়ির ছাদে অবস্থান নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তাদের গাড়ি লক্ষ্য করে মুহুর্মুহু ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে বাবার বুলেট ও সাউন্ড ছুড়তে দেখা গেছে। অন্যদিকে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে দিয়ে সামনে এগোতে থাকে এনসিপির নেতাদের গাড়ি বহর।

তবে পথিমধ্যে গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করে রাখে হামলাকারীরা। সেগুলো সরাতে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এক পর্যায়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেন এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা। 
এনসিপি নেতারা বলেন, আমাদের গাড়িবহরের একটি অংশ মাদারীপুরের উদ্দেশে যাচ্ছিল। তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে। গাড়িবহরের একটি অংশ আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের হামলার কারণে যেতে পারেনি। তাই পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছি।
এনসিপি নেতা নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী অভিযোগ করে বলেন, আমরা যখন রওনা দিয়েছি, তখন আওয়ামী লীগের লোকজন এসে আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমরা এখন একটি জায়গায় অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, পরিস্থিতি শান্ত। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন, আর্মি পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। 
এদিকে পুলিশের সঙ্গে তুমুল সংঘর্ষে লিপ্ত হয় হামলাকারীরা। তারা বিভিন্ন স্থাপনা ও পুলিশ ব্যারিকেডের টিনশেডের স্থাপনার আড়ালে থেকে ইট নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ বাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেও তাদের সরাতে পারছিল না। এক পর্যায়ে পুলিশ, এপিবিএন সদস্য একত্রিত হয়ে হামলাকারীদের ধাওয়া দেয়। পিছু হটে হামলাকারীরা।

সেখান থেকে পৌর পার্কে গিয়ে সমাবেশস্থলের প্যান্ডেলে আগুন ধরিয়ে দেয় হামলাকারীরা। প্যান্ডেলের সামনে থাকা চেয়ার সড়কে এনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সড়কে গাছ ফেলে শহর থেকে প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়। সংঘর্ষ চলাকালে বিকেল ৪টার দিকে জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হামলা চালানো হয়। এরপরই গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে হামলার ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন কারারক্ষী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কারাগারের মূল ফটকে ভাঙচুর চালানো হয়, একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় দায়িত্বে থাকা কারারক্ষীরা হামলার শিকার হয়ে আহত হন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছা সেনাবাহিনী ও পুলিশ। সেখানে পৌঁছে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে এ ঘটনায় কোনো আসামি পালানোর খবর পাওয়া যায়নি। 
এমন পরিস্থিতি ৪টার পর থেকে হামলকারীদের কঠোর হস্তে দমন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশের সঙ্গে যোগ হয় সেনাবাহিনী। সব বাহিনী একত্রিত হয়ে বিভিন্ন অলিগলিতে অভিযান পরিচালনা করে। শহর থেকে বের হওয়ার প্রবেশ পথে অবরোধ করে রাখা হামলাকারীদের ধাওয়া দিলে তারা সরে যায়। পুলিশ টিয়ারগ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী কয়েকজন আটক করে গাড়িতে তুলতে দেখা গেছে। 
সংঘর্ষ চলাকালেই বিকেল ৫টার দিকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের পাহারায় গোপালগঞ্জে ছাড়েন  এনসিপি নেতাকর্মীরা। এ তথ্য নিশ্চিত করে এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহিন জানিয়েছেন, কড়া পাহারায় তাদের নিয়ে ১৫ থেকে ১৬টি গাড়ির বহর গোপালগঞ্জ ছাড়ে।
 পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) চার প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সঙ্গে যোগ দিয়েছে চার প্লাটুন বিজিবি। 
উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. কামরুজ্জামান বিকেলে গোপালগঞ্জ জেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২২ ঘণ্টার জন্য কার্ফু জারি করা হয়েছে। সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়।
বার্তায় বলা হয়, বুধবার রাত ৮টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কার্ফু জারি করা হয়েছে।
কার্ফু চলাকালীন সময়ে জনসাধারণের চলাচল সীমিত থাকবে এবং বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হতে পারবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকবে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। তবে সন্ধ্যার পরপর পুরো গোপালগঞ্জে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করতে দেখা গেছে। এলাকার দোকানপাট বন্ধ। রাস্তায় কোনো মানুষজন নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়ি টহল দিচ্ছে। 
এদিকে এনসিপি সমাবেশে হামলার ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকার গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। এক বিবৃতিতে সরকার একে অগ্রহণযোগ্য ও নাগরিক অধিকার লঙ্ঘনের জঘন্য দৃষ্টান্ত বলে আখ্যা দিয়েছে।
সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, নিষিদ্ধঘোষিত আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের সমর্থকরা এই ঘৃণ্য হামলা করেছে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা হবে।
সরকার একই সঙ্গে সেনাবাহিনী ও পুলিশের দ্রুত হস্তক্ষেপের প্রশংসা করেছে এবং হামলার পরও সাহসিকতার সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ চালিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানিয়েছে।
বিবৃতির শেষাংশে অন্তর্বর্তী সরকার স্পষ্টভাবে জানায়, বাংলাদেশে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। দোষীরা পার পাবে না। ন্যায়বিচার অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে। 
সংঘর্ষে বিবিসি বাংলা ৪ জন নিহত হওয়ার তথ্য প্রকাশ করলেও আমাদের গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা জানিয়েছেন, সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন। তারা হলেন- রমজান, দীপ্ত ও সোহেল রানা। এ ছাড়া আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। আহতদের মধ্যে কেউ কেউ চিকিৎসার জন্য খুলনায় গিয়েছেন।

প্যানেল হু

×