
বাংলা একাডেমি মিলনায়তনে আল মাহমুদকে নিবেদিত সেমিনারে বক্তব্য রাখেন দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার
আল মাহমুদ তার কবিতায় প্রচলিত আধুনিকতার ধারণা সবলভাবে ভেঙে দিয়েছেন। নাগরিক মানুষের ভেতরে বসত করা গ্রামবাংলা তার কবিতায় অনন্য ব্যঞ্জনায় উদ্ভাসিত হয়েছে। তাই তাকে ব্যতীত বাংলা কবিতার মানচিত্র অসম্পূর্ণ। এভাবেই বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি আল মাহমুদের কবিতাকীর্তির মূল্যায়ন করলেন বিশিষ্টজনরা।
বুধবার বিকেলে আল মাহমুদকে নিবেদিত এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনায় দেশজ আধুনিকতা ও আল মাহমুদের কবিতা শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি, গবেষক ও সম্পাদক ড. ফজলুল হক তুহিন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন দৈনিক যুগান্তর সম্পাদক কবি আবদুল হাই শিকদার, কবি জাকির আবু জাফর এবং কবি হিজল জোবায়ের। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
ড. ফজলুল হক তুহিন বলেন, পাশ্চাত্য প্রভাবিত তিরিশোত্তর কাব্যাদর্শের মাঝে কবি আল মাহমুদের কাব্যসৃষ্টি নতুন ব্যঞ্জনা নিয়ে আসে। কাব্যযাত্রার সূচনা প্রভাবিত কাঠামোর ভেতর হলেও অচিরেই কবি ঔপনিবেশিক চিন্তা ও কাব্যচর্চার বিপরীতে স্বাধীন দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করেন। ফলে তাঁর নতুন ভাব ও ভাষার সূত্রে বাংলাদেশের সাহিত্যে নতুন প্রাণচাঞ্চল্য ও বৈচিত্র্য সৃজনে সাহসী ভূমিকা রাখে। আঙ্গিকের বড় ধরনের বদল না ঘটলেও বিষয়বচিত্র্যে, ভাষাশৈলী বা শব্দব্যবহারে স্বতন্ত্র স্বাক্ষর দৃশ্যমান।
তার কবিতায় বাংলাদেশের আর্থসামাজিক রূপান্তর, নদীকেন্দ্রিক জনপদ, চরাঞ্চলের মানুষ ও প্রকৃতি, আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, লৌকিক দর্শন ও সংস্কার, স্বাদেশিকতা ও রাজনৈতিক চৈতন্য নতুন মাত্রায় উন্নীত হয়। বিশেষভাবে আধুনিক কবিতার ইমারতে লৌকিক উপাদানের শৈল্পিক কারুকাজ কবিকে আত্মআবিষ্কার, ঐতিহ্য-অন্বেষা ও বি-উপনিবেশায়নের পথে অগ্রসর হতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে দীর্ঘ কাব্যযাত্রায় কবি বাংলাদেশের একজন শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন অনন্য উচ্চতায়।
কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, প্রচলিত আধুনিকতার ধারণা আল মাহমুদ তার কবিতায় সবলভাবে ভেঙে দিয়েছেন। তিনি ছাঁচে ঢালা তোতা পাখির মতো বিদ্যমান ঔপনিবেশিক আধুনিকতার দাসত্ব করেননি। তিনি কালকে ধারণ করা এক কালোত্তীর্ণ কবি। তিনি বলেন, আল মাহমুদ বৈরী সময়ে বিপুল অবহেলার শিকার হলেও ক্রমেই এটা স্পষ্ট যে আল মাহমুদ ব্যতীত বাংলা কবিতার মানচিত্র অপূর্ণাঙ্গ।
কবি জাকির আবু জাফর বলেন, একজন মহৎ কবির ভাষা তার নিজের ভাষা ছাপিয়ে সমগ্র মানবজাতির কাব্যভাষায় রূপ নেয়। আল মাহমুদ তেমনই এক কবি যার কবিতার সুগন্ধিতে আমরা এখনো বিমোহিত। তিনি আমাদের আত্মার কাছাকাছি কথা বলে যাওয়া এক অনিবার্য কবি।
কবি হিজল জোবায়ের বলেন, আল মাহমুদ পাঠকের কানে এক অনন্য কোরাস পৌঁছে দেন তার কবিতার মারফত। নাগরিক মানুষের ভেতরে বসত করা গ্রামবাংলা তার কবিতার অক্ষরে অক্ষরে অনন্য ব্যঞ্জনায় উদ্ভাসিত হয়েছে।
অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, আল মাহমুদের কবিতায় একমাত্রিকভাবে শুধু পল্লিপ্রকৃতিই আসেনি বরং নাগরিক নানা অনুষঙ্গ তার কবিতায় প্রবলভাবেই উপস্থিত। জসীম উদ্দীনের গ্রাম আর আল মাহমুদের গ্রামে তফাৎ আছে। আল মাহমুদ তার স্বতন্ত্র প্রভায় আধুনিকতার নতুন কাব্য-পরিসর তৈরি করেছেন। সুতরাং তাকে কোনো সংকীর্ণ ব্যাখ্যায় আবদ্ধ না রেখে বিশ^কবিতা ও বাংলা কবিতার প্রেক্ষাপটে আবিষ্কার করা জরুরি।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক কাজী রোমানা আহমেদ সোমা।
প্যানেল হু