
বগুড়া সদর উপজেলার ইসলামপুর হরিগাড়ি এলাকায় প্রেম প্রত্যাখ্যানের জেরে দুর্বৃত্তরা এক বাড়িতে ঢুকে জবাই করে হত্যা করেছে ওই কিশোরীর বৃদ্ধা দাদী ও ভাবরকে।
এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন বন্যা নামে ওই কিশোরী। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে এ মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড ঘটে।
নিহতরা হলেন লাইলী বেগম (৮৫) এবং হাবিবা আক্তার রিয়া মনি (২৫)। নিহত লাইলী বেগম হরিগাড়ি এলাকার বাসিন্দা বুলবুলের মা। রিয়া মনি বুলবুলের পুত্রবধূ ও পারভেজের স্ত্রী। আহত বন্যা বুলবুলের মেয়ে এবং পারভেজের ছোট বোন।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার সময় বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য উপস্থিত ছিলেন না। হঠাৎ করে ওই বাড়ি থেকে চিৎকার ও হৈ-চৈয়ের শব্দ শুনে প্রতিবেশীরা ছুটে গিয়ে দুই নারীর রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। বন্যাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ঘটনাস্থলে থাকা প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, দুর্বৃত্তরা রিয়া মনিকে হত্যা করার সময় তার ছয়-সাত মাস বয়সী শিশু কন্যা মায়ের পাশেই ছিল। মায়ের রক্তে শিশুটিও রক্তাক্ত হয়ে পড়ে। এমন হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে এলাকাবাসী স্তব্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বন্যা নামে ওই কিশোরীকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় সৈকত নামে এক যুবক, যিনি এলাকায় মাদকসেবী ও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত।
সদ্য এসএসসি পাস করা বন্যা তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে ক্ষুব্ধ সৈকত পূর্বপরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী দল নিয়ে এ হামলা চালায়। তারা ঘরে ঢুকে প্রথমে লাইলী বেগম ও রিয়া মনিকে জবাই করে হত্যা করে, পরে বন্যার পেটে ছুরিকাঘাত করে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়।
এ ব্যাপারে ইসলামপুর হরিগাড়ি এলাকাবাসীর প্রশ্ন ঘরের ভেতর ঢুকে এভাবে নারীদের জবাই করে হত্যার মতো দুঃসাহস দুর্বৃত্তরা কোথায় পেল? ঘটনার পেছনে কারা ছিল, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ঘটনার পরপরই পুলিশ ও পিবিআই সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
বগুড়া জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোস্তফা মনজুর বলেন, “ঘটনার পেছনে যে বা যারাই জড়িত থাকুক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ইতোমধ্যে তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে। খুব শিগগিরই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে।”
এদিকে ভয়াবহ এই হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শত শত মানুষ ভিড় করেন। তারা দ্রুত হত্যাকারীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
এখনো শোক, আতঙ্ক আর ক্ষোভে কাঁপছে ইসলামপুর হরিগাড়ি। এলাকাবাসীর একটাই চাওয়া হত্যাকারীদের যেন দ্রুত বিচার হয় এবং এই নির্মমতার যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
রাজু