ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

QR কোড স্ক্যান করলেই ব্যাংক একাউন্ট খালি! নতুন স্ক্যামের ফাঁদ থেকে নিরাপদ থাকুন

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০৫:৩৬, ১৬ জুলাই ২০২৫

QR কোড স্ক্যান করলেই ব্যাংক একাউন্ট খালি! নতুন স্ক্যামের ফাঁদ থেকে নিরাপদ থাকুন

ছ‌বি: প্রতীকী

বর্তমানে প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে গেছে প্রতারণার কৌশলও। বিশেষ করে ডিজিটাল লেনদেন যত বাড়ছে, ততই বেড়ে যাচ্ছে সাইবার অপরাধীদের দৌরাত্ম্য। এখন একটি সাধারণ QR কোড স্ক্যান করলেই পুরো ব্যাংক একাউন্ট খালি হয়ে যেতে পারে— এই বিষয়টি শুনতে যতটা অবিশ্বাস্য মনে হয়, বাস্তবে তা ততটাই ভয়ংকর।

QR কোড অর্থাৎ “কুইক রেসপন্স কোড” আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেকখানিই দখল করে নিয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিং, দোকানে পেমেন্ট, রেস্টুরেন্টের মেনু, বিজ্ঞাপন, এমনকি অনলাইন পড়াশোনায়ও QR কোড ব্যবহৃত হচ্ছে। এই কোড স্ক্যান করলেই নির্দিষ্ট একটি ওয়েবসাইট, অ্যাপ বা লিংকে নিয়ে যায় যা আমাদের সুবিধা দেয়। কিন্তু এখন প্রতারক চক্র এই সহজতাকে কাজে লাগিয়ে নতুন এক ফাঁদ তৈরি করেছে।

এই প্রতারণার প্রক্রিয়াটি খুব চতুরভাবে সাজানো। প্রথমে তারা একটি ফাঁদ পেতে QR কোড তৈরি করে। এই কোডটি দেখতে হয়তো একেবারে সাধারণ বা নিরীহ মনে হবে, কিন্তু এর ভেতর লুকানো থাকে একটি ক্ষতিকর লিংক। আপনি যখনই কৌতূহলবশত বা না বুঝেই কোডটি স্ক্যান করেন, তখনই আপনার মোবাইলে একটি ভুয়া ওয়েবসাইট বা অ্যাপ খুলে যায়। এই সাইট বা অ্যাপ দেখতে হুবহু আসল ব্যাংকের মতো কিংবা মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতাদের মতো সাজানো থাকে।

এরপর ব্যবহারকারীর কাছ থেকে ধাপে ধাপে তথ্য চাওয়া হয়। যেমন—ফোন নম্বর, OTP, পিন নম্বর, NID নম্বর, বা এমনকি ফিঙ্গারপ্রিন্ট অনুমতি চাওয়া হয়। যেহেতু ব্যবহারকারী মনে করেন তিনি আসল সাইটে ঢুকেছেন, তাই অনেকেই নির্দ্বিধায় এই তথ্য দিয়ে দেন। অথচ এই তথ্য সরাসরি চলে যায় প্রতারকদের হাতে।

সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো, কিছু QR কোড এমনভাবে তৈরি করা হয় যে সেগুলো স্ক্যান করার পর অটোমেটিকভাবে ব্যবহারকারীর ফোনে একটি অ্যাপ ডাউনলোড হয়ে যায়। অনেক সময় ব্যবহারকারী বুঝতেই পারেন না যে একটি অ্যাপ ইনস্টল হয়ে গেছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারক চক্র ব্যবহারকারীর ফোনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়—তারা মেসেজ পড়তে পারে, OTP দেখতে পারে, এমনকি ব্যাকগ্রাউন্ডে টাকা ট্রান্সফার করে দিতে পারে।

এই স্ক্যামের শিকার হয়ে অনেকেই তাদের ব্যাংক একাউন্টের সব টাকা হারিয়েছেন। কেউ কেউ মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের সব ব্যালেন্স হারিয়েছেন, আবার কেউ কেউ তাদের সেভিংস অ্যাকাউন্টে থাকা কয়েক মাসের জমানো টাকা হারিয়েছেন। ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী, গৃহিণী, এমনকি বয়স্ক মানুষও আছেন যারা ডিজিটাল প্রযুক্তির খুঁটিনাটি বোঝেন না।

এই স্ক্যাম সাধারণত বিভিন্ন জায়গায় QR কোড লাগিয়ে ছড়ানো হয়। যেমন—পোস্টারে, বিজ্ঞাপনে, রাস্তার মোড়ে, দোকানের সামনে, ওয়ালপেপারে, এমনকি ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। অনেক সময় দোকানের আসল QR কোডের উপরই প্রতারকরা নতুন ভুয়া কোড লাগিয়ে দেয়, যাতে কেউ বুঝতে না পারে।

এই প্রতারণা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো সচেতনতা। কোনো অজানা QR কোড স্ক্যান করার আগে ভালোভাবে যাচাই করতে হবে এটি আসল নাকি ভুয়া। QR কোড স্ক্যান করার সময় যদি কোনো সন্দেহজনক ওয়েবসাইট খোলে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। নিজের ফোনে অচেনা অ্যাপ ইনস্টল হলে সেটি সঙ্গে সঙ্গে আনইনস্টল করতে হবে এবং নিরাপত্তা সেটিংসে গিয়ে অ্যাপ পারমিশন চেক করতে হবে।

এছাড়া কখনোই QR কোড স্ক্যান করে ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাংক পিন বা OTP শেয়ার করা উচিত না। মনে রাখা উচিত, কোনো ব্যাংক বা মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান ফোন বা QR কোডের মাধ্যমে এসব তথ্য চায় না।

সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং সাইবার সিকিউরিটি এক্সপার্টরা বারবার সতর্ক করে আসছেন, কিন্তু এখনও অনেক মানুষ প্রতারিত হচ্ছেন কেবলমাত্র অসচেতনতার কারণে।

আমাদের প্রত্যেকের উচিত নিজেদের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের—বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ, গৃহিণী ও তরুণ শিক্ষার্থীদের এই ধরণের স্ক্যামের ব্যাপারে সচেতন করা। প্রযুক্তি যেমন আমাদের জীবন সহজ করেছে, তেমনি এর ভুল ব্যবহার আমাদের সর্বনাশও করতে পারে। সুতরাং একটু সতর্ক থাকলেই আমরা এই ভয়ঙ্কর প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে পারি।

এম.কে.

×